ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ বাগদাদ শরীফের সঙ্গে বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক সম্বন্ধ

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ বাগদাদ শরীফের সঙ্গে বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক সম্বন্ধ

ইরাকের রাজধানী বাগদাদ মুসলিম জাহানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র শহর। যে কারণে এই পবিত্রনগরী বাগদাদ শরীফ নামে সমধিক পরিচিত। বাংলাদেশের মানুষ একে বোগদাদ শরীফও বলে। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বাদগাদ শরীফের যেমন তমদ্দুনিক সম্পর্ক সুনিবিড় তেমনি রুহানী তাওয়াল্লুক বা আধ্যাত্মিক নিসবত আরও সুনিবিড়। কাদিরিয়া তরিকার নিসবত অনুযায়ী এই অঞ্চলে যিকর আযকার, তালীম-তালকীন, মোরাকাবা মুশাহাদা নিত্যদিন বিভিন্ন খান্কা শরীফে অনুষ্ঠিত হয়, সেই কাদিরিয়া তরিকার ইমাম গওসুল আজম আবু মুহম্মদ মুহিউদ্দিন সাইয়েদ আবদুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি ‘আলায়হির রওজা শরীফ রয়েছে এই পবিত্র নগরী বাগদাদে। তিনি আমাদের দেশে বড়পীর নামেও পরিচিত। তাঁর নামে বাংলাদেশের মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ এমনকি বাজারও গড়ে উঠেছে। যতদূর জানা যায়, আমাদের দেশে কাদিরিয়া তরিকা ও সুহরাওয়ারদীয়া তরিকা বয়ে নিয়ে আসেন হযরত শাহ্ জালাল রহমাতুল্লাহি আলায়হি। বাংলাদেশে হযরত আবদুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হির ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর ১১ রবিউসসানী অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালিত হয় ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম। এখানে সুহরাওয়ারদীয়া তরিকার তেমন প্রসার না ঘটলেও কাদিরিয়া তরিকার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এই তরিকার অন্যতম সবক ফজরের সালাতের পরে যে দরুদ শরীফ তরিকতের বিশেষ নিয়মে অনুচ্চস্বরে এই তরিকা অনুশীলনকারীগণ পাঠ করেন তাতে হযরত আবদুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হির নাম সংযুক্ত রয়েছে, আর তা হচ্ছে : আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিন সাইয়েদিল মুরসালীন ওয়া‘আলা আরশাদে আওলাদিহিশ্ শায়খে হযরত আবদুল কাদির জিলানী, ইমামতি, তরীকতে ওয়া আওলিয়াইল কামিলীন। তাঁর রচিত বেশ কয়েকখানি গ্রন্থও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যেগুলো অতি পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে পাঠক মহলে সমাদৃত, আর সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ফতহুর রব্বানী, ফতহুল গায়েব, গুনিয়াতুত্ তালেবীন প্রভৃতি। তাঁর রচিত কাসিদায়ে গওসিয়া এদেশের তাসাওউক চর্চাকারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তিনি তাঁর সেই বিখ্যাত কাসিদার এক স্থানে বলেছেন : ওয়া ওল্লানী ‘আলাল আকতাবী জাম’আন/ফা হুকমী নাফিযুন/ফী কুল্লি হালী/আনাল জীলিযু মুহিযুদ্দীন ইস্মী/ওয়া আ’লামী আলা রাসিল জিবালী-তাবত্ কর্তৃত্ব আমার সব কুতবের উপর/আমার হুকুম বর্তায় সব অবস্থার উপর/আমি জিলানী মুহিউদ্দীন পুত নাম যে আমার/সব পর্বত শীর্ষে উড্ডীন পতাকা আমার। বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য যে সমস্ত সুফীয়ায়ে কেরাম এসেছেন তাঁদের অনেকেই বাগদাদী ছিলেন। বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে ফুরফুরা শরীফের পীর মুজাদ্দিদে যামান মওলানা শাহ্ সুফী আবু বকর সিদ্দিকী রহমাতুল্লাহি আলায়হি (১৮৫২-১৯৩৯ খ্রি.) এক অনন্য অবদান রাখেন। তাঁর খলীফাগণের মধ্যে অনেকেই তাঁরই নির্দেশে কাদিরিয়া তরিকা অনুযায়ী তালীম তালকীন দিতেন, এখনও তাঁদের কায়েম মুকাম বা গদিনসিনগণ এই তরিকার নিসবত অনুযায়ী ছবকাদি প্রদান করেন। ফুরফুরা শরীফের মুজাদ্দিদে যামান পীর সাহেব কেবলার ৩০তম উর্ধতম পুরুষ ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)। এই বংশধারার পরম্পরা পরবর্তীতে বাগদাদ শরীফে বাস করতে থাকেন এবং এই বংশের অধস্তন ১৬ পুরুষ হযরত মনসুর বাগদাদী ৭৪১ হিজরীতে ভারত সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজীর সালতানাতকালে হুগলী জেলার বালিয়া বাসন্তী এলাকায় ইসলাম প্রচারের জন্য আগমন করেন। এখানকার রাজার সঙ্গে এক ভীষণ যুদ্ধের সম্মুখীন হন তিনি, যুদ্ধে রাজা পরাজিত ও নিহত হন। এলাকা আনন্দমুখর হয়ে ওঠে, যে কারণে এলাকার নাম হয়ে যায় ‘ফুরফুরা।’ চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করতে সুদূর বাগদাদ শরীফ থেকে আগমন করেন হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনি ফরিদপুর অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে অবদান রাখেন। ঢাকার মিরপুরে তাঁর দরগাহ্ রয়েছে। মূলত ইরাক হচ্ছে বহু নবী রসুলের স্মৃতিধন্য। এই ইরাকের প্রাচীন নাম মেসোপটেমিয়া। দজলা ফোরাত নদীবিধৌত মেসোপটেমিয়াকে বলা হতো ফারটাইল ক্রিসেন্টÑ উর্বর হেলার অঞ্চল। প্রাচীন সভ্যতার সূতিকাগার এই অঞ্চলেই হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালাম, হযরত ইউনুস আলায়হিস সালামসহ বহু নবীর আবির্ভাব ঘটে। আল্লাহদ্রোহী নমরুদকে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু মশক বাহিনী পাঠিয়ে সসৈন্যে ধ্বংস করে দিয়েছেন এখানেই। এখানকার দজলা নদীতে হযরত ইউনুস আলায়হিস্ সালাম মাছের পেটে ছিলেন ৪০ দিন। তিনি তখন যে দোয়া পাঠ করে মাছের পেট থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন তা হচ্ছে : লাইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জালিমীন। ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত কারবালায় রয়েছে হযরত ইমাম হুসাইন আলায়হিস্ সালাম, ছোট শিশু হযরত আলী আসগার ইবনে ইমাম হুসাইন (রা.), হযরত আব্বাস ইবনে আলী (রা.), হযরত কাসেম ইবনে হাসান আলায়হিস্ সালামসহ প্রায় ৭২ জন শহীদানের মাশ্হাদ ও রওজা মুবারক, নাজাফে রয়েছে মাশ্হাদে আসদুল্লাহিল গালিব হযরত আলী রাদিআল্লাহ তা’আলা আন্হু, বহু সাহাবায়ে কেরাম, সুফীয়ায়ে কেরাম। আইয়াম্মায়ে কেরাম, ফুকাহা, মুজতাহিদীনের স্মৃতিবিজড়িত এই ইরাক এবং ইরাকের রাজধানী বাগদাদ শরীফ। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম এবং তাদের মধ্যে ৯৯.৯ ভাগ মানুষ যে মযহাবভুক্ত সেই হানাফী মযহাবের ইমাম হযরত আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলায়হির স্মৃতি ধারণ করে আছে এই বাগদাদ শরীফ। তিনি ইমামে আজম নামে খ্যাত। ইরাক শব্দের অর্থ সমুন্নত খাড়া পাহাড় আর বাগদাদ শব্দের অর্থ আল্লাহ দান। ত্রিভুজ আকৃতির বর্তমান ইরাকের উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে ইরান, দক্ষিণে পারস্য উপসাগর, কুয়েত, সৌদি আরব এবং পশ্চিমে জর্দান ও সিরিয়া অবস্থিত। তুর্কী উপদ্বীপ যেখানটিতে এসে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ মহাদেশের মিলন ঘটিয়েছে ঠিক তাঁরই দক্ষিণ পাশে এই দেশটির অবস্থান। হাজার হাজার বছর আগে দক্ষিণ আরব থেকে সেমেটিক জাতি দজলা ফোরাত অববাহিকা অঞ্চলে এসে মানব সভ্যতার ইতিহাসে নতুন সকালের সূচনা করে। উদিত হয় সভ্যতার নবারুন। উর্বর হিলাল অঞ্চল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার উত্তর অংশের নাম ছিল আসিরিয়া ও দক্ষিণ অংশের নাম ছিল বেবিলনিয়া। বেবিলনিয়াকে আবার দুই অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। যার উত্তর অঞ্চলের নাম করা হয় আক্কাদ ও দক্ষিণাঞ্চলের নাম করা হয় সুমের। ১৯৪৮ খ্রিস্টপূর্ব ১৯৪৮ অব্দে প্রতাপশালী সম্রাট হাম্বুরাবী সমগ্র অঞ্চলকে একটি রাজ্যে পরিণত করে রাজধানী স্থাপন করেন বেবিলনে। এই সাম্রাজ্য প্রায় দেড় হাজার বছর টিকে ছিল। খুনের বদলা খুন, দাঁতের বদলা দাঁত, হাতের বদলা হাত ইত্যাদি দ-বিধি হাম্বুরাবী কর্তৃক প্রবর্তিত। এর পরও শত শত বছর ধরে এই বিশাল সাম্রাজ্য নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে টিকে থাকে। এখানে যখন ইসলাম এলো তখন এই অঞ্চল পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ। সর্বপ্রথম এখানকার বাদু গোত্রের নেতা মুসাল্লা ইবনে হাবরিয়া আশ শায়বানী তাঁর গোত্রসমেত ইসলাম গ্রহণ করেন। অতি দ্রুত এখানে ইসলামের প্রসার ঘটতে থাকে। ৬৩৫ খ্রিস্টাব্দের নবেম্বর মাসে ফোরাত নদীর তীরবর্তী কাদেসিয়ায় তিন দিন ধরে এক ভীষণ যুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সমগ্র অঞ্চলে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। খলিফা হযরত উমর (রা.)-এর নির্দেশে বসরা ও কুফাতে সেনানিবাস ও মসজিদ স্থাপিত হয়। তখন খিলাফতের রাজধানী মদীনা মনওয়ারায়। ৪র্থ খলীফা হযরত আলী করমাল্লাহ ওয়াজহাহু রাজধানী নিয়ে আসেন কুফায়। হযরত মুয়াবিয়া (রা.) সেই রাজধানী স্থানান্তরিত করেন দামেস্কে। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি উমাইয়া খিলাফতের পতন ঘটিয়ে আবুল আব্বাস আস্ সাফ্ফা আব্বাসী খিলাফতের পত্তন করেন। রাজধানী স্থাপিত হয় ফুরাত নদীর তীরবর্তী আনবারাতে। তারপর খলীফা আবু জাফর আল মনসুর মাদায়েন থেকে পনেরো মাইল উত্তরে দজলা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত বাগদাদে খিলাফতের রাজধানী স্থাপন করেন। কালক্রমে এই বাগদাদ নগরী তদানীন্তন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত হয়। জ্ঞান বিজ্ঞান, শিক্ষা সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। এটা রূপকথার নগরীতে পরিণত হয়। বায়তুল হিক্মা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইরাকের বসরা অঞ্চলে রয়েছে হযরত তালহা, হযরত যুবায়ের (রাদি.)-এর মাজার শরীফ, হযরত হুযায়ফা (রাদি.)-এর স্মৃতিও রয়েছে, হাসান বসরী, রাবেয়া বসরী (রহ.)-এর স্মৃতিবিজরিত বসরা। বসরায় গড়ে উঠেছে যুবায়ের নগরী, যুবায়ের বিমানবন্দর। বাগদাদ শরীফের জগদ্বিখ্যাত খলীফা হারুনুর রশীদ খ্রীস্টান রাজা নাইসিফোরাসের ঔদ্ধত্যপূর্ণ চিঠির জবাবে চিঠির অপর পৃষ্ঠায় উত্তর দিয়েছিলেন এই বলে : আমীরুল মুমিনীন খলীফা হারুনুর রশীদ থেকে এই পত্র প্রেরিত হচ্ছে রোমান কুত্তা নাইসিফোরাস বরাবর। ওহে পুতুল পূজারী মায়ের সন্তান, তুমি তোমার পত্রের উত্তর কর্ণে শুনবে না, অচিরেই নিজ চোখে দেখতে পারবে। এই চিঠি পাঠিয়েই খলীফা হারুনুর রশীদ নাইসিফোরাসকে শায়েস্তা করার জন্য তুরস্কের রাজধানী কনসট্যানটিনোপলের দিকে বিশাল বাহিনীসহ এগিয়ে যান এবং নাইসিফোরাসকে পরাস্ত করেন। বাগদাদ নগরী শৌর্য-বীর্যের ও শান্তির নগরী রূপে বিশ্বখ্যাত ছিল। ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি হালাকু খাঁ এ নগরী আক্রমণ করে এর ধ্বংস সাধন করলেও, খিলাফতের রাজধানী এখান থেকে উসমানী খিলাফতের রাজধানী ইস্তানবুলে চলে গেলেও বিলায়েতের রাজধানী অর্থাৎ ওলীত্বের রাজধানী হিসেবে বাগদাদ শরীফ আজ পর্যন্ত বিলায়েতের জগতে সমহিমায় সমুন্নত রয়েছে। বাগদাদ শরীফ এখন স্বাধীন-স্বার্বভৌম ইরাক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। এখানে ইতিহাসের যে কত অধ্যায়ের নিদর্শন রয়েছে তা বলে শেষ করা যায় না। এখানে দজলা নদীর তীরে হযরত মা’রুফ র্কাখীর (ওফাত ৮১৫ খৃ.) মাযার রয়েছে। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহ.)-এর মাযারও রয়েছে বাগদাদ শরীফে। ক্রসেড বিজয়ী গাজী সালাউদ্দীনের জন্মস্থান এই ইরাকেরই তিরকীতে। সাদ্দাম হোসেনেরও জন্ম হয় এই তিরকীতেই। বাগদাদ শরীফের সঙ্গে বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এতই নিবিড় যে, এখানে বাগদাদ শরীফের উচ্চারণ প্রতিক্ষণে উচ্চারিত হয়ে আসছে। এখানে উল্লেখ্য যে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম যে মুসলিম দেশটি স্বীকৃতি দেয় সেটি ইরাক। যুগে যুগে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে বাগদাদ শরীফ থেকে বহু আল্লাহুর ওলীর আগমন ঘটে। রাজশাহী শহরের দরগাহ্পাড়ায় হযরত শাহ্ মখদুম রুপোশের মাজার রয়েছে। জানা যায়, তিনি গওসুল আজম হযরত আবদুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি ‘আলায়হির বংশধর। তিনি রাজশাহীর অত্যাচারী দেওরাজাকে এক ভীষণ যুদ্ধে পরাজিত করে এখানে ইসলামের সুদৃঢ় বুনিয়াদ স্থাপন করেন। বৃহত্তর রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকজন বাগদাদী পীর নামে পরিচিত সুফীদের মাজার রয়েছে, যেমন হযরত মুয়াজ্জিমুদৌলা দানিশ মান্দ, হামিদ দানিশ মান্দ, শাহ্ দৌলা প্রমুখ। বাঘা অঞ্চলে বাগদাদী দরবেশ নামে খ্যাত বেশ কয়েকজন ইসলাম প্রচারকের মাজার রয়েছে। মূলত সমগ্র বাংলাদেশেরই বিভিন্ন অঞ্চলে বাগদাদ শরীফ থেকে আসা বহু সুফী দরবেশের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার মায়হাটি কাজী মহল্লার সৈয়দ পরিবারের উর্ধতন এক পুরুষ মুঘল আমলে ইসলাম প্রচারের জন্য এই অঞ্চলে তশরীফ আনেন। এই পরিবারের সৈয়দ আবদুস সোবহান, সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রমুখের মাজার রয়েছে। বাংলাদেশের শিশুরা কুরআন মজীদ তিলাওয়াতের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে বোগদাদী কায়দা অনুশীলনের মাধ্যমে। বাগদাদ শরীফের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের যেমন রয়েছে রূহানী সম্বন্ধ তেমনি রয়েছে রক্তীয় সম্পর্ক ও নাড়ির টান। তাই তো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে : শাতিল আরব! শাতিল আরব! পুত যুগে যুগে তোমার তীর/শহীদের লোহু, দিলীরের খুন ঢেলেছে যেখানে আরব বীর/জুঝেছে এখানে তুর্ক সেনানী/য়ুনানী মিসরী আরবী কেনানী/লুটেছে, এখানে মুক্ত আজাদ, বেদুঈনদের চাঙ্গা-শির/নাঙ্গা শির-শমশের হাতে আঁসু-আঁখে হেথা মূর্তি দেখেছি বীর-নারীর/শাতিল-আরব! শাতিল-আরব!! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।/দুশমন লোহু ঈর্ষার নীল/তব তরঙ্গে করে ঝিলমিল/বাঁকে বাঁকে রোষে মোচড় খেয়েছে পিয়ে নীল খুন পি-ারীর। /জিন্দা বীর... লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা) সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×