ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

অস্কারে মোট ১৪টি বিভাগে ‘লা লা ল্যান্ড’

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অস্কারে মোট ১৪টি বিভাগে ‘লা লা ল্যান্ড’

শুধু চলচ্চিত্রের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের শিল্প সাহিত্যের ইতিহাসে অস্কার পুরস্কার সবচেয়ে আলোচিত, সম্মানজনক পুরস্কার। ১৯২৯ সালের ১৬ মে হলিউডের রুজভেল্ট হোটেলের ব্লুজম রুমে প্রথম অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রাচীনতম, জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী এই পুরস্কার দিয়ে থাকে একাডেমি অব মোশন পিকচার্স এ্যান্ড সাইন্স (এএমপিএএস) নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে ১৯৭২ সালে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। ১৯৩৫ সাল থেকে প্রিন্সওয়াটারহাউস (বর্তমানে প্রিন্সওয়াটার হাউস কর্পোরেশন) এই পুরস্কারের জন্য ভোটগ্রহণ করে আসছে। ১৯২৭ সালের ১ আগস্ট থেকে ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট নাগাদ যে সব চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল তার মধ্য থেকেই এই পুরস্কার বিতরণ করা হয়। আমেরিকার একাডেমি অব মোশন পিকচাস আর্টস এ্যান্ড সাইন্স নামের প্রতিষ্ঠান ১৯২৭ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞানের সমন্বয় চলচ্চিত্র নামের যে মাধ্যম গড়ে উঠেছে তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রবর্তন করবে এবং সংশ্লিষ্টদের উৎসাহী করে তুলবে। এর ফলেই জন্ম হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র পুরস্কারের। এই পুরস্কারটির নাম আসলে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড অব মেরিট আর পদকটির নাম অস্কার। আজ অস্কার নামেই পুরস্কার ও পদক দুটোই পরিচিত। অস্কার নামটি কী করে এলো তা নিয়ে সুনিশ্চিত কোন ধারণা নেই। কেউ বলে থাকেন একাডেমি লাইব্রেরিয়ান মার্গারেট হারিক এই পুরস্কার দেখে বলেছিলেন এই পদকের মানুষটি দেখতে তার চাচা অস্কারের মতো, সেই থেকে এই নামকরণ। আরেকটি মত হলো, ১৯৩৪ সালে ষষ্ঠ অস্কার প্রদানের সময় হলিউডের কলাম লেখক সিডনি সোলস্কি ক্যাথারিন হেপবার্নের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারটিকে অস্কার বলে সম্বোধন করেছিলেন। মত যাই হোক, ১৯৩৯ সাল থেকে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড অব মেরিটকে অস্কার নামে ডাকা শুরু হয়ে যায়। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বসছে অস্কারের ৮৯তম আসর। গতবারের অনুষ্ঠানও এই দিনেই হয়েছিল। চূড়ান্ত ভোট কার্যক্রম শুরু হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি এবং শেষ হবে ২১ ফেব্রুয়ারি। গত অস্কার আসরে বর্ণবাদ নিয়ে তুমুল বিতর্ক ওঠে। জোরেশোরে অভিযোগ উঠেছিল, অস্কার পুরস্কার কেবল সাদারাই পাচ্ছেন। এবং দেখা গেছে, একাডেমির অধিকাংশ সদস্যই সাদা ও পুরুষ। এঁরাই ভোট দিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কে পুরস্কার পাবেন, তা ঠিক করেন। বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে অনেক খ্যাতিমান তারকা অস্কার বর্জনের কথাও বলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ‘পারসুয়েট অব হ্যাপিনেস’ তারকা উইল স্মিথ। এবারে এখন পর্যন্ত বর্ণবাদের অভিযোগ না উঠলেও মুসলিম রাষ্ট্রের অভিবাসীদের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে অনেকেই চূড়ান্ত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান বয়কট করতে পারেন। ইতোমধ্যে এবারের অস্কার মনোনয়ন পাওয়া ইরানী অভিনেত্রী তারানেহ আলিদোস্তি জানিয়েছেন তিনি চূড়ান্ত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান বয়কট করতে পারেন। ইরানী অভিনেত্রী তারানেহ আলিদোস্তি অভিনীত ‘দ্য সেলসম্যান’ ছবিটি অস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে ‘এ্যা সেপারেশন’ চলচ্চিত্রের জন্য অস্কার পুরস্কার পেয়েছিলেন। এবারের আসরে সেরা সিনেমা, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী, সেরা পরিচালক, চিত্রনাট্য ও সঙ্গীতসহ মোট ১৪টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে ডেমিয়েন শ্যাজেল-এর মিউজিক্যাল রোমান্স ‘লা লা ল্যান্ড’। এর আগে ‘টাইটানিক’ ও ‘অল এ্যাবাউট ইভ’ এর মতো সিনেমাগুলো ছাড়া আর কোন ছবির কপালে এমন সৌভাগ্য জোটেনি। সঙ্গীত চমকের লা লা ল্যান্ডে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনয় শিল্পী পুরুষ এবং সেরা অভিনয় শিল্পী নারী ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন রায়ান গসলিং এবং এমা স্টোন। অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতার দৌড়ে আরও আছেন ড্যানজেল ওয়াশিংটন (ফেনসেস), ভিগো মর্টেনসেন (ক্যাপ্টেইন ফ্যান্টাসটিক), এ্যান্ড্রু গার্ফিল্ড (হ্যাকস রিজ), কেসি অ্যাফ্লেক (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি)। এমা স্টোনের সঙ্গে অস্কার দৌড়ে আছেন মেরিল স্ট্রিপ (ফ্লোরেন্স ফস্টার জেনকিন্স), নাটালি পোর্টম্যান (জ্যাকি), রুথ নেগা (লাভিং), ইসাবেল হুপার্ট (এলি)। লা লা ল্যান্ডের এত কিছুতে মনোনয়ন অর্জনের এই জোয়ারের মধ্যেও ৮টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে চলচ্চিত্র ‘মুনলাইট’ ও সাই-ফাই থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘অ্যারাইভাল’। সেরা এ্যানিমেটেড মুভি হিসেবে অস্কার মনোনয়ন পেয়েছে কুবো এ্যান্ড টু স্ট্রিংস, মোয়ানা, মাই লাইফ এ্যাজ আ যুচ্চিনি, দ্য রেড টার্টল এবং জুটোপিয়া। এছাড়া বিদেশী ভাষার সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে এবার অস্কার মনোনয়ন পেয়েছে ডেনমার্কের ‘ল্যান্ড অব মাইন’, সুইডেনের ‘আ ম্যান কল্ড ওভ’, ইরানের চলচ্চিত্র ‘দ্য সেলসম্যান’, অস্ট্রেলিয়ার ‘টেনা’ এবং জার্মানির ‘টনি আর্ডম্যান’। তবে প্রতি বছরের মতো এবার তৈরি হয়েছে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নানা হিসাব-নিকাশ। সেরা নির্মাতার বিভাগে মার্টিন স্করসেজি ও ডেনজেল ওয়াশিংটন এবং সেরা অভিনেতার বিভাগে টম হ্যাঙ্কস-এর মনোনয়ন না পাওয়াটা ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ‘সাইলেন্স’ ছবির জন্য সেরা পরিচালক বিভাগে মনোনয়ন পাননি এই নামকরা পরিচালক মার্টিন স্করসেজি। শুধু তাই নয় সেরা ছবির ক্যাটাগরিতেও জায়গা করে নিতে পারেনি এটি। অন্যদিকে ‘ফেন্সেস’ ছবির সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পেলেও, সেরা পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন জিততে পারেননি ডেনজেল ওয়াশিংটন। একইভাবে ‘সালি’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় সত্ত্বেও মনোনয়ন পাননি অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস। সুপারহিরো ছবি ‘ডেডপুল’ যে অস্কার তালিকায় থাকবে- এতটা যদিও ভাবেননি ভক্তরা কিন্তু ‘গোল্ডেন গ্লোব’সহ অন্যান্য নামকরা পুরস্কার আসরের মনোনয়ন কিছুটা হলেও আশার আলো জ্বালিয়েছিল তাদের মনে। কিন্তু তাদের হতাশ করে অস্কার তালিকার কোন বিভাগেই নাম লেখাতে পারেনি এ ছবিটি!
×