ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দশ মাস লালফিতায় বন্দী রেলওয়ের এক ফাইল

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দশ মাস লালফিতায় বন্দী রেলওয়ের এক ফাইল

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলের বাসা নিয়ে কেলেঙ্কারির ঘটনায় একটি ফাইল দীর্ঘ ১০ মাসেও কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। এই কেলেঙ্কারির মূল হোতা জিএম (পূর্ব) বাজেট দফতরে কর্মরত থাকায় ফাইলটি লালফিতায় বন্দী হয়েছে। এ কারণেই দীর্ঘ ১০ মাসেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, এই ফাইলের সিদ্ধান্ত কার্যকরে নারাজ অতিরিক্ত জিএম ঈসা-ই-খলিল। পূর্বাঞ্চলীয় জিএম আব্দুল হাই উল্টো মামলার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে পরামর্শ দিলেন ক্ষতিগ্রস্তের প্রতি। প্রায় ১০ মাস এই সমস্যার পদক্ষেপ প্রসঙ্গে জিএম বলেন, এর জন্য মন্ত্রীও কল করেছেন, আমার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়। সুতরাং মামলার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। অপরদিকে, লিখিত চুক্তিনামায় রেলের ঘর ভাড়া দিলেও তা বৈধ মনে করছেন জিএম। ফলে নিরাপরাধ রেল কর্মচারীর বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও মালিক সেজে রেল কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি চীফ মেডিক্যাল অফিসার ও ডিভিশনাল মেডিক্যাল অফিসার। রবিন্দ্র চন্দ্র নামে মেডিক্যাল বিভাগের কর্মচারী চুক্তিনামায় নিজের বরাদ্দকৃত বাসা ১০ বছর ধরে ভাড়া দিয়েছে। এছাড়াও ভাড়া বৃদ্ধি না করায় উল্টো মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ওয়ার্কসপ কর্মচারী সাইফুল ইসলামকে আইনের কাছে ফাঁসানোর চেষ্টার প্রমাণ মিলেছে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দফতরের কর্মচারী সাইফুলকে আরেক দফায় হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বাধ্য করা হচ্ছে বাসা ছেড়ে দিতে। প্রশ্ন উঠেছে অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দফতরের অডিটর বিজয় চন্দ্র কর গত সাত বছর ধরে বাসাভাড়া ও বিদ্যুত বিল পরিশোধ করলেও বাসাটির দখলে নেই কেন। এই বাসাটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে জিএম দফতরের বাজেট শাখার কম্পিউটার অপারেটর সুজন কর। অভিযোগ রয়েছে সুজন কর রেলের আরও একটি বাসা তার নামে বরাদ্দ নিয়ে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছেন। এদিকে, সুজন করকে বিজয় করের বাসা থেকে উচ্ছেদ না করার কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইএ্যান্ডডি বিধি অনুযায়ী সিআরবির অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (সার্বিক) স্বাক্ষরিত গত ২৫ এপ্রিল বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টে সুজন করের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তাও কার্যকর হচ্ছে না। এফএএ্যান্ডসিএও/পূর্ব কর্তৃক অডিটর বিজয় করের বরাদ্দ আদেশ বহাল এবং অতিরিক্ত জিএম কর্তৃক জারিকৃত সুজন করের পক্ষে অবৈধ আদেশ বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল আরও ১০ মাস আগে। এদিকে প্রতারণার আশ্রয় নিতে গিয়ে সুজন কর গত ১৮ এপ্রিল তার বরাদ্দপ্রাপ্ত বাসা (নং ৫/২-ও, পলোগ্রাউন্ড কলোনি) এসএসএই/কার্য্য/কলোনি/চট্টগ্রাম কাছে হস্তান্তরে কাগজে কলমে চিঠি চালাচালী করলেও ওই বাসাটি সুজন করের আয়ত্বে রয়ে গেছে। এদিকে, রেকর্ড অনুযায়ী সুজন করের বাসা (নং ৫/২-ও, পলোগ্রাউন্ড কলোনি) এর বিপরীতে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ও বিজয় কর বাসা (নং-ডিএসআর-১/বি, পলোগ্রাউন্ড)-এর বিপরীতে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুত বিল পরিশোধ করেছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে বিভাগীয় বিদ্যুত প্রকৌশলীর দফতর থেকে। এদিকে, পাহাড়তলী রেল কারখানার ডিসপেন্সারিতে কর্মরত রবিন্দ্র চন্দ্র কর লিখিত চুক্তিনামায় রেল কর্মচারী সাইফুলের কাছে (ইঞ্জিনিয়ারিং কলোনির বাসা নং-এম/৫৮১/এ) ভাড়া দেয়ার ঘটনায় চিঠি লেখালেখি শুরু হয়েছে আরও চার মাস আগে। তবে মেডিক্যাল বিভাগের কর্মকর্তারা বাসাটির বরাদ্দ বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত না নেয়ায় অর্থ বাণিজ্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। অথচ রবিন্দ্র চন্দ্র কোয়ার্টারটি বরাদ্দ পাওয়ার দিন থেকেই দীর্ঘ প্রায় দশ বছর অবৈধভাবে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। উল্লেখ্য, এই বাসাটি দীর্ঘ প্রায় ৪৬ বছর সাইফুলের দাদা ও বাবার নামে বরাদ্দ ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, যেহেতু রবিন্দ্র চন্দ্রের বাসাটি প্রয়োজন নেই ও অবৈধভাবে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন তাহলে ওই বাসাটি সাইফুলের নামে বরাদ্দ হতে প্রতিবন্ধকতা কোথায়।
×