ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম বাধা দূর হলো ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিদায়ের

পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট বিল পাস

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট বিল পাস

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে সরকারের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিল বা ব্রেক্সিট বিল বুধবার রাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সম্মতি পেয়েছে। বিলটি পাস হওয়ার পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ইতিহাস রচিত হলো। এটি এক গুরুত্ববহ রাত। খবর বিবিসি ও টেলিগ্রাফ অনলাইনের। লেবার পার্টির নেতৃত্বের সমর্থনে বিলটির পক্ষে ভোট পড়েছে ৪শ’ ৯৪টি এবং বিপক্ষে পড়েছে ১শ’ ১৪টি। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) ৫০ এমপি ও ৭ লিবারেল ডেমোক্র্যাট বিলের বিরোধিতা করেন। লেবার পার্টির ৪৭ এমপি বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী কেনেথ ক্লার্ক একমাত্র টোরি এমপি যিনি ভোট দিয়েছেন বিপক্ষে। আইনে পরিণত হওয়ার আগে বিলটিকে হাউস অব কমন্স ও হাউস অব লর্ডসে আরও যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বিল আইনে পরিণত হলে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে লিসবন চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আলোচনা শুরু করতে পারবেন। তিনি ৩১ মার্চের মধ্যে ওই প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। গত বছর জুনে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক গণভোটে যুক্তরাজ্যের জনগণ ২৮ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার পক্ষে রায় দেয়। গণভোটে অপ্রত্যাশিত ওই ফলের পর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে যান ডেভিড ক্যামেরন, দায়িত্ব নেন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা টেরেসা মে। ব্রেক্সিট বিতর্কে নতুন জটিলতা এড়াতে সে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি এড়িয়ে সরকারপ্রধানের নির্বাহী ক্ষমতাবলে ৫০ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেও সুপ্রীমকোর্টে এক রিট আবেদনের কারণে তার সেই চেষ্টা আটকে যায়। গত ২৪ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের সুপ্রীমকোর্টের রায়ে বলা হয়, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরু করার আগে সরকারকে অবশ্যই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। এরপর গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরকারের দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (নোটিফিকেশন অব উইথড্রয়াল) বিলের ওপর বিতর্ক শুরু হয়। দুই দিন বিতর্কের পর বুধবার ভোট দেন এমপিরা। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বৃহস্পতিবার ইইউ সমর্থিত টোরি এমপিদের উদ্বেগের জবাবে সরকারের ব্রেক্সিট পরিকল্পনা শুরু করার জন্য বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন বলে কথা রয়েছে। তারপরও, কনজারভেটিভদের মধ্যে আরও বিভেদের সৃষ্টি হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবোর্ন অর্থনীতির ওপর অগ্রাধিকার না দিয়ে ব্রেক্সিটের ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য মেকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ইইউয়ের বাইরে ব্রিটেনের ভবিষ্যত নিয়ে লড়াইয়ে যোগ দেবেন তিনি। বুধবারের ভোটের তাৎপর্য হচ্ছে ব্রেক্সিট আইনের প্রথম বাধা অতিক্রম করা হলো এবং মে তার মার্চের চূড়ান্ত সীমার মধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করবেন। পার্লামেন্টে ভোটের আগে ১৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট বিতর্ক হয়েছে। প্রায় ১শ’ এমপি ব্রেক্সিট বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। এসএনপি আনীত সংশোধনী প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। ভোটাভুটির পর নেতৃত্ব স্থানীয় ব্রেক্সিট সমর্থক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন কমন্স সভার ফলকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা হয়ত ইইউ চুক্তি থেকে সরে যেতে যাচ্ছি, ইউরোপ থেকে নয়। যুক্তরাজ্য এক নতুন পরিচয় নিয়ে আবির্ভূত হবে এবং ইউরোপের জন্য রাখবে এক বিস্ময়কর ইতিবাচক ভূমিকা এবং সব সময় আমরা তাই করেছি, সে ইচ্ছাও পোষণ করেছি সব সময়। অসবোর্ন বলেন, পার্লামেন্টে আগামীতে অভিবাসন সাহায্য ও কৃষি নীতি নিয়ে চুলচেরা আলোচনা হবে। আগামী দিনগুলোর ঐ লড়াইয়ে আমি থাকব। তিনি ইইউতে ব্রিটেনের থাকার জন্য যুক্তি দেখিয়েছেন আবেগ সহকারে। যারা অনুচ্ছেদ ৫০-এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন ভোটকে সামনে রেখে মে তাদের বিরুদ্ধে জনগণের আস্থা অবমাননার অভিযোগ এনেছেন। বিতর্কের সময় লেবার এমপি নেইল কয়েল সরকারকে বিদ্রুপ করায় তার সমালোচনা করা হয়। তিনি ব্রিটেনকে ইইউতে রাখতে চেয়েছেন। সাবেক লেবার নেতা এডওয়ার্ড মিলিব্যান্ড বলেন, তিনি অনুচ্ছেদ ৫০-এর বিরুদ্ধে নন, যদিও তিনি গণভোট চাননি। লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা টিম ফ্যারন বলেন, টোরিরা ও লেবার পার্টি ব্রেক্সিটের প্রতি সম্পূর্ণভাবে সমর্থন ব্যক্ত করে আজ ভবিষ্যত প্রজন্মকে হতাশ করে দিয়েছে। লেবার নেতৃত্ব আজ রাতে সাদা পতাকা উড়িয়েছে। তারা বিরোধী পক্ষ নয়।
×