ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে গাড়ি বানানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে গাড়ি বানানোর উদ্যোগ

রহিম শেখ ॥ সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে গাড়ি বানানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিদেশী কোম্পানির প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে দেশেই হবে গাড়ি কারখানা। দেশী কারখানায় বানানো গাড়ির দাম পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে এসব তথ্য জানা যায়। বাংলাদেশে রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবহার কমালে দেশেই গাড়ি উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করছেন বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, গাড়ি তৈরিতে ভারত সহায়তা করতে প্রস্তুত। এ লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো রাজধানীতে শুরু হচ্ছে ইন্দো-বাংলা অটোমোটিভ শো। রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে এ মেলা চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো এক চিঠিতে দেশে গাড়ি কারখানা স্থাপনের বিষয়ে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান ও তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়কে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকার নির্দেশনাও ওই পত্রে দেয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ইস্পাত এ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পাশাপাশি সম্পূর্ণ নতুনভাবে এ গাড়ি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। সরকারী তত্ত্বাবধানে মূলত বেসরকারী খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিদেশী উদ্যোক্তাদের যৌথ বিনিয়োগে এ ধরনের কারখানা গড়ে তোলা হবে। গাড়ি উৎপাদনে বিদেশী বিনিয়োগকারী নির্বাচনে এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে একাধিক বাণিজ্য প্রতিনিধিদল চীন, ইরান, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া সফরে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় জিলি, ইরানের সাইপা, মালয়েশিয়ার প্রোটন সাগা, ভারতের টাটা, জাপানের হোন্ডা কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের গাড়ি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ব্যবসায়ীদের আলোচনা হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি এবং দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে গাড়ি বাজারজাত করার ব্যাপারে ভেবেছেন এবং আমাদেরও ওই মতে নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের মধ্যে কারখানা নির্মাণ করে গাড়ি বানাতে তিনি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। এর পরই বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এ পর্যন্ত পাঁচটি দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক বড় মাপের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দেশে গাড়ি বানানোর ব্যবসায়ে আসতে আগ্রহী। এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে বিদেশী গাড়ি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে প্রধানমন্ত্রী গাড়ির দাম পাঁচ লাখ টাকার বেশি নির্ধারণ না করতে পরামর্শ দিয়েছেন। দামের বিষয়টি মাথায় রেখেই আলোচনা চলছে। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক গাড়ির ৯০ শতাংশ ভারতীয় কোম্পানির দখলে। তবে প্রাইভেট কারের ৯০ শতাংশ এখনও জাপানী কোম্পানির দখলে রয়েছে। ৩০ বছরেও ভারত এখানে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তিনি বলেন, আমাদের ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। দেশের প্রতি ভালবাসা তৈরি করতে হবে। তাহলে আমদের দেশে গাড়ি উৎপাদন ও ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এদিকে আজ থেকে শুরু হচ্ছে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে তিন দিনব্যাপী ইন্দো-বাংলা অটোমোটিভ শো। চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলা উদ্বোধন করবেন সেতু ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আয়োজক সোসাইটি অব অটোমোবাইল মেনুফ্যাকচারার্স (এসআইএম)। এই মেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। মেলার জন্য নিটল-নিলয় গ্রুপের পক্ষ থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য ফ্রি গাড়ি সার্ভিস দেয়া হবে। এই মেলায় থাকবে কুপনের ব্যবস্থা। কুপন বিজয়ী প্রথম জন পাবেন একটি প্রাইভেট গাড়ি, দ্বিতীয় বিজয়ী পাবেন মোটর সাইকেল। আয়োজকরা জানিয়েছেন, মেলায় ভারত ও বাংলাদেশের নানা রকক খাবার থাকবে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছে অশোক লেল্যান্ড, বাজাজ অটো, আইশার ট্রাকস এ্যান্ড বাসেস, হিরো মোটরস, হোন্ডা মোটরসাইকেল, মাহিন্দ্রা এ্যান্ড মাহিন্দ্রা, মারুতি সুজুকি, পিয়াজিও, রেনো, রানার অটোমোবাইলস, এস এম এল ইসুজু, টাটা মোটরস, টিভিএস মোটরস ও ইয়ামাহা। এ ছাড়া তাদের বাংলাদেশের সহযোগী হিসেবে থাকছে এসিআই মোটরস, আফতাব অটোমোবাইলস, বাংলাদেশ হোন্ডা, ইফাদ অটোস, কর্ণফুলী, নিলয় মোটরস, নিটল মোটরস, র‌্যানকন মোটরস, র‌্যাংগস মোটরস, রানার মোটরস, টিভিএস অটো বাংলাদেশ ও উত্তরা মোটরস। আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে ভারতের ভারি শিল্প ও পাবলিক এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রণালয়, ভারতের হাইকমিশন, অটোমোটিভ কম্পোনেন্ট মেনুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (এসিএমএ), ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই), দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ অটোমোবাইল এ্যাসেম্বলার্স এ্যান্ড মেনুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএএএমএ), বাংলাদেশ মোটরসাইকেল এ্যাসেম্বলার্স এ্যান্ড মেনুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএএমএ)। প্রদর্শনী ছাড়াও কিছু কর্মশালা ও সেমিনার থাকবে আয়োজনে, যেখানে ভারতীয় শিল্প ও সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িসংক্রান্ত একটি নির্দিষ্ট নিয়মনীতি এবং অটো পলিসি তৈরি করতে তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত দিয়ে গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলোকে সাহায্য করবেন। প্রদর্শনী সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একই সঙ্গে রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস দেয়া হবে।
×