ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী অতিথিরা অভিভূত

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিদেশী অতিথিরা অভিভূত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এবারও উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েক বিদেশী অতিথি। বিভিন্ন ভাষার কবি- সাহিত্যিকরা বাংলাদেশ ও মাসব্যাপী বইমেলা নিয়ে নিজেদের ভাললাগার কথা জানান। বিপুল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তাদের বাংলা বলার চেষ্টা প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সুধীজনরা দারুণ উপভোগ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এবার বক্তব্য রাখেন চীনের প্রখ্যাত গবেষক ও রবীন্দ্র অনুবাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর লুস মারিয়া লোপেজ, ভারতের চিন্ময় গুহ। চীনের প্রখ্যাত গবেষক ও রবীন্দ্র অনুবাদক ডং ইউ চেন বাংলায় বক্তৃতা করেন। চীনা উচ্চারণে তার বাংলা বলা উপভোগ করেন শ্রোতারা। এই অনুবাদক বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন রচনা চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। সাত বছর আগে তার সম্পূর্ণ রচনা অনুবাদের সিদ্ধান্ত নেই আমরা। আমি এর প্রধান অনুবাদক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ৪৩ খ-ে এটি প্রকাশিত হয়। খুব বড় বড় বই। এর ফলে চীন দেশের পাঠক ভালভাবে বিশ্বকবিকে জানার সুযোগ পেয়েছেন। বাঙালী জীবন ও চিন্তাধারা সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারছেন তারা। এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পরে বাংলা একাডেমিকে রবীন্দ্র রচনাবলী উপহার দেন তিনি। অস্ট্রিয়ার কবি মেনফ্রেড কোবো বাংলায় শুরু করেন। বলেন, অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। পরে ইংরেজীতে তিনি বলেন, বহু বহু বছর আগে আমি ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামের বিখ্যাত কনসার্টটি শুনেছিলাম। এর পর বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ হয়েছে। বইমেলার মাসব্যাপী আয়োজন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, অস্ট্রিয়ায় ৩ থেকে চারদিনের মেলা হয়। এখানে এক মাসের আয়োজন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুয়ের্তোরিকোর কবি লুস মারিয়া লোপেজ বলেন, শিক্ষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতিই পারে সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে, নারী-পুরুষ সমতার সমাজ নিশ্চিত করতে যে সমাজের দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্থাপন করেছে। জার্মানির কবি টোবিয়াস বুরঘার্ট বলেন, অনুবাদ ও সংলাপের মধ্যদিয়ে পৃথিবীর জাতিতে জাতিতে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হতে পারে। অমর একুশে অনুষ্ঠানে খুব সুন্দর বলেন ভারতের কবি চিন্ময় গুহ। তার বক্তৃতায় প্রধান হয়ে ওঠে বই। আবৃত্তির মতো করে তিনি বলেন, ভাষাকে ভালবেসে যে আশ্চর্য দেশের জন্ম হয়েছে, যে ভাষার ইতিহাস প্রতিরোধ সংগ্রামে রক্তদ্বীপময়, সেখানে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমন্ত্রিত হয়ে আমি শিহরিত হয়েছি। আমার পূর্বপুরুষ বরিশাল এবং পাবনা থেকে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ আজও ভুলিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার পাশে বসেছি। এই সোনালি দুপুরে যে স্বপ্নস্মৃতি আমাকে তানপুরার মতো বাজিয়ে দিচ্ছে। যখন পৃথিবীজুড়ে গোধূলি সন্ধের নৃত্য, যখন ভয়ে আমাদের কান বধির হয়ে আছে, অন্ধ হয়ে আছে চোখ তখন ইতিহাসকে শরীরে ধারণ করে আপনারা এই গ্রন্থমেলায় যে প্রদীপ জ্বালাচ্ছেন তা পৃথিবীতে আমাদের দ্বীপিত করুক। ওপার বাংলায় আমরা তো আপনাদের রক্তের দোসর। আপনারা যে লড়াই করছেন সে লড়াই আসলে অন্ধকার ও শূন্যতার বিরুদ্ধে। আর প্রতিরোধের প্রধানতম অস্ত্র হচ্ছে বই। বই নামের ম্যাজিক লণ্ঠন। এই জাদু লণ্ঠন মানব ভাবনা আর তথ্যের সেই আধার যা অধিকাংশ চোখ ধাঁধানো বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির চেয়ে আরও অনেক স্থায়ী ও গভীরভাবে মানব সভ্যতাকে বদলে দিয়েছে। বই আমাদের দিয়েছে আলোর দিশা। এর চেয়ে অগ্নিবীণা আর কী হতে পারে? সে জন্য সারা পৃথিবীতে বার বার বই নিষিদ্ধ করেছে। অথবা পুড়িয়ে দিয়েছে। মনিষী বাণী থেকে নিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে বই পুড়ানোর চেয়েও বড় অপরাধ আছে। সেটি হচ্ছে বই না পড়া। ফরাসী ওপন্যাসিকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের মতো শুধু আনন্দ পাওয়ার জন্য অথবা শিক্ষিত হওয়ার জন্য পড়বেন না। বাঁচার জন্য পড়ুন। তিনি বলেন, যখন সন্ধ্যে নেমে আসবে, বুদ্ধদেব বসুর তিথিডোর উপন্যাসের মতো বইয়ের পাতাগুলো খস খস করে বলবে, এসো এসো। কালো অক্ষরগুলো গুন গুন করে বলবে, শুনো শুনো। তখন সুখের ঢেউ ছল ছল করে উঠবে বুকের ওপর। বইয়ের চেয়ে সুখ আর শুশ্রূষা কে দিতে পারত আমাদের। বই জলে স্থলে অন্তরিক্ষে নৌকোয় জাহাজে বাসে ট্রেনে পড়া যায়। শুয়ে আধশুয়ে বসে দাঁড়িয়ে পড়া যায়। বই কখনও আপত্তি করে না। এমন বন্ধু কি আর আছে?
×