ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাপ্পী দ্য ডিজিটাল হিরো সব্যসাচী দাশ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

 বাপ্পী দ্য ডিজিটাল হিরো সব্যসাচী দাশ

ভাই। একটা প্রথম শ্রেণীর টিকিট দেন। কাউন্টারের ভেতর থেকে উত্তর, নেই শেষ। তাহলে যে কোন ক্লাসের একটা দেন। উত্তরে, সব শ্রেণীর টিকিট শেষ। অনুরোধের স্বরে, ভেতরে দাঁড়িয়ে দেখতে পারি অন্তত সে ব্যবস্থা করেন। বিরক্তির সুরে কাউন্টারের ভেতর থেকে বলল, কোন ব্যবস্থা নেই, যান তো। তাড়াতাড়ি কাউন্টার থেকে বেরিয়ে ভিন্ন রাস্তা খুঁজছে ছেলেটি। চেহারা পোশাক-আসাকে দর্শক মনে হচ্ছে না এমন এক জন কাছে এসে, লাগব? সেকেন্ড ক্লাস আছে। দাম পড়ব ১শ’। ছেলেটি বিস্ময়ে বলল, ১শ’ টাকা! সেকেন্ড ক্ল¬াস তো ২৫ টাকা। জবাবে লোকটি বললো ‘নিলে নেন না নিলে নাই। কাইল তো এক টিকিটের জন্য ছুরি মারামারি হইছ্।ে আইজ তো তবু আছে।’ শেষ-মেষ দর্শক আশি টাকায় টিকিট নিয়ে প্রবেশ করল অন্ধকার দরজা দিয়ে রঙিন পর্দার সামনে। ‘জীবন সংসার।’ প্রিয় নায়কের সিনেমা বলে কথা। সালটা ১৯৯৬। তখন বাংলা সিনেমার সুদিন। ১৯৯২ সালে তুমুল জনপ্রিয় নায়ক জাফর ইকবালের মৃত্যুর পর ৯৩ তে সালমান সাহ্ নতুন ইজম তৈরি করছিলেন। তখন সব বাংলা সিনেমারই সোনালী দিন। হঠাৎ। অসময়ে নক্ষত্রের পতন। আস্তে আস্তে নিভে এলো আলো। নামল অন্ধকার। আলো জ্বালানোর চেষ্টায় মাঝে মাঝে খানিক আলো। এই জ্বলে এই নেভে। নতুন শতাব্দী নতুন দশক। নতুন ইরা। শুরু হয় বাংলা সিনেমার ডিজিটাল পর্ব। আবির্ভাব ঘটে নতুন হিরোর। বাপ্পী চৌধুরী। ডিজিটাল বাংলা সিনেমার প্রথম হিরো তিনি। ২০১২ সালে শাহীন-সুমনের পরিচালনায় মুক্তি পায় প্রথম ডিজিটাল বাংলা চলচ্চিত্র ‘ভালবাসার রং’। এই সিনেমায় তিনি ছিলেন প্রধান চরিত্রে। সম্প্রতি আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় শেয়ার করেন বাপ্পী থেকে নায়ক বাপ্পীর না জানা কথকথা। প্রাচ্যের ডান্ডি নগরীতে বাপ্পীর জন্ম। লেখাপড়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে। প্রশ্ন করা হলো, বাপ্পী কি ভাবে নায়ক বাপ্পী হলো? উত্তরে নায়ক হবো বা এই লাইনে কাজ করব এমন পরিকল্পনা ছিল না। তবে কাছের বন্ধুরা এ ব্যাপারে উৎসাহ যোগাত। বাপ্পীর বাবা ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। দুই ভাই দুই বোন। বোনদ্বয় বিবাহিত। পারিবারিকভাবে কখনই চায়নি তাদের ছেলে নায়ক হোক। এক প্রোডাকশন হাউসের পরামর্শ ছিল। তুমি চলচ্চিত্রে কাজ করো ভাল করবা। ব্যস এই তো। বড় পর্দায় অভিষেকের আগে কখনো র‌্যম্প কিংবা টিভিসি তে কাজ করেননি। সরাসরি রূপালি পর্দায় অভিষেক। বাপ্পী এখন ঢাকই চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় রোমান্টিক হিরো। ভালবাসার রং দিয়ে শুরু করে কয়েক বছরের ব্যবধানে করেছেন বেশ সংখ্যক সিনেমা। অভিনেতা হিসেবে তার সব থেকে শক্তিশালী দিকগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরে বলেন, ‘কাজের ব্যাপারে আমার কোন সময় অসময় নেই। প্রোডাকশন সেট চাইলে আমি ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে পারি। নিজস্ব স্টাইলে কাউকে ফলো না করে, নিজের মতো কাজ করি। স্বকীয় একটা ট্রেন তৈরির চেষ্টা সবসময় করি।’ নিজের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে বলেন, ‘স্বাভাবিক ক্যাজুয়াল স্বভাবেই অভিনয় করতে পছন্দ করি। কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস চিন্তা করতে আমি অভ্যস্ত। মিথ্য কথা। কথা দিয়ে রক্ষা না করা। না পেরে পারার ভঙ্গিতা করা একেবারেই অপছন্দ। কাজের ফাঁকে অবসরে সিনেমা দেখতে খুব ভাললাগে। ছুটি পেলে মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটাতে সব থেকে বেশি আনন্দ লাগে।’ ইন্ডাস্ট্রির প্রিয় ব্যক্তিত্ব? বিশেষ করে রাজ্জাক স্যার, নায়ক বাপ্পারাজ, শাকিব ভাই শুভ ভাইদের নিজস্ব গ্ল্যামার বেশ মুগ্ধ করে। দেশের বাইরে শাহরুখ, সালমান ও আমির খানকে ভীষণ পছন্দ। পাশাপাশি আমির খানের মতো স্বাধীন সৃষ্টিশীল কাজের পৃষ্ঠপোষকতাও ইন্ডাস্ট্রি থেকে আশা করেন এই রাইজিং হিরো। নিজের ইচ্ছা সম্পর্কে বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রের সোনালি ততীত ফিরে আসলে সবে থেকে খুশি হবেন। এর জন্য অবশ্য নিজ দেশের মানুষের জীবনগল্প নিয়ে সিনেমা তৈরি হলে সাধারণের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। কারণ অতীতের সিনেমাগুলো ছিল মানুষের জীবন কেন্দ্রিক। নিজের অভিনীত প্রিয় সিনেমা কোনটি জানতে চাইলে উত্তরে, আমার প্রিয় সিনেমা? আমার অভিনীত সব সিনেমাই আমার প্রিয়। কেউ দেখতে চাইলে কোন কোন সিনেমা সাজেস্ট করবেন। আপনি যদি প্রেমিক হন তাহলে অবশ্যই ‘সুইটহার্ট’ ‘অন্যরকম ভালবাসা’ ‘অনেক দামে কেনা’ দেখবেন। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে এমন সিনেমা সম্পর্কে বাপ্পী বলেন, কাজ করছি একাধিক সিনেমায় তবে আপন মানুষ, মিসড্ কল, সুলতানা বিবিআনা, ও দাগ এর কাজ প্রায় শেষ। বাপ্পী, প্রেম করছেন? মিষ্টি হাসি এই করছি আবার করছি না। বিয়ে করছেন কবে? ধুম করে একদিন করে ফলব। তবে এই ত্বরিত সিদ্ধান্তের সঙ্গী কে হবেন, তা রহস্য হয়ে রইল। বাপ্পী সদা আলাপী মিষ্টভাষী। দেশীয় চলচ্চিত্রে সমৃদ্ধ ভবিষ্যত আশা করেন। এজন্য জানালা দিয়ে বাইরে না তাকিয়ে নিজের ঘরের ভেতর তাকাতে সবাইকে অনুরোধ করেন।
×