অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জনশক্তি রফতানি ব্যবসায় নামছে বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাক। বিদেশে শ্রমিক পাঠানো নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে এ ব্যবসায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে ব্রাক এ ব্যবসা পরিচালনার জন্য রিক্রুটিং লাইসেন্স নিয়েছে। আগামী মার্চ থেকে প্রতিষ্ঠানটি জনশক্তি রফতানি শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের স্ট্রেটেজি কম্যুনিকেশন ও এমপাওয়ামেন্ট বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর আসিফ সালেহ বলেন, ‘বর্তমানে দেশের মাইগ্রেশন মার্কেটে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। এদেশের শ্রমিকদের বিদেশে যেতে হলে সাত থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। তাই দুর্নীতিমুক্ত ভাবে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতেই ব্র্যাক জনশক্তি রফতানি ব্যবসায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচ লাখ লোককে দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেব। প্রশিক্ষণ শেষে ওই দক্ষ শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানো হবে।’
বিদেশে যাওয়ার খরচ কমবে কিনা জানতে চাইলে জনাব আসিফ বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে এদেশের শ্রমিকদের বিদেশে যেতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। তাই আমাদের এ উদ্যোগে বিদেশগামী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার খরচ অনেক কমে আসবে। সেই সঙ্গে ভারসাম্যহীন মাইগ্রেশন মার্কেটে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিদেশে জনশক্তি রফতানির ব্যাপারে ব্র্যাকের একটি মাইগ্রেশন লোন প্যাকেজ আছে। এই প্যাকেজ থেকে যারা ঋণ নিয়ে বিদেশে যায়, বিদেশে গিয়ে বেতন পাওয়ার পর তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়।
ব্র্যাক বুধবার রাজধানীর কাওরানা বাজারে একটি হোটেলে এসডিজি ও ব্র্যাকের কর্মকা- নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে এসডিজি বিষয়ে কর্মকা- তুলে ধরেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক প্রফেসর আব্দুল বায়েস। এছাড়া ব্র্যাকের কর্মকা- তুলে ধরেন স্ট্র্যাটেজি ও কম্যুনিকেশন বিভাগের সিনিয়র পরিচালক আফিস সালেহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন এ্যাডভোকেজি ফর সোস্যাল চেঞ্জ বিষয়ক পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।
প্রফেসর আব্দুল বায়েস বলেন, জাতিসংঘের এসডিজিতে মোট ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে। এরমধ্যে ১ থেকে ৭টি লক্ষ্য বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ব্র্যাক আটটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রতিবছর এ প্রতিষ্ঠানটি এক লাখ চরম দরিদ্রকে দারিদ্র্য সীমার উপরে নিয়ে যাচ্ছে।
আসিফ সালেহ বলেন, পাউন্ড ও ইউরোর অবমূল্যায়নে ইউরোপ ভিত্তিক এনজিওগুলো অর্থায়ন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। তাছাড়া পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও বিদেশী অর্থায়ন সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ব্র্যাক তার উন্নয়ন কর্মকা-ে অর্থায়নের ব্যাপারে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে হাঁটছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ব্র্যাকের বার্ষিক বাজেট ১০০ কোটি ডলার। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ অর্থায়ন ব্র্যাক নিজেস্ব অর্থে করে থাকে। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ অর্থায়ন বিদেশী দাতাদের ওপর নির্ভরশীল। ব্র্যাক এই বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। আগামী ২০২১ সালনাগাদ ব্র্যাক তার বাজেটের ৯০ শতাংশ অর্থায়নই নিজস্ব অর্থায়ন থেকে করার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে।