ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুনছে দু’ভাই শিপন, সোলায়মান

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুনছে দু’ভাই শিপন, সোলায়মান

মোঃ হোসাইন আলী কাজী, আমতলী, বরগুনা থেকে ॥ ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুনছে দুরারোগ্য মরণব্যাধিতে আক্রান্ত আমতলীর শিপন ও সোলায়মান (১৫)। চিকিৎসকরাও এ রোগ নির্ণয় করতে পারছেন না। এর পূর্ব লক্ষণ হাত-পা শুকিয়ে ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে অচল হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। তাদের বাবা ফকু তালুকদার। ইতোপূর্বে তার দু’পুত্র এ রোগে মারা গেছে। পঙ্গুত্ব নিয়ে ঘরে পড়ে থাকা দু’পুত্রের এ দুরবস্থায় দিশেহারা হতদরিদ্র বাবা-মা। জানা গেছে, উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কালিবাড়ী গ্রামের ফকু তালুকদার ২৫ বছর পূর্বে খুশি বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর বেশ কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। দু’বছর যেতে না যেতেই তাদের কোল জুড়ে আসে ছেলে সন্তান। আদর করে নাম রাখে স্বপন তালুকদার। পরপর তাদের ঘরে জন্ম নেয় স্বপন, রিপন, শিপন ও সোলায়মান নামের চার পুত্র। স্বপনের বয়স যখন আট বছর তখন তার শরীরের পরিবর্তন দেখা দেয়। তার দু’পায়ের হাঁটু মোটা হয়ে আস্তে আস্তে হাত পা শুকিয়ে রগ খিচুনি দিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে সে। ফকু তার সাধ্যমতো ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু কোন চিকিৎসাই কাজে আসেনি। ডাক্তাররা এ লক্ষণ দেখে রোগ শনাক্ত করতে পারছেন না। কোন চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন বাবা-মায়ের রক্তের গ্রুপ একই হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। আবার কোন চিকিৎসক পোলিও রোগে আক্রান্তের কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে কি রোগ হয়েছে তা তারা শনাক্ত করতে পারেননি। পঙ্গু অবস্থায় ৯ বছর বিছানায় থাকার পর ২০০৮ সালে স্বপন মারা যায়। এরপর ছোট ভাই রিপন ও শিপনের আট বছর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একই লক্ষণ দেখা দেয়। সন্তানদের বাঁচানর জন্য বহু চিকিৎসক ও ওঝার কাছে ধরনা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। ৮ বছর ধরে বিছানায় পড়ে থাকে শিপন ও রিপন। গত বছর নবেম্বর মাসে একই অবস্থায় রিপন মারা যায়। বর্তমানে শিপন বিছানায় পড়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। শিপনের হাত-পা চিকন হয়ে শুকিয়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বাঁকা হয়ে গেছে। বিছানায় শুয়েই খাওয়া দাওয়া করতে হয়। কোন চলাফেরা করতে পারে না। বাবা-মা হাল ছেড়ে দিয়ে ছেলের মৃত্যু দেখার অপেক্ষায় আছে। শেষ ও ছোট সন্তান সোলায়মান তালুকদার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। তারও শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইদানীং। তার পায়ের হাঁটু মোটা হয়ে যাচ্ছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। এক এক করে এ দুরারোগ্য রোগে দু’ছেলের মৃত্যু এবং দু’ছেলের এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় বাবা মা দিশেহারা। কান্না যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। মা খুশি বেগম বলেন, ‘এ্যাহোন আর চোহে পানি নাই। চোহের সামনে দুইডা পোলা মইর‌্যা গ্যাছে, একটা বিছানাই শুইয়্যা রইছে, হেইডাও কোন্ সময় যায়, আর ছোড পোলাডার পাও মোডা অইয়্যা শুকাইয়া যাইতে আছে। মোরে আল্লায় এম্যান বিপাদ দেছে কিছু হরতে পারি না। কানতে কানতে চোহে আর পানি নাই। টাহা নাই পয়সা নাই পোলা দুইডা ঈ দিয়া চিহিতসা হরমু। মুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মোর পোলা দুইডার চিহিতসার আবেদন হরি। সে বিলাপ করে কেঁদে বলে ও আল্লা তুই মোরে লইয়্যা যা, মোর আর বাঁচার স্বাদ নাই’। বাবা ফকু তালুকদার অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে। যা আয় হয় তা দিয়ে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে। ছেলে হারানোর বেদনায় তিনি এখন মুহ্যমান। আগের মতো কাজ করতে পারছে না। মানুষ এখন আর কাজে নিতে চায় না। ফকু তালুকদার বলেন, আর পারছি না। দু’সন্তান হারিয়েছি। একটি বিছানায় আছে, যে কোন সময় মারা যেতে পারে। আশায় ছিলাম ছোট ছেলেটাকে যদি আল্লায় ভাল করে তার আর হইলো কই। ছোট ছেলের পায়ের হাঁটু মোটা হয়ে গেছে। আগের মতো হাঁটতে পারে না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও দেশের হৃদয়বান লোকদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাই।
×