ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ সব কিছুতেই এই অর্থনীতির চর্চা শুরু;###;সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে রুরাল ই-কমার্স কার্যক্রম ;###;অর্থ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে বর্তমান ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে ’৩০ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দে

প্রযুক্তির ছোঁয়া সর্বত্র ॥ ডিজিটাল থেকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রযুক্তির ছোঁয়া সর্বত্র ॥ ডিজিটাল থেকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি

এম শাহজাহান মধুখালীর সামাদ মিয়া একজন আখ চাষী। ত্রিশ বছর ধরে ফরিদপুর চিনিকলে আখ সরবরাহ করে আসছেন। আগে হাতে লেখা কাগজে আখ সরবরাহের পুর্জি (নোটিস) পেতেন। অনেক সময়ই তার এই পুর্জি হারিয়ে যেত, কখনও দালালচক্র তা বিক্রি করে দিত। ঠকতেন তিনি। তবে দু’শ’ বছরের পুরনো এই পদ্ধতির পরিবর্তে এখন নোটিস (ডিজিটাল পুর্জি) পাওয়া যায় মোবাইল ফোনের খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে। এসএমএসের মাধ্যমে সামাদ মিয়ার মতো অন্য চাষীরাও কবে, কখন এবং কি পরিমাণ আখ মিলগেটে নিয়ে আসবেন তার বার্তা পেয়ে থাকেন। সময়মতো আখ বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন আখ চাষীরা। সারাদেশের ১৫টি চিনিকলে ডিজিটাল পুর্জি সিস্টেম চালু করা হয়েছে। প্রযুক্তির এই ছোঁয়া সর্বত্র। এখন সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে রুরাল ই-কমার্স কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এতে ই-কমার্স পার্টনার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শহরের বাজারের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, বই, সিডি, পোশাক, উপহারসামগ্রী গহনা, জুতাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রান্তিক এলাকার ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যসামগ্রী নিয়ে ই-কমার্স প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে-যার নাম দেয়া হয়েছে ই.জয়িতা.কম। এটি একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম যেখানে গ্রামের ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা পণ্য বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের উদ্ভাবনী সংস্কৃতিকে বেগমান করতে আইডিয়া ব্যাংক নামে একটি উদ্ভাবনী প্লাটফর্ম চালু করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবীজুড়ে চলছে আউটসোসিংয়ের জোয়ার। অনলাইনে দক্ষতা অর্জনে চালু করা হয়েছে ই-লার্নিং প্লাটফর্ম মুক্তপাঠ। আইসিটি বা তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জন্ম নিয়েছে নতুন এক অর্থনীতি, যার নাম দেয়া হয়েছে-জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি। উন্নত বিশ্বের ন্যায় জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বাংলাদেশের সবকিছুতেই জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির চর্চা শুরু হয়েছে। অর্থ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে দেশে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে বিদ্যমান ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দেশ। এদিকে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত তিনটি শিল্প বিপ্লব পাল্টে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ। বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্প বিপ্লবটি হয়েছিল ১৭৮৪ সালে। এরপর ১৮৭০ সালে বিদ্যুত ও ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কার শিল্প বিপ্লবের গতিকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। আবার তিনটি বিপ্লবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ডিজিটাল বিপ্লব। এ নিয়েই এখন সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। এটিকে এখন বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিনির্ভর গ্লোবাল ভিলেজের এই বিপ্লবে বাংলাদেশও অন্যতম সৈনিক। এই বিপ্লবে জয়ী হওয়ার জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির। আশার কথা হলো, দেশের বিরাট তরুণ জনগোষ্ঠীকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির আওতায় আনতে বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকেই জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির সূচনা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রজেক্টে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। কম উপকরণ দিয়ে বেশি উৎপাদনই হলো জ্ঞানের কাজ। বাংলাদেশে জমি কম, কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি। তাই কম জমিতে বেশি উৎপাদানের যে প্রযুক্তি তা রপ্ত করতে হলে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটছে। সরকারী কেনাকাটায় ২৫ ভাগ পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফার হচ্ছে। বেসরকারী খাতেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প চালু আছে সেখানেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আগামীতে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়তে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হবে তাতে অর্থায়ন করবে বিশ্ব্যব্যাংক। জানা গেছে, ই-গবর্নেন্স এবং ই-বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এ খাত দুটিতে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। যার সুফল ইতোমধ্যে আসা শুরু হয়েছে। আইসিটি খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছর বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। বরাদ্দের পরিমাণ সাড়ে তিন গুণ বৃদ্ধি করে চলতি বাজেটে করা হয়েছে ৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশের উন্নয়নমুখী অর্থনীতি, যা প্রতিবছর ৬ শতাংশ করে বেড়ে চলেছে; সেখানে সবার আগে উচ্চারিত হয় চিরচেনা পোশাক খাতের নাম। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদল ঘটছে ধারণার। ধীরে ধীরে ভবিষ্যত উন্নয়নে শ্রমভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর স্থলে ঠাঁই করে নিতে যাচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অর্থনীতির সুফলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ এবং প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ। বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৩৪ শতাংশে এবং শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩০ শতাংশের ওপর। এতে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৩০তম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিশালী দেশ। ওই সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৬ হাজার মার্কিন ডলার এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ জনকণ্ঠকে বলেন, পৃথিবীজুড়ে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চলছে। সারা পৃথিবীর মতো আমরা এক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ভিত্তির ওপর শুরু হওয়া ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে গাণিতিক হারে, যা আগে কখন হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি খাতে এ পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে, যার ফলে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা এমনকি রাষ্ট্র চালানোর প্রক্রিয়াও। আর এই বিপ্লবের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির। তিনি বলেন, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে পরিবেশ সংক্রান্ত ইকোনমিক্স পড়ানো হয়। আর সেখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি আয়ত্ত করাতে পারলে দ্রুত দেশ এগিয়ে যাবে। জানা গেছে, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দেশ গড়তে ইতোমধ্যে দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করে তাতে ৬০ ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ খাতে উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে ১০ হাজারের ওপরে। প্রতিদিন ৪৫ লাখ মানুষ সেবা গ্রহণ করছেন এবং এ খাত থেকে এ পর্যন্ত আয় হয়েছে ১২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১০০ ভাগ নিট এনরোলমেন্ট অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসহ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। জ্ঞানশক্তিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ মানব পুঁজি হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিটি মাস্টার প্লান ২০১২-২০২১ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। মাদ্রাসাসহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পাঠদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (একসেস টু ইনফর্মেশন) প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫ হাজার ৫০০টি মাদ্রাসা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৪ হাজার ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আধুনিক যুগ হচ্ছে যুগবিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া কোন দেশ তার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে পারে না। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতির স্থলে ডিজিটাল টুলস ব্যবহারের বিকল্প নেই। দেশ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারী সকল কর্মকা-ের চালিকাশক্তি হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামের আন্দোলন। এই আন্দোলনে নতুন যুক্ত হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকারের বিনিয়োগ বৃথা যায়নি। নানা ধরনের প্রণোদনা প্রদান করে সফটওয়্যার সৃষ্টিতে দক্ষতা ও সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যে আরও কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষতা অর্জনে ই-লার্নিং প্লাটফর্ম মুক্তপাঠ ॥ ‘শিখুন... যখন যেখানে ইচ্ছে’ সেøাগান সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রাম এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছে। এই প্লাটফর্ম থেকে আগ্রহী যে কেউ যে কোন স্থান থেকে অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন। এই কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন কুইজ, এ্যাসাইনমেন্ট এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং সফলভাবে কোর্সটি সমাপ্ত করে সনদ লাভ করা যাবে। এই সনদের বদৌলতে শিক্ষকগণ বিভিন্ন রকম পেশাগত সুযোগ লাভ করবেন। এমনকি বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও মুক্তপাঠ প্লাটফর্ম থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া প্লটফর্মটিতে সোশ্যাল মিডিয়াকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে মূল প্লাটফর্মের পাশাপাশি মুক্তপাঠের কন্টেন্ট ইউটিউব, গুগল প্লাস এবং ফেসবুক থেকে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ই-লার্নিং ॥ বর্তমান সময়ে ই-লার্নিং খুবই আলোচিত একটি বিষয়। দেশে কিংবা বিদেশে, সবখানেই এর জয়জয়কার। ধরাবাঁধা শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে হওয়ায় দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শিক্ষা ব্যবস্থাটি। প্রতিদিনই উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। মূলত প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি ক্লাস করা কিংবা কোন বিষয়ের ওপর জ্ঞানার্জন করার পদ্ধতিই ই-লার্নিং নামে পরিচিত। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে ই-লার্নিংয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ঘরে বসে সুবিধাজনক সময়ে পছন্দমতো বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব। ই-লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বর্তমানে আমাদের দেশেও রয়েছে একাধিক ই-লার্নিং কার্যক্রম। এগুলোর মধ্যে আছে শিক্ষক ডট কম, জাগো অনলাইন স্কুল, টেন মিনিট স্কুল ইত্যাদি। দ্রুত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠী। মানবসম্পদ উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনার ফলে দেশে শতকরা ৯৮ ভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলমুখী হয়েছে। শতকরা ১০ ভাগ তরুণ কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে বিদ্যমান ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দেশ। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই তরুণ। এ জনশক্তিকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির চর্চা বাড়াতে হবে। ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষের বাংলাদেশে প্রায় ১০ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী আছে, যার সঙ্গে প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে আরও ৫০ হাজার নতুন ব্যবহারকারী। এক্ষেত্রে প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষ মোবাইল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বলতে গেলে, এটা তাদের দৈনন্দিন কর্মকা-ের গুরুত্বপূূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। ই-কমার্স খাতেও ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রতি বছর, যা নিঃসন্দেহে আমাদের আশাবাদী করে। তথ্য প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বারের মতে, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারবাহিকতায় এসেছে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দর্শন। দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে যাদের হাতে ভবিষ্যত বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভর করছে। আশার কথার হচ্ছে, তরুণ জনগোষ্ঠী তথ্যপ্রযুক্তিকে লুফে নিয়েছে। তবে পুরো কাজটির জন্য সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এরপরও যে জাতি নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে সেই জাতি সামনের চার বছরের মাঝেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবেন। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
×