ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য বিল-২০১৭ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতক্রমে পাস হয়েছে মঙ্গলবার। এর ফলে দেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উপাদানসমূহের টেকসই ব্যবহার, জীবসম্পদ ও তদসংশ্লিষ্ট জ্ঞান এবং ব্যবহার হতে প্রাপ্য সুফলের সুষ্ঠু ও ন্যায্য হিস্যা বণ্টনসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে রাষ্ট্রের অধিকার এবং স্বত্ব সুনিশ্চিত হলো। জীবসম্পদ বলতে বৃক্ষ ও প্রাণিসম্পদ উভয়ই বোঝানো হয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে জীবসম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতঃপর রাষ্ট্রের অনুমতি ও অনুমোদন ব্যতিরেকে জীবসম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঔষধি বৃক্ষ ও প্রাণিদেহ থেকে আহরিত ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য তৈরি এবং বাজারজাতকরণ প্রায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে এসব করা হলে প্রয়োজনে বিচারিক আদালতে মামলা এবং জরিমানাসহ জেলদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রামসার কনভেনশন অনুযায়ী জলাভূমি ঘোষিত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বৈশিষ্ট্যের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করা হলে তা পরিগণিত হবে অপরাধ হিসেবে। বাংলাদেশ একটি জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ দেশ। মূলত জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সম্পদের অংশীদার হিসেবেই পাস করা হয়েছে এই বিলটি। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল বিধায় শীতপ্রধান দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বৃক্ষ প্রজাতি এবং প্রাণিকুলের সবিশেষ বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। তবে এও সত্য যে, ছোট একটি দেশে অত্যধিক জনসংখ্যার চাপে ইতোমধ্যে অনেক গাছপালা ও লতাগুল্ম এবং প্রাণিবৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে অথবা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। গাছপালা ও জীবজন্তু সংরক্ষণের জন্য যে কোন দেশে বনাঞ্চল এবং জলাশয় অপরিহার্য। তবে দুঃখজনক হলো, দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ খুব কম। দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবন এবং পার্বত্য অঞ্চলের কিয়দংশ ব্যতিরেকে বনাঞ্চলের দর্শন মেলে না বললেই চলে। তাও দেশের মোট জমি ও জনসংখ্যার তুলনায় বড়জোর দশ ভাগ। অথচ প্রয়োজন অন্তত পঁচিশ শতাংশ, প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য। একদিকে দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য বনাঞ্চলসহ প্রাণিকুলের ওপর নির্ভরশীলতা, অন্যদিকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ উপায়ে গাছপালা এবং বন্যপ্রাণী নিধন বিপদের সমূহ ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। আদিকাল থেকেই কবিরাজি, হেকিমি ও ইউনানী চিকিৎসা পদ্ধতি স্বীকৃত ও প্রচলিত থাকায় এর কাঁচামাল হিসেবে অনিবার্য চাপ পড়েছে দুর্লভ প্রজাতির লতাগুল্ম, গাছগাছালি ও প্রাণিকুলের ওপর। ইতোমধ্যে অনেক দুর্লভ প্রাণী, এমনকি শকুন পর্যন্ত বিপন্ন প্রায়। নদ-নদীসহ জলাশয়গুলোর কথাও কহতব্য নয়। অপরিকল্পিত মৎস্য সম্পদ আহরণের ফলে জলজ প্রাণিকুল ও গুল্মলতার অস্তিত্বও বিপন্ন। এর পাশাপাশি অশনিসঙ্কেত হিসেবে দেখা দিয়েছে নদ-নদী ও জলাশয় দখলসহ ভরাট হয়ে যাওয়া। রামসার ঘোষণা অনুযায়ী এসব অনতিবিলম্বে পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে না পারলে বৃক্ষ ও প্রাণীসম্পদ বৈচিত্র্য এখনও পর্যন্ত যেটুকু আছে তাও রক্ষা করা যাবে না। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আইন এক্ষেত্রে প্রভূত সহায়ক হবে বলেই প্রতাশ্যা।
×