ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই দলের আপোসরফার সম্ভাবনা স্তিমিত

ডেমোক্র্যাটদের লড়াইয়ের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ডেমোক্র্যাটদের লড়াইয়ের প্রস্তুতি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া মনোভাব নিয়ে হোয়াইট হাউসে দায়িত্বগ্রহণ ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে এক লড়াই উস্কে দিচ্ছে এবং নিজ রিপাবলিকান দলীয় সদস্যদের মনেও অস্বস্তির সৃষ্টি করছে। এতে দুই দলের মধ্যে আপোসরফার সুযোগ স্তিমিত হয়ে পড়ছে এবং তিনি তার পদে থাকাকালে যা করাতে পারবেন, তার আওতা সীমিত হয়ে পড়তে পারে। ডেমোক্র্যাটরা কোন বিষয়েই নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহযোগিতা না করতে তাদের তৃণমূল কর্মীদের চাপের মুখে রয়েছেন। মঙ্গলবার সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা কেবিনেট সদস্যদের মনোনয়ন অনুমোদন প্রশ্নে কমিটির ভোটাভুটি বর্জন করেন এবং এ্যাটর্নি জেনারেল পদে ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থীর অনুমোদন প্রশ্নে কমিটিতে ভোটগ্রহণ অন্তত এক দিনের জন্য বিলম্বিত করেন। এখন ওয়াশিংটনে সবচেয়ে কঠিন এক রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে। মার্কিন সুপ্রীমকোর্টের এক বিচারপতি নিয়োগ অনুমোদন প্রশ্নেই সেই লড়াই দেখা দেবে। এ পদে ট্রাম্পের মনোনীত নেইল গরসাচ আজীবনের জন্য নিযুক্ত হবেন এবং তিনি অভিবাসন, কর, গর্ভপাত, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মৃত্যুদ- ও ধর্মীয় স্বাধীনতার মতো বিভেদমূলক ইস্যু নিয়ে রুলিং দানে অংশগ্রহণ করবেন। সিনেটে তার মনোনয়ন অনুমোদন করতে হোয়াইট হাউস কঠিন লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন কোন ডেমোক্র্যাট ওই মনোনয়ন আটকে দেয়ার সংকল্প ব্যক্ত করছেন। এর আগে রিপাবলিকানরা সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি পদে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মনোনীত প্রার্থী মেরিক গারল্যান্ডের অনুমোদন রুখতে গত বছরের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছিলেন। এ অবস্থায় ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে অর্জন করা যেতে পারে না এমন সব লক্ষ্য অর্জনে অবিলম্বেই বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট তার কেবিনেট সদস্যপদে মনোনীতদের বেশিরভাগের পক্ষেই সিনেটের অনুমোদন লাভের প্রত্যাশা করছেন। সিনেট সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থীর নাম অনুমোদন করবে বলে রিপাবলিকানরা আস্থা ব্যক্ত করেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা আপত্তিকর বলে দেখতে পান এমন সব বিলের পাস হওয়া বিলম্বিত ও ক্ষেত্রবিশেষে আটকে দিতে পারেন। সিনেটে রিপাবলিকানদের ৫২টি আসন রয়েছে এবং অধিকাংশ বিল পাস হতে হলে ৬০ ভোটের প্রয়োজন হয়। ডেমোক্র্যাটদের সহানুভূতি হারালে রিপাবলিকানদের আইন তৈরির অধিকাংশ চেষ্টাই ব্যর্থ হবে। এর মধ্যে এ্যাফোর্ডেবল কেয়ার এ্যাক্টের স্থলে নতুন আইন তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে। ইতোপূর্বে রিপাবলিকানরা বাজেট প্রসঙ্গে দলীয় ভিত্তিতে ভোট দিয়ে ওই এ্যাক্টটি রদ করেন। সিনেটে রিপাবলিকানদের আইন তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে কিছুসংখ্যক ডেমোক্র্যাটকে বুঝিয়ে রাজি করানোর প্রয়োজন হবে। অথবা তাদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিল পাস হতে দিতে কক্ষের নিয়ম কানুন পরিবর্তন করার অসাধারণ পদক্ষেপ নিতে হবে। উভয়পক্ষের নেতারা ভোটের নিয়ম বদলানোর চেষ্টা প্রতিহত করেছেন। কারণ সিনেট ঘনঘন কখনও রিপাবলিকান কখনও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিয়ন্ত্রণে পড়ে থাকে। প্রতিনিধি পরিষদের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। দ্বিপক্ষীয় সমাধান চাওয়ার এক দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যও সিনেটের রয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সিন স্পাইসার ট্রাম্পের দায়িত্ব পালনের প্রথম সপ্তাহগুলো বিভেদমূলক ছিল এমন অভিমত প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্প সেই সময়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, ট্রেড ইউনিয়ন সদস্য ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করেন। স্পাইসার মঙ্গলবার বলেন, প্রেসিডেন্ট তার কথায় ও কাজে অনেক কিছু করেছেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা, তিনি এ দেশকে একত্র করতে শুরু করেছেন। আর খোলাখুলি বলতে গেলে, তার নীতির লক্ষ্য প্রতিটি আমেরিকানকে নিরাপদ রাখা। ওয়াশিংটন থেকে দূরে ট্রাম্পের হঠকারী ধরনের শাসন অনেক রিপাবলিকানকে বিস্মিত করেছে, এমন কি যদিও তিনি তার প্রচার অভিযানকালে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাই করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সুসম্পর্কের অভাবের জন্য ট্রাম্পেরও কিছু দায় রয়েছে। তিনি অভিবাসনসহ কয়েকটি বিতর্কিত ইস্যুতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। এতে তার অনুসারীরা খুশি হন, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা অসন্তষ্ট হন। আর তিনি তার বিরোধীদের ‘ভাঁড়’ বলে গালি দিতে পর্যন্ত তার টুইটার প্রোগ্রামকে কাজ লাগান। এটি এক অবকাঠামো বিলের মতো ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে ডেমোক্র্যাটদের আশাকে জটিল করে তুলেছে। তিনি লিবারেল কর্মী ও ডেমোক্র্যাটিক সমর্থকদেরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছেন। তারা তার নীতির প্রতিবাদ জানাতে দেশ জুড়ে রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর ও স্কয়ারগুলোতে নেমে এসেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও একজন ডেমোক্র্যাট বারাক ওবামা চলতি সপ্তাহে বিক্ষোভ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেন। তিনি প্রতিবাদ দেখে আশান্বিত হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেন। হোয়াইট হাউস ত্যাগের পর এটিই তার প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্য। ট্রাম্পকে পদে পদে প্রতিহত করতে ডেমোক্র্যাটিক কর্মীরা তাদের সমর্থকদের কাজে লাগাচ্ছেন। -ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
×