ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা আজ

ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট তিনদিনের সফরে ঢাকায়

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট তিনদিনের সফরে ঢাকায়

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তিন দিনের সফরে বুধবার ঢাকায় এসেছেন। প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল হামিদের আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে এসেছেন তিনি। মাহমুদ আব্বাস বুধবার বিকেলে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে উষ্ণ সংবর্ধনা জানানো হয়। বিমান থেকে নামার পরপরই দুটি শিশু ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানানো হয় তাকে। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল দেয় গার্ড অব অনার। গার্ড পরিদর্শন শেষে ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে লাইন অব প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ। বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আইজিপি একেএম শহীদুল হক, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া এবং তিন বাহিনীর প্রধান। মাহমুদ আব্বাসের সফর উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি বিমানবন্দর এলাকাও বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। টার্মিনালের উপরে এবং সামনে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের বিপুলসংখ্যক পতাকা রয়েছে সেই সাজে। ভিভিআইপি টার্মিনালের দু’পাশে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দুটি বড় ছবি স্থাপন করা হয়েছে এবং টার্মিনালের উপরে বড় করে লেখা ‘স্বাগতম হে মহামান্য অতিথি’। এর সঙ্গে স্বাগত বক্তব্যের ইংরেজী অনুবাদও রয়েছে। এয়ারপোর্ট থেকে মোটর শোভাযাত্রা করে লা মেরিডিয়ান হোটেলে নেয়া হয় ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে, সফরকালে সেখানেই থাকবেন তিনি। ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বুধবার রাতে হোটেল লা মেরিডিয়ানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেন তারা। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রিয়াদ আল মালকী, প্রধান বিচারপতি মাহমুদ আলহাব্বাশ, রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র নাবিল আবুরুদাইনাহ, কূটনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মাজদি খালদিসহ উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা ঢাকায় এসেছেন। ঢাকা সফরকালে মাহমুদ আব্বাস প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গভবনে একটি বৈঠক করবেন। এছাড়া গণভবনে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এসব বৈঠকে মাহমুদ আব্বাস দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ সময়ে দু’দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ কমিশন গঠন সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌজন্য বৈঠকে মিলিত হয়ে বাংলাদেশ-ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। ঢাকা সফরের শুরুতেই আজ বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সাভারের জাতীয় স্মৃতি সৌধে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর ধানম-ির ৩২ নম্ব^র সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন তিনি। এছাড়াও মাহমুদ আব্বাস তার সম্মানে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ কর্তৃক আয়োজিত একটি নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। ঢাকা ছাড়ার আগে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করবেন মাহমুদ আব্বাস। তিন দিনের সরকারী সফর শেষে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আগামী শুক্রবার বেলা আড়াইটায় ঢাকা ত্যাগ করবেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এমন একটা সময়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরাইলকে জোরালো সমর্থন দিচ্ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনও অবশ্য বরাবরের মতো ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছিল। এর আগের ওবামা সরকার শেষ সময়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অবৈধ বসতি স্থাপনের নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো দেয়নি। তবে ইসরাইলের তেল আবিবে থাকা মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নেয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অঙ্গীকারের বিষয়ে আলোচনা মাত্র শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার সব সময়ই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও তার জনগণের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। ইসরাইলের আগ্রাসনের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের পক্ষেও কথা বলে আসছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি দিন দিন বিশ্বের সমর্থন বাড়ায় সে দেশের মানুষের জীবনেও পরিবর্তন আসছে। ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পতাকা তোলা হয়। তবে ঢাকা সফরের সময় ফিলিস্তিনের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন মাহমুদ আব্বাস। এছাড়া তিনি মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের অনেক শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকে। মাহমুদ আব্বাসের ঢাকা সফরে ফিলিস্তিনের আরও বেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে যেন পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকে, সে বিষয়েও আলোচনা হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঁচিশ বছর পূর্তিতে ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ঢাকায় এসেছিলেন। তবে ইয়াসির আরাফাত একাধিকবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করেছেন। বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সফরের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপ্রধানরা ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি জাপান যাওয়ার সময় ঢাকায় বিমান যাত্রা বিরতি করেছিলেন মাহমুদ আব্বাস। সে সময় তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর আগে ২০১০ সালে জাপান ও কোরিয়া সফরের সময়ও ঢাকায় যাত্রা বিরতি করেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
×