ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত-বিএনপি জোটের নৃশংস নাশকতা;###;মার্চে দাখিল হচ্ছে চার্জশীট ;###;অভিযুক্ত হতে যাচ্ছেন বেগম জিয়াসহ কয়েক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা

কুমিল্লায় পেট্রোলবোমায় ঘুমন্ত ৮ যাত্রী হত্যার দু’বছর আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কুমিল্লায় পেট্রোলবোমায় ঘুমন্ত ৮ যাত্রী হত্যার দু’বছর আজ

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার হরতাল-অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে যাত্রীবাহী নৈশকোচে পেট্রোলবোমা হামলায় ঘুমন্ত ৮ যাত্রী হত্যার ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষপর্যায়ে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মার্চে আদালতে চার্জশীট দাখিলের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে জোটের প্রধান বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা অভিযুক্ত হচ্ছেন। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশকোচ (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪০৮০) চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারসংলগ্ন জগমোহনপুর নামক স্থানে পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে বাসটির ভেতরে-বাইরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এ সময় বাসে ঘুমিয়ে থাকা যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগে আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে ৭ জন ও হাসপাতালে নেয়ার পর একজনসহ মোট ৮ ঘুমন্ত যাত্রী মারা যায়। নিহতরা হলো- যশোরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার জেলা সদরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা (বাসা- ৩৫, গোলাপ সেন্টার) হাজী রুকনুজ্জামানের ছেলে নুরুজ্জামান পপলু (৫০), তার একমাত্র মেয়ে যশোর পুলিশ লাইনস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী মাইশা নাঈমা তাসনিন (১৫), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আবু তাহের (৩৮) ও আবু ইউসুফ (৪৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে শান্ত (৬), শরীয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট উপজেলার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের ওয়াসিম। নিহতদের দেহ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত নারকীয় ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও চৌদ্দগ্রামের সাবেক এমপি ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, রুহুল কবির রিজভী, সালাহউদ্দিন আহমেদকে হুকুমের আসামি করে ওই দুটি মামলায় ১১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতসহ ১৪২ জনকে আসামি করা হয়। নিহতদের মধ্যে ওই সময় একজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় এবং অপর ৭ জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত না করেই তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে পুলিশ কক্সবাজারের ইউসুফ ও রাশেদুল ইসলামের লাশ ২০১৫ সালের ২১ নবেম্বর, যশোরের নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইশার লাশ ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি, ২ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুরের ওয়াসিমের লাশ এবং ১ মার্চ নরসিংদীর আসমা ও শান্তর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। এ মামলায় পুলিশ বিভিন্ন সময়ে ২৫ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। এদের মধ্যে জাকির, মোতালেব ও আলমগীর নামে তিনজন আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এছাড়া আসামিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে শাহাবুদ্দিন নামে এক শিবির নেতা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় সোহেল নামে এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোঃ আবুল ফয়সল জানান, এ মামলার ভিকটিমদের ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া গেছে, তদন্ত কার্যক্রমও শেষপর্যায়ে এবং আগামী মার্চ মাসে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিলের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৭০-৮০ জনকে অভিযুক্ত করা হতে পারে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন জানান, এ ঘটনাটি রাজনৈতিক কর্মসূচী চলাকালে সংঘটিত হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক কর্মকা- এক বিষয় আর মানুষ হত্যা করা অন্য বিষয়। যারা রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে নাশকতা সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হবে।
×