ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসার চালাতে ১২ বছরের নাহিদের পায়ে রিক্সার প্যাডেল

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সংসার চালাতে ১২ বছরের নাহিদের পায়ে রিক্সার প্যাডেল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ দুর্ঘটনায় বাবা পঙ্গু, মা কাজ করেন একটি মিলে দিনমজুর হিসেবে। বাবার চিকিৎসা আর সংসারের বোঝা মাথায় চেপেছে ১২ বছর বয়সী নাহিদ হাসান মেহেদীর ওপর। তাই, এই বয়সে রিক্সা চালিয়ে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হয়েছে সে। নাহিদ যশোর শহরতলী ঝুমঝুমপুর বাবলাতলা পশ্চিমপাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে। তার দাদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সিপাহি আজিজুল হক। তারা ওই এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। নাহিদ কেবল রিক্সা চালায় না; লেখাপড়াও করে। সে বালিয়াডাঙ্গা এবতেদায়ী মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। নাহিদ জানায়, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সে ক্লাস করে। এরপর বাড়ি থেকে রিক্সাটি নিয়ে বের হয়। এই বয়সে কেন রিক্সা চালায়? জানতে চাইলে সে জানায়, পরিবারের অন্য সদস্যদের আয়ে কোন মতে সংসার চলে। তাছাড়া বাবা পঙ্গু, তার চিকিৎসার খরচও তো রয়েছে। নাহিদের দাদাবাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খলসি গ্রামে। তারা তিন ভাই। বড় ভাই ফয়সাল- ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করে। মেঝ ভাই সাজ্জাদ, মাঝেমধ্যে সেও রিক্সা চালায়। নাহিদ সবার ছোট। নাহিদের মায়ের নাম জেসমিন বেগম। তিনি বিসিক শিল্প এলাকায় একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে দিন হাজিরা হিসেবে কাজ করেন। কাজ হলে ১৩০ টাকা মজুরি পান। নাহিদের বাবা আব্দুল খালেক জানান, ৭-৮ বছর আগে ঘোড়ারগাড়ি থেকে পড়ে আহত হন তিনি। এরপর আবার নসিমন থেকে পড়ে মেরুদ-ে আঘাত পান। সে কারণে তার হাত-পা মাঝে মধ্যে অবশ হয়ে যায়। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি স্থানীয় সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ইঞ্জিনচালিত একটি রিক্সা কিনেছেন। এ খাতে প্রতিদিন তাকে দুই শ’ টাকা হারে কিস্তি শোধ করতে হয়। শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভাল না হওয়ায় নিয়মিত রিক্সা চালাতে পারেন না। তখন ছোট ছেলে নাহিদ রিক্সা চালায়। আব্দুল খালেক জানান, চিকিৎসার জন্য এ যাবত প্রায় আট লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখনও প্রতিমাসে ওষুধের একটা বড় খরচ বহন করতে হয়। ঘর ভাড়া দিতে হয় ১২শ’ টাকা। বাজারে তার দেনা প্রায় দেড় লাখ টাকা। গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রি করেছেন, বাকি জমি বন্ধক রেখে চিকিৎসা করেছেন। প্রতিবেশী রুস্তম আলী বলেন, ছেলেটা এই এতটুকু বয়সে রিক্সা চালায়, দেখতে খারাপও লাগে। বালিয়াডাঙ্গা এবতেদায়ী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আসমা খাতুন বলেন, ছেলেটি এবার ভর্তি হয়েছে। মাদ্রাসা থেকে বিনামূল্যের বই দেয়া হয়েছে। ছাত্র ভালই, তাছাড়া শান্তশিষ্টও। শুনেছি ক্লাস শেষে মাঝে মধ্যে সে রিক্সাও চালায়।
×