ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ আইনের পরিবর্তন চায় বিডা

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ আইনের পরিবর্তন চায় বিডা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ আইনের পরিবর্তন চায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ-বিডা)। সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকে আইনগুলো সংশোধনের প্রস্তাব দেয় কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দল কাস্টমস আইন, কোম্পানি আইন, চুক্তি আইন, আরবিট্রেশন এ্যাক্ট ও ইনসলভেন্সি এ্যাক্ট সংশোধনের প্রস্তাব দেয়। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু আইন আছে বিনিয়োগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯ সালে হয়েছিল, এখন নতুন করে কাস্টমস এ্যাক্ট হবে। সে এ্যাক্টে কী কী থাকলে বিনিয়োগবান্ধব হবে সেটাই নির্বাহী চেয়ারম্যান আমাকে জানালেন। তারপর আছে কোম্পানিজ এ্যাক্ট। কোম্পানিজ এ্যাক্টের কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের কথা ওনারা বলেছেন। সেগুলো আমরা দেখব। কন্ট্রাক্ট এ্যাক্ট একটু ধোয়া-মাজা করতে হবে। কন্ট্রাক্ট এ্যাক্টটা অত্যন্ত সুন্দর, কিন্তু যুগোপযোগী করার জন্য এটাকে একটু ধোয়া-মাজা করতে হবে।’ প্রতিনিধি দল আরবিট্রেশন এ্যাক্ট সংশোধনেরও প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘ওই আইনের ক্ষেত্রে ওনারা বিশেষভাবে যেটা বলেছেন তা হলো প্রথম আরবিট্রেশন করার জন্য একটা সময় বেঁধে দিতে হবে। আরবিট্রেশন করার যে ব্যয় তা নামিয়ে আনার জন্য আরবিট্রেটরদের ফি আইনে বেঁধে দিতে হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘এছাড়া তারা ইনসলভেন্সি এ্যাক্টের কথা বলেছেন। অর্থঋণ আদালতে যে মামলা রয়েছে সেগুলো আমরা ওনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওনারা আরেকটি জিনিস বলেছেন, ভূমি নিবন্ধনের ব্যাপারে। সেখানে আমরা খুব তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ আইনের পরিবর্তন কিছু এখনই হবে, কিছু পর্যায়ক্রমে হবে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘সেক্ষেত্রে আমরা ওনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখব। আমরা এ ঐকমত্যে পৌঁছেছি যে, আরবিট্রেশন এ্যাক্ট, কাস্টমস ও কোম্পানিজ এ্যাক্টের ব্যাপারে তারা যে খসড়া তৈরি করেছেন, যে সাজেশন আমাদের দিতে চান, সেটা এ সপ্তাহের মধ্যে আমাদের হাতে দিয়ে দেবেন।’ বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে নতুন কোন আইনের দরকার হবে না। চার থেকে পাঁচটি আইনের সংশোধন ও পরিবর্ধন করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী। কবে নাগাদ আইনগুলো পাস হতে পারে- এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘হয়ত সংসদের এ সেশনে হবে না। এ সেশনের পর বাজেট সেশনের আগে যে ছোট সেশন হতে পারে, সে সেশন শুধু আইন পাসের জন্যই হবে। সেক্ষেত্রে আমরা সে ক্যালেন্ডার সেশন ধারার চেষ্টা করব।’ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি হাই ইনকাম কান্ট্রিতে রূপান্তর করতে হবে। এজন্য দেশীয় ও বৈদেশিক প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন। ইনভেস্টমেন্ট আসার জন্য বাংলাদেশে যে ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট দরকার, এর বেশকিছু বিষয় আছে আইন সংক্রান্ত। ওই বিষয়গুলো নিয়েই আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইতিবাচক এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সামনের দিকে যাব, একটি কার্যপরিকল্পনা নিয়েছি। এ কর্মপরিকল্পনা অনুসারে আমরা এ রিফর্মগুলো বাস্তবায়ন করব, যাতে বাংলাদেশে বিজনেস ক্লাইমেট বিশ্বমানের হয়। দেশের অভ্যন্তর থেকে বা বাইরে থেকে যারা বিনিয়োগ করতে চান তারা যাতে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কোন দুশ্চিন্তা ছাড়াই বিনিয়োগ করতে পারেন।’ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন্ বাধাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে- জানতে চাইলে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। যেমন কত সময়ের মধ্যে ইলেক্ট্রিসিটি পাওয়া যায়, কত সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণের অনুমতি পান, কত তাড়াতাড়ি ভূমি নিবন্ধন করতে পারেন, ঋণ কত তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়, ক্রেডিট সংক্রান্ত তথ্য পর্যাপ্ত কি-না, বিরোধ নিষ্পত্তি কেমন হয়, চুক্তি কত সফলভাবে এনফোর্স করতে পারে। এসব বিষয়ই বিজনেস ক্লাইমেটের অংশ।’ উল্লেখ্য, বেসরকারীকরণ কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই) একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে।
×