আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০১৭ আগামীকাল ৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সফলতা-ব্যর্থতার দায় ভাগ নিয়েই এই মেলার বর্ণাঢ্য কার্যক্রমের পরিসমাপ্তি হবে। বাণিজ্যমেলা মানেই বিচিত্র পণ্য সম্ভারের বর্ণিল আয়োজন আর সমারোহ। ছোট ছোট স্টলে বিভক্ত হয়ে পণ্য-বিক্রেতারা নিজেদের দোকান সাজিয়ে বসে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এসব স্টলের নিয়ন্ত্রণ ভার এমন জনের উপর অর্পণ করা হয় যারা দর্শক এবং ভোক্তাশ্রেণীর নজর কাড়তে পারদর্শী। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিসহ সারাদেশ থেকে আগত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমেলায় নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর হরেক রকমের আয়োজন উপস্থাপন করেন। স্টলে বেচা-বিক্রির জন্য মাসব্যাপী নিয়মিত কর্মীর উপস্থিতি অপরিহার্য। সমাজের অন্যান্য উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই মেলায় নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। অসংখ্য নারী-বিক্রেতা সাজানো এসব স্টল তথা পুরো মেলায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে। সমস্ত মেলা ঘুরলে নারীদের সক্রিয় কর্মযোগ দর্শকদের আনন্দের মাত্রা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে শাড়ি, থ্রিপিস, শাল, শিশু-কিশোরদের মনোহারী দ্রব্য সামগ্রীতে স্টলগুলোর যে নিপুণ শৈল্পিক আবহ তাতে নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এক ভিন্ন মাত্রার সংযোজন বললে অত্যুক্তি হয় না। মেলার বর্ণিল সমারোহের সঙ্গে তাল মিলিযে নারী বিক্রেতার রুচিসম্মত সাজসজ্জা পুরো পরিবেশকে মুগ্ধতার জায়গায় নিয়ে যায়। এমনই কয়েকজন নারী কর্মীর সঙ্গে আলাপচারিতায় তাদের আন্তরিকতা এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দেশজ পণ্য সামগ্রীর প্রতি তাদের দরদ এবং আগ্রহের প্রকাশ ঘটে। ২০ থেকে ৩০ বছরের কাছাকাছি নারীরাই এই খ-কালীন পেশার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে। প্রথমত মেলার একটি বিশেষ আকর্ষণ থাকে হাজারো দর্শকের সমারোহে পুরো পরিবেশটি জমজমাট হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবানেরও একটা সুযোগ থাকে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে। কেউ কেউ আবার অন্য পেশার সঙ্গেও জড়িত। একটি নির্দিষ্ট মাসোহারা এবং মুনাফার কিছু অংশ এসব বিক্রেতাদের কাজে যোগ দেয়ার আবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। শুধু টাকার জন্যে নয় এতবড় জনাকীর্ণ আয়োজনের কাতারে নিজেকে শামিল করতে পারার আনন্দটাই আলাদা।
মিরপুরের বাসিন্দা পুষ্পা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে প্যাথলজির ওপর ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে পড়াশোনা করেছেন। তিনি বছরের এই বাণিজ্য মেলায় যোগ দিয়ে কিছু আর্থিক সচ্ছলতাও বাড়াতে চান। বাবা গুলশান থানার পুলিশের এসআই। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। বাণিজ্যমেলার এই স্টলের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারায় খুব খুশী পুষ্পা। তার মতে এ ধরনের ব্যবসাভিত্তিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ায় দেশের উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে যেমন পরিচিত হওয়া যায়Ñ একইভাবে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়। কাছ থেকে সাধারণ মানুষের চাহিদা সম্পর্কে ধারণা জান্মে যা রুচিশীল দর্শক চিনতে নানাভাবে সহায়কও হয়। প্রতি বছর আয়োজিত এই বাণিজ্যমেলা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি বিশিষ্ট মাইলফলক। যা দেশের বার্ষিক অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
অপর এক নারী বিক্রেতা আয়েশা আখতার। বাড়ি তার মানিকগঞ্জে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার অপেক্ষায়। যমুনা ফিচার পার্কে মার্কেটিংয়ের পেশায় নিয়োজিত। বাবাও ছোটখাটো ব্যবসায়ী। খ-কালীন এই পেশায় সে এসেছে কিছুটা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য। তার ওপর এত বড় বাণিজ্য উৎসব কাছ থেকে দেখার এক অদম্য ইচ্ছে তো ছিলই। সেও খুব আনন্দিত এমনই এক মহৎ কর্মযজ্ঞে নিজেকে সংযুক্ত করায়। হরেক রকমের দর্শকের অনুভূতি, রুচি এবং পছন্দকে কাছ থেকে অনুধাবন করতে পারা এক পরম বিস্ময়ের ব্যাপার। দর্শকের পছন্দসই দ্রব্য সামগ্রী বাছাই করতে গিয়ে এক অনাবিল আনন্দে তাদের মন ভরে যায়। আর সেই জিনিস যখন তাদের হাতে তুলে দেয়া যায় তখন যে তৃপ্তি তার সঙ্গে কোন কিছুরই তুলনা হয় না।
এভাবে অনেক মেয়ে জানুয়ারি মাসব্যাপী আয়োজিত এই বাণিজ্যমেলায় অংশ নেয়। সমাজের অর্ধাংশ নারী জাতির যদি উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে সমান তালে এগিয়ে যেতে না পারে তাহলে সমৃদ্ধির গতি বিঘিœত হবে, দেশ পিছিয়ে যেতে পারে। ২০১৭ সালে আয়োজিত বাণিজ্য উৎসবে মেয়েদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ সেই সম্ভাবনারই দিক নির্দেশ করে। সারাদেশ থেকে অংশ নেয়া এসব নারী উদ্যোক্তা এবং কর্মীর স্বতঃস্ফূর্ত আয়োজন পুরো মেলায় বিশিষ্ট আকর্ষণ হিসেবে দর্শনার্থীর নজর কাড়ে। রুচিসম্মত সাজসজ্জা, পরিশীলিত আর মার্জিত আচরণে নারী বিক্রেতাদের মনোমুগ্ধকর আপ্যায়ন বাণিজ্যমেলার এক বর্ণাঢ্য সংযোজন বললে অত্যুক্তি হয় না। যা পুরো মেলাকে সফলতার দ্বারে পৌঁছে দেয়।
বাণিজ্যমেলার আর একটি ভিন্নমাত্রার আয়োজন ‘জয়িতা ফাউন্ডেশনের সার্বিক অংশগ্রহণ। ছোট ছোট স্টলে মনোহারী দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে সাজানো বেশ কয়েকটি দোকান চোখে পড়ার মতো। ৬৪টি জেলার দুঃস্থ মহিলা অধিদফতরের রেজিস্ট্রি করা সমিতিকে এসব দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। এই ফাউন্ডেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা ফারাহানার সঙ্গে আলাপ চারিতায় আরও জানা যায়, এই বিশাল বাণিজ্যমেলায় নিজেদের যুক্ত করতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত। দেশজ পণ্য সামগ্রীতে ভরপুর এসব স্টলে ব্যবসায়িক সাফল্য তো আছেই উপরি পাওয়া হিসেবে অর্জিত হয় দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করার মতো গৌরব। সব মিলিয়ে এই বাণিজ্যমেলায় নারীদের সম্পৃক্তিকরণ পুরো আয়োজনটির অন্যতম পর্যায়। অর্থনীতির সামগ্রিক সূচকে নারীদের আন্তরিক কর্মযোগ যে কোন দেশ এগিয়ে যাওয়ার সবচাইতে সফল উদ্যোগ।
শীর্ষ সংবাদ: