ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোটি টাকার ওপরে রোজগারে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত সারচার্জ ;###;রাজনৈতিক দলের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক;###;তিন লাখ টাকার ওপর নগদে লেনদেন নিষিদ্ধ;###;বড় শিল্পে লগ্নি আকর্ষণে কোন ঘোষণা নেই

ভারতে ২১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি রুপীর বাজেট ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভারতে ২১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি রুপীর বাজেট ঘোষণা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বড় নোট বাতিলের পর এই প্রথম বাজেট পেশ করেছে ভারত। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বুধবার ভারতের লোকসভায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা নেয়ার পর এটা হচ্ছে এ সরকারের ৪র্থ বাজেট ঘোষণা। প্রস্তাবিত বাজেটে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি জিডিপির ৩.২ শতাংশে থাকবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব ঘাটতি বেঁধে রাখা হবে ১.৯ শতাংশের মধ্যে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের মোট বাজেট বরাদ্দ ২১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি রুপী। এবার প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। আর দের বছরে রোজগার ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মধ্যে, তাদের আয়করের ওপর সারচার্জ দিতে হবে আরও ১০ শতাংশ। নোট বাতিলের ক্ষতে প্রলেপ দিতে অরুণ জেটলি করছাড়ের মলম এগিয়ে দিতে পারেন বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল আগেই। করের বোঝা কিছুটা কমবে এই আশায় বুক বেঁধেছিলেন মধ্যবিত্তরা। বাজেটে তাদের একেবারে হতাশ করলেন না অরুণ জেটলি। ঢালাও সুবিধা না দিলেও জানালেন, বছরে আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত রোজগার যাদের তাদের আয়করের হার কমে হচ্ছে পাঁচ শতাংশ। এত দিন যা ছিল ১০ শতাংশ। বাকিদের জন্য করের হার কমেনি। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর দাবি, এই ধাপে করের হার কমার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা পাবেন সকলেই। করের বোঝা কমবে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার টাকা। তবে এর জন্য রাজস্বে যে খেসারত গুনতে হবে, তার কিছুটা অন্তত পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন জেটলি। জানিয়েছেন, যাদের বছরে রোজগার ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মধ্যে, তাদের আয়করের ওপর সারচার্জ দিতে হবে আরও ১০ শতাংশ। আর রোজগার কোটি ছাড়ালে ওই সারচার্জ ১৫ শতাংশ। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার মধ্যে রইল, তিন লাখ টাকার বেশি নগদ লেনদেন বন্ধ করে দেয়া। বিদেশী লগ্নি আসার পথ আরও মসৃণ করতে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ উন্নয়ন পর্ষদ তুলে দেয়া। ডাকঘরে পাসপোর্ট পরিষেবা দেয়ার সুবিধা। কর বা ঋণ ফাঁকি দিয়ে কেউ বিদেশে পালালে ভারতে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে নতুন আইন আনার ঘোষণা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিলগ্নিকরণের পদ্ধতি ঢেলে সাজা। সব কিছুর পরেও রাজকোষ ঘাটতি জিডিপির ৩.২ শতাংশের মধ্যে ও রাজস্ব ঘাটতি ১.৯ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার প্রতিশ্রুতি। এবং অবশ্যই রাজনৈতিক দলে নগদ চাঁদা দেয়ার রাস্তা প্রায় বন্ধ করে দেয়া। যদিও কেন তা পুরোপুরি বন্ধ করা হলো না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। জেটলি অবশ্য বলেছেন, এবার থেকে রাজনৈতিক দলকে মোটা চাঁদা দিতে হবে চেক মারফত কিংবা ডিজিটাল পথে হেঁটে। কেনা যাবে তাদের ছাড়া ঋণপত্রও (বন্ড)। আয়কর রিটার্ন নিয়ম মেনে জমা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেও। কাজের সুযোগ তৈরির জন্য চাপ বাড়ছে মোদি সরকারের ওপর। সে কথা মাথায় রেখে ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য কর্পোরেট করের বোঝা কমানোর কথা বলেছেন জেটলি। তা নেমে আসছে ২৫ শতাংশে। কম আবাসনের আবাসন তৈরিকে দেয়া হয়েছে পরিকাঠামো শিল্পের তকমা। করের বোঝা কমানোর কথা বলা হয়েছে ব্যাঙ্কের জন্যও। কিন্তু, দিনের শেষে প্রশ্ন উঠেছে শিল্পে বড় লগ্নি টানার মতো ঘোষণা কোথায়? সরকার এত ঢাকঢোল পিটিয়ে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের কথা বলে। কিন্তু, তার জন্য উপযুক্ত ঘোষণা জেটলির বাজেটে সেভাবে চোখে পড়ল কি? সামনে উত্তরপ্রদেশসহ পাঁচ রাজ্যে ভোট। তাই, স্বাভাবিকভাবেই গ্রাম ও গরিবের জন্য কল্পতরু হওয়ার চেষ্টা করেছেন জেটলি। ১০০ দিনের কাজে রেকর্ড ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। যদিও গত বারের খরচের থেকে তা বেড়েছে সামান্যই। চাষিদের ঋণ দেয়ার লক্ষ্য বাঁধা হয়েছে রেকর্ড ১০ হাজার কোটি টাকা। সব গ্রামে বিদ্যুত, অন্তত এক কোটি কাঁচা বাড়ি পাকা করা এবং গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির গতি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এবারও দেয়া হয়েছে নিয়ম মেনে। তবে যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছিল, সেই সবার এ্যাকাউন্টে নিঃশর্তে টাকা পাঠানোর কোন প্রকল্প এদিন অন্তত শোনা যায়নি। প্রথা ভেঙ্গে এবারই প্রথম রেল ও সাধারণ বাজেট হয়েছে একসঙ্গে। যুক্তি, সম্পূর্ণ পরিবহন ক্ষেত্রকে একসঙ্গে দেখতে এতে সুবিধা হবে। সেই অনুযায়ী রেল নিয়ে বাজেট ঘোষণা বিপুল সময় এদিন অন্তত বরাদ্দ করেননি জেটলি। খুঁটিনাটিতে না গিয়ে শুধু বলেছেনÑ আগামী দিনে রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা বাড়ানোয় জোর দেবেন তারা। পরিবহনের জন্য বরাদ্দ মোট ২ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। গুরুত্ব পেয়েছে হাইওয়ে নির্মাণও। তার জন্য ৬৪ হাজার কোটি টাকা তুলে রাখার কথা জানিয়েছেন জেটলি। মোটা বরাদ্দ জুটেছে প্রতিরক্ষা, তফসিলি জাতি উন্নয়ন, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদিতেও।
×