ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের অভিমত

বিশ্বব্যাপী সুশাসনের কোন সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই, নেই আদর্শ মডেল

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিশ্বব্যাপী সুশাসনের কোন সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই, নেই আদর্শ মডেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে সুশাসন বিষয়ক এক একাডেমিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সুশাসনের সর্বজনগ্রাহ্য কোন সংজ্ঞা নেই। এমনকি সুশাসনের ‘আদর্শ মডেল’ (আইডিয়াল মডেল) হতে পারে এমন একক কোন দেশও নেই। সুশাসন আছে কি নেই তা নিরূপণে এখন পর্যন্ত যে সব সূচক ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও পূর্ণাঙ্গ নয়। সুশাসনের সূচক হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত- স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সহিংসতার অনুপস্থিতি, সরকারের কার্যকারিতা, মানবাধিকার, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ইত্যাদি ‘সুশাসন ধারণা’কে পূর্ণ রূপ দিতে পারেনি। কারণ এই সূচকগুলো সমাজ কাঠামোতে বিদম্যান ‘ক্ষমতার সম্পর্ককে’ বিবেচনায় নেয় না। এজন্য সুশাসনের মূল সূচক হিসেবে ‘রাষ্ট্র ক্ষমতা’ বিশেষ করে এর ‘বিধিসম্মত ক্ষমতা’ (লেজিটিমেশন ক্যাপাসিটি) অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে ‘গবর্নেন্স : এ ক্রিটিক্যাল এক্সামিনেশন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গবর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ সেমিনারের আয়োজন করে। সিজিএসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ। ১৮ পৃষ্ঠার প্রবন্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সুশাসন বিষয়ক সংজ্ঞা, সুশাসনের বর্তমান সূচক ও এগুলোর অপর্যাপ্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে সুশাসন বিষয়ে বিশেষ কোন দেশের প্রসঙ্গ বা উদাহরণ প্রবন্ধকার দেননি। প্রবন্ধে ‘রাষ্ট্র ক্ষমতা’কে সুশাসনের মূল সূচক হিসেবে উল্লেখ করে একে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো প্রশাসনিক ক্ষমতা, নির্যাস ক্ষমতা, বলপ্রয়োগকারী ক্ষমতা ও বিধিসম্মত ক্ষমতা। পরে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান খান বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম পদ্ধতি হলো রাজনীতি। আর কার্যকর রাজনীতি চর্চার জন্য বিরোধিতা আবশ্যক। এতে ভুল নীতি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকা এবং নীতি সংশোধনের সুযোগ থাকে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সুশাসনের কিছু কিছু উপাদানের সামাজিক উপযোগিতা থাকে। আগের ছাত্র নেতাদের অর্থ প্রতিপত্তি ও তথাকথিত ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের সম্মানের চোখে দেখত। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। বিসের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, কার্যকর ব্যবস্থাপনাই হলো সুশাসন। রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং সত্যিকারের গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারলে সুশাসন নিশ্চিত করা সহজ হবে। সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব এ্যাডভান্সড লিগ্যাল এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস স্টাডিসের (সেইলস) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পদধারী ব্যক্তির চরিত্র স্পষ্ট হওয়া উচিত। বর্তমান সংসদের অধিকাংশ এমপি ব্যবসায়ী। কিন্তু তারা কতটুকু রাজনীতিক আর কতটুকু ব্যবসায়ী সেটা স্পষ্ট। সুশাসন প্রশ্নে রাজনীতিক হিসেবে জনগণের কাছে স্পষ্ট দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাবেক কর্মকর্তা ড. মুহম্মদ পারভেজ ইমদাদ বলেন, রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দুইটি। একটি হলো নিরন্তর জনগণের কল্যাণ করে যাওয়া। অপরটি হলো জনগণের কল্যাণ করার রাষ্ট্রের নিজের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানো। এ দুটো লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আরও আলোচনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক হিলস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহরার আহমেদ, ইউএনডিপির পলিটিক্যাল এ্যাডভাইজর শীলা তাসনিম হক প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
×