ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আস্থার সঙ্কট কাটল

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আস্থার সঙ্কট কাটল

আস্থার দিগন্ত প্রসারিত হলে সম্পর্কের গভীরতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। বিশ্বাসবোধ হতে থাকে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর। পারস্পরিক স্বার্থগুলো এক কাতারে এনে দাঁড়ানোর পথও হয় প্রশস্ত। দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবেই মেনে নিয়ে প্রতিকারের উপায় যেমন করতে হয় উদ্ভাবন, তেমনি সম্পর্ককে কার্যকর মাত্রায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার আশ্বাসগুলো বাস্তবায়নও হয়ে পড়ে জরুরী। আস্থার সঙ্কট কেটে গেছে বলা যায় এই বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও কর্মীদের। নৃশংসতা, নাশকতা, নির্মমতার যে বিষাক্ত প্রবাহ দেখেছে বাংলাদেশ এবং এখানে কর্মরত বিদেশীরা, তারা আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের কালো থাবা গ্রাস করতে চেয়েছিল এই বাংলাকে। বহু প্রাণ তারা হরণও করেছে। কিন্তু জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটানোর ক্ষেত্রগুলোকে ক্রমশ নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত হেফাজতের ঘাড়ে চেপে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কালোছায়া যেভাবে আলোময় দেশকে গ্রাস করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল, তাতে আতঙ্ক, সংশয়, উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ বেড়েছে দেশবাসীসহ বসবাসরত বিদেশীদের মধ্যে। সরকার উৎখাত এবং যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট বোমা মেরে দেড় শতাধিক জীবন্ত মানুষকে দগ্ধীভূত করে হত্যা করেছে, তা নজিরবিহীন। এই হত্যাযজ্ঞের পথ ধরেই জঙ্গীরা গুপ্ত হত্যায় লিপ্ত হয়। গত বছরের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান ট্রাজেডির ঘটনা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়। জাইকার মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত কয়েক জাপানী কর্মকর্তা নিহত হন। এছাড়া ইতালি, ভারত এবং বাংলাদেশের নাগরিককেও হত্যা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাকে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্বের প্রমাণ বলে প্রচার চালায়; কিন্তু বাস্তবে তা ছিল না। এরা দেশী জঙ্গী। অনেকে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার প্রশিক্ষিত। শান্তিপ্রিয় দেশ জাপান এই ঘটনায় হতভম্ব হলেও দুই দেশের পক্ষ থেকে উক্ত সন্ত্রাসী হামলার পরও দুই দেশের সম্পর্ক অটুট থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সন্ত্রাস প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। জাপানী নাগরিক নিহত হওয়ার পর বিভিন্ন জাপানী কোম্পানি ও প্রকৌশলী এ দেশে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত আপত্তি জানায়। দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমেও প্রকল্প থেকে জাপানী সংস্থা ও কোম্পানিরা মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সংবাদ প্রকাশ পায়। বাংলাদেশ সরকার তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর জাপানীদের আগ্রহ বাড়ে। তারা প্রকল্পগুলো নিয়ে আবার উদ্যোগী হয়। এমন একটি প্রকল্প মাতারবাড়ি বিদ্যুকেন্দ্র, যা বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার দেয়া প্রকল্প। এটি এগিয়ে নেয়ার কাজ কিছুটা ব্যাহত হয় হলি আর্টিজান ঘটনার পর। থমকে যায় প্রকল্প। অবশেষে জাপান ফিরে এসেছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে। কেন্দ্রটি নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস পর দরপত্র জমা দিয়েছে জাপানের দুটি কোম্পানি। গত বছরের ২৬ জুলাই ছিল কেন্দ্র্রটি নির্মাণে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল বা আরএফপি জমা দেয়ার শেষ দিন। কিন্তু এই ঘটনার কারণে তারা আগ্রহী না হলেও সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। গত বছরের ২৪ নবেম্বর সময়সীমা আবার নির্ধারণ করা হয়। জাপানের একটি কোম্পানি ওই সময় আরএফপি জমা দিতে আগ্রহী হলেও অপর একটি কোম্পানি আরও সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানায়। পরস্পর তাতে সম্মতি দেয়। অবশেষে জঙ্গী নির্মূলে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় এবং শান্তি ও স্বস্তিকর পরিবেশ-পরিস্থিতি ফিরে আসায় জাপান আগ্রহী হয়েছে। কেটে গেছে অনিশ্চয়তা। জাপান-বাংলাদেশের সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের বন্ধন আরও মজবুত হয়েছে। বিদেশীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাদেরও ফিরে এসেছে আস্থা। বাংলাদেশ তার অগ্রগতির পথ সুগম রাখবেই।
×