ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লালফিতার দৌরাত্ম্য শেষ হচ্ছে- অনেক দফতরেই ই-ফাইলিং শুরু

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

লালফিতার দৌরাত্ম্য শেষ হচ্ছে- অনেক দফতরেই ই-ফাইলিং শুরু

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে দাফতরিক কাজে ই-ফাইলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সচিবালয় থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত অনেক দফতরে ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন, তথ্য, স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ই-ফাইলিংয়ে চলে এসেছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ই-ফাইল হলে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে যাবে। তখন জনগণ প্রকৃত সেবা পাবে। সেবার জন্য মানুষকে ছুটতে হবে না ফাইলের পেছনে। সেবাই মানুষের পেছনে ছুটবে। জেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকটি অফিসে ই-ফাইলিং সুবিধা জনগণ ভোগ করছেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, দেশের প্রতিটি সরকারী দফতর ও বিভাগ পর্যায়ক্রমে ই-ফাইলিং কার্যক্রমের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দাফতরিক কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনের জন্য ই-ফাইলিং কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এতে জনগণ প্রকৃত সেবা পাবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে দফতর ও বিভাগগুলো একযোগে ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ইতোমধ্যে ৫০টি মন্ত্রণালয়ে ই-ফাইলিংয়ের পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। সব সাইট বাংলায় করা হয়েছে। বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে এ কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে। ই-ফাইলিং ব্যবস্থায় বিদ্যুত, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ, ব্যাকআপ বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারাবে না। ফাইল হারালে তা উদ্ধার করা যাবে। জনগণ ও সরকারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করবে এই ব্যবস্থা। ফাইলের স্তূপ জমবে না। সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমে যাবে। ই-ফাইলিংয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়বে। তারা জবাবদিহিতার মধ্যে চলে আসবে। জবাবদিহিতা বাড়লে দুর্নীতি অনিয়ম অনেকাংশে কমে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা ই-ফাইলিং কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা এ ব্যবস্থাকে জনগণের আশীর্বাদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ই-ফাইলিং ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে সার্বিক অর্থে লাল ফিতায় বাঁধা ফাইলের দিন শেষ হয়ে যাবে। অবসান ঘটবে একটি দীর্ঘ অধ্যায়ের। যা যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। সরকারী অফিসগুলোতে গতি-স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াবে। জনগণকে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং সিস্টমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ব্যবস্থা দেশের সরকারী দফতরগুলোকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসবে। কেউ ইচ্ছে করলেও স্বজনপ্রীতি করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠা হবে ন্যয়বিচার। সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল ফাইল ব্যবস্থাপনার জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের ন্যাশনাল ই-সার্ভিস সিস্টেমের (এনইএসএস) আওতায় ডিজিটাল ফাইল ব্যবস্থাপনার জন্য সকল মন্ত্রণালয়সহ সরকারী অফিসগুলোকে কারিগরি সহায়তা দেয়া হয়। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা কম্পিউটার ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলেন না। এ কারণে এত দিন এই ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৭ সালে ই-ফাইলিংয়ের আওতায় সবাইকে আসতে হবে। কারণ ২০১৬ সাল ছিল পরীক্ষামূলকভাবে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা বছর। এবার বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশে ৬১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় রয়েছে ৩৯টি। ৫০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ই-ফাইলিং পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের সব দফতর ও বিভাগকে ই-ফাইলিংয়ের আওতায় আনতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হযেছে। প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে বেশ আগে থেকেই ই-ফাইলিং কার্যক্রম চালু করা হয়। এখন সচিবালয়ে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ই-ফাইলিং কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০১৭ সালের মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ই-ফাইলিংয়ে চলে আসবে। দেশের মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে ই-ফাইলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মানুষ প্রকৃত সেবা পাবে। অযথা তাদের ফাইলের পেছনে ছুটতে হবে না। ফাইল প্রস্তুত হলে মানুষ জানতে পারবে তার কাজটি হয়েছে। সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ই-ফাইলিং সরকার ও জনগণের দূরত্ব কমিয়ে জবাবদিহিতার সুযোগ বাড়াবে। ই-ফাইলিং সরকারের দক্ষতা শতভাগ বেড়ে যাবে। জনগণ ও সরকারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করবে ই-ফাইলিং। ফাইলের স্তূপ নিয়ে আর ঘোরা লাগবে না। ই-ফাইলিং মানে হচ্ছে স্বচ্ছ কাচের ঘর। যেখানে সরকার, জনগণসহ সব থাকবে। কৃষি ও শিল্প বিপ্লবের পর এখন চলছে তথ্য বিপ্লব। কম্পিউটার মাউসের এক টোকার অনেক ক্ষমতা এখন। তথ্যমন্ত্রী ইনু গত ৩০ জানুয়ারি সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরে ই-ফাইলিং কার্যক্রম উদ্বোধনকালে বলেন, উন্নয়ন ও শান্তির জন্য জঙ্গীদমনে দৃঢ়তার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল পদ্ধতির সফল প্রয়োগ করছে সরকার। তথ্য অধিদফতরে ই-নথি ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন তারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের পর থেকেই বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যহীন সমৃদ্ধি, সুশাসনের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং শান্তির জন্য জঙ্গীদমনের কাজে সরকার আত্মনিয়োগ করেছে। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ই-ফাইলিং পদ্ধতি চালু করার জন্য তথ্য অধিদফতরকে অভিনন্দন জানান তিনি। কাগজমুক্ত নথি ব্যবস্থাপনা সময় বাঁচাবে এবং জনগণ, গণমাধ্যম ও সরকারকে আরও ঘনিষ্ঠ করবে। এতে করে কাজে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোই ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য। আর ই-নথি তারই একটি অংশ। নোটিস, কার্যপত্র, প্রজ্ঞাপন ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদিও এ ব্যবস্থার আওতাভুক্ত। উল্লেখ্য ই-নথি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক কর্মচারীর একটি নিজস্ব ই-তহবিল থাকবে। কম্পিউটার ও মোবাইলে ই-নথি পদ্ধতির মাধ্যমে নথিতে মতামত দিতে ও স্বাক্ষর করতে পারবেন।
×