ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গত ২ মাসে শেয়ার বিক্রির চেয়ে কিনেছে বেশি

পুুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগে রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পুুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগে রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লেনদেন নতুন উচ্চতায় পৌঁছছে। গত মাসে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেন করেছে ১ হাজার ৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এর আগে কখনও এক মাসে এত টাকার শেয়ার লেনদেন করেনি বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আস্থা সঙ্কট ও দরপতনের বৃত্ত থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে দেশের শেয়ারবাজার। বেশ কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক উত্থান বা পতনের ঘটনা না ঘটায় বাজারের ওপর সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর আস্থা বেড়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেনে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই শেয়ারবাজারে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কম থাকায় তারা বেশ ক্রয় করেন। যার ধারাবাহিকতা সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসেও অব্যাহত ছিল। ফলে টানা ৫ মাস বিদেশীরা বাজার থেকে যে পরিমাণ শেয়ার ক্রয় করেন বিক্রয় তার থেকে কম। জানুয়ারি মাসে বিদেশীরা শেয়ারবাজার থেকে ৬১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় করে। এর বিপরীতে বিক্রয় করে ৪২৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসটিতে বিদেশীদের শেয়ার বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি হয়েছে ১৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেন করে ৯৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার। ওই মাসটিতেও বিদেশীদের শেয়ার লেনদেনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এক মাসের ব্যবধানে জানুয়ারিতে এসে লেনদেনের সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ল পুঁজিবাজার। এদিকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বছরভিত্তিক শেয়ার লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালজুড়ে বিদেশীরা ৮ হাজার ৭৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করে। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এটিও নতুন রেকর্ড। এর আগে কখনও এক বছরে বিদেশীরা এত টাকার শেয়ার লেনদেন করেনি। শুধু লেনদেন চিত্রে নয় ২০১৬ সালে বিদেশীদের শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের পার্থক্যও ছিল বেশ ইতিবাচক। বছরটিতে বিদেশীদের শেয়ার বিক্রির থেকে ক্রয় বেশি হয়েছে ১ হাজার ৩৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। যা ২০১৫ সালে ছিল ১৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে বিদেশীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের (বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি) পার্থক্য বাড়ে ১ হাজার ১৫৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা বা ৭২২ শতাংশ। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বেশ ভাল রয়েছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে মন্দাভাব থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেশ কমে এসেছে। যা শেয়ারবাজারের প্রতি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। তারা হয়তো মনে করছেন এখন শেয়ার কিনে কিছুদিন ধরে রাখলে ভাল মুনাফা করা যাবে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়া ভাল লক্ষণ। তবে বিদেশীদের বিনিয়োগ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সেটি চিন্তার বিষয়। কারণ বিদেশীরা যখন শেয়ার বিক্রয় করেন তখন বাজারে একটি পেনিক সৃষ্টি হয়। তবে আশার কথা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এখন সে পর্যায়ে পৌঁছেনি। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে বিদেশীরা শেয়ারবাজার থেকে ৬৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় করেছেন। এর বিপরীতে বিক্রয় করেছেন ২৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসটিতে বিদেশীরা শেয়ার বিক্রর থেকে ক্রয় বেশি করেছে ৩৮৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যা গত ২৭ মাস বা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ ছিল। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির থেকে ক্রয় বেশি ছিল ৪২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরবর্তী ২৬ মাসে বিদেশীদের শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবধান ৩০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেনি। দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবধান (বিক্রির থেকে ক্রয় বেশি) সব থেকে বেশি হয় ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে। মাসটিতে বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি ছিল ৫৭২ কোটি ৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ৩৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গত ২০১৬ সালে ৯ মাসে বিদেশীরা শেয়ার বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি করে। এর মধ্যে ডিসেম্বরের পরই অক্টোবরে ছিল সর্বচ্চো ব্যবধান। মাসটিতে বিদেশীরা ৪৭৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় করে ২৬১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি হয় ২১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এরপর নবেম্বর মাস। মাসটিতে বিদেশীরা ৪০৯ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় করে ২৫৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার। বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি হয় ১৫৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া সেপ্টেম্বরে ১৪১ কোটি ৫৪ লাখ, জুলাইতে ৮ কোটি ৩০ লাখ, মে মাসে ১২২ কোটি ৪২ লাখ, এপ্রিলে ১৩৯ কোটি ৭৮ লাখ, মার্চে ১৪২ কোটি ৬৭ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৯৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা শেয়ার বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি করে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। অপরদিকে বছরটির তিনটি মাসে বিদেশীদের শেয়ার ক্রয়ের থেকে বিক্রয় বেশি ছিল। এর মধ্যে গত বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ক্রয়ের থেকে বিক্রয় বেশি ছিল ২২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। মাসটিতে বিদেশীরা ৩২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় করে ৩৪৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া গত বছরের জুনে ৩৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় হয় ৪০২ কোটি ৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ক্রয়ের থেকে বিক্রয় বেশি ৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগস্টে ৩৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় হয় ৩৭৩ কোটি ১ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসটিতে শেয়ার ক্রয়ের থেকে বিক্রয় বেশি ছিল ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
×