ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাছে পাওনা ২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাছে পাওনা ২ হাজার কোটি টাকা

আজাদ সুলায়মান ॥ দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাছে প্রায় দু’ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পাওনা থাকলেও তা আদায় করতে পারছে না সিভিল এভিয়েশন। বছরের পর বছর ধরে দেনদরবার করলেও তাতে তেমন সাড়া মিলছে না। দেশীয় কয়েকটি এয়ারলাইন্স চাপের মুখে কিস্তিতে কিছু বকেয়া পরিশোধ করতে শুরু করেছে। অথচ শুধু টাকার অভাবেই সিভিল এভিয়েশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যাচ্ছে না। যেমন হযরত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশনের (আইকাও) খাতায় এখনও ক্যাটাগরি-২। নিরাপত্তা, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও অবকাঠামোগত উন্নয়নই ক্যাটাগরি উন্নয়নে প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত। অর্থ সংকটে পিছিয়ে থাকায় এসব ক্ষেত্রের উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। এ সব উন্নয়ন করা সম্ভব হলে অনেক আগেই ক্যাটাগরি-ওয়ানে উন্নীত করা সম্ভব হতো। এ সম্পর্কে সিভিল এভিয়েশনের সদস্য (অর্থ) মিজানুর রহমান জানান, বিদেশী ২৪টি এয়ারলাইন্সের কাছেই মোট ৪৪ লাখ ডলার পাওনা। এসব পাওনা আদায়ের জন্য বছরের পর বছর ধরে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। চিঠি লিখে, টেলিফোন করে এমনকি মুখোমুখি বসেও টাকা পরিশোধের তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পাওয়ার আশা ক্ষীণই। কেননা এদের অধিকাংশ এয়ারলাইন্সেরই অপারেশন বন্ধ হয়ে গেছে। দেশী-বিদেশী ২৭টি এয়ারলাইন্সের কাছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। দেশীয় এয়ারলাইন্সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওনা বিমানের কাছে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছেই পাওনা প্রায় ১৮ শ’ কোটি টাকা। দেশী বেসরকারী এয়ারলাইন্সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫৯ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে। বার বার তাগিদ দেয়া হলেও টাকা পরিশোধ করছে না ইউনাইটেড। জানা যায়, ২৪টি বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাছে পাওনা বকেয়া আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। বকেয়ার তালিকায় ভারতের আটটি এয়ারলাইন্সও রয়েছে। এর মধ্যে অপারেশন বন্ধ থাকা একটি এয়ারলাইন্সের কাছে পাওনা দেড় শ’ কোটি টাকার বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা চালিয়েও বকেয়া আদায় করতে পারছে না সিভিল এভিয়েশন। তবে অনেক দেনদরবারের পর মাসিক কিস্তিতে যৎসামান্য পরিশোধও করছে অনেকে। বকেয়া পাওনার তালিকায় ভারতীয় এয়ারলাইন্সের মধ্যে রয়েছে ডেকান এক্সপ্রেস, এয়ার ডেকান, কিংফিশার এয়ারলাইন্স, ভায়দূত এয়ারলাইন্স, দামানিয়া এয়ার, ইস্ট ওয়েস্ট এয়ারলাইন্স, এনইসিপি এয়ার এবং কানোয়ার এয়ার। এ আটটি এয়ারলাইন্সের কাছে সিভিল এভিয়েশনের বকেয়া রয়েছে ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৮ ডলার। অন্য ১৬টি বিদেশী এয়ারলাইন্স হচ্ছে- যুক্তরাজ্যের এমকে এয়ারলাইন্স ও ভার্জিন এয়ার, ইতালির এএল ইতালিয়া ও লায়ুডা এয়ার, মিয়ানমারের মিয়ানমার এয়ার ও মিয়ানমার এয়ারওয়েজ, ইরাক এয়ারওয়েজ, ইরান এয়ারওয়েজ, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা এয়ার, এয়ার ইয়েমেন, মালেভ হাঙ্গেরি, রোমনিয়া এয়ারলাইন্স, গ্রিসের ওলেম্পিয়া এয়ারলাইন্স, ইউক্রেনের এ্যারোসভিত এয়ারলাইন্স, জার্মানির এলটিইউ ইন্টারন্যাশনাল ও বলকান বুলগেরিয়ান। এ সব এয়ারলাইন্স অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। এ সব পাওনা আদায়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান জানান, বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০১২ সালের জুনে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বকেয়া আদায়ে সহযোগিতা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। তবে এখন পর্যন্ত চিঠির কোন জবাব পায়নি বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। যেমন ইতালির রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এএল ইতালিয়া এয়ারলাইন্সের কাছে সিভিল এভিয়েশনের বকেয়া প্রায় ১০ লাখ ডলার। জার্মানির এলটিইউ ইন্টারন্যাশনালের কাছে বকেয়া ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ ডলার এবং ব্রিটেনের ভার্জিন এয়ারলাইন্সের কাছে বকেয়া রয়েছে ১৮ হাজার ডলার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- বিদেশী পাওনার বেশিরভাগই ওভারফ্লাইং চার্জ। বাংলাদেশে তাদের অপারেশান নেই, কিন্তুুু বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহারের দরুন এ চার্জ বকেয়া পড়েছে। এখানে অনেক পুরনো পাওনাও রয়েছে। তবে এর মধ্যেও ভাল খবর হচ্ছে লাগাতার তাগিদে কয়েকটি এয়ারলাইন্স পাওনা দিতে শুরু করেছে। যেমন ভারতের স্পাইজেট নতুন করে আবার তাদের ব্যবসা চালু করতে এসে আশ্বাস দিয়েছে আগের বকেয়া পরিশোধ করবে। একই ভাবে দেশীয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বকেয়া ৩২ কোটি টাকার মধ্যে মঙ্গলবার ১৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকাও খুব শীঘ্রই তারা পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছে। এটা অবশ্যই ভাল লক্ষণ। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, পাওনা টাকা আদায় করা গেলে তা সিভিল এভিয়েশনের উন্নয়ন কাজে লাগানো যেত।
×