ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বইপ্রেমীদের মধুমাস;###;প্রিন্স হেনরী স্লাল

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বই পড়া ও বইমেলা

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বই পড়া ও বইমেলা

অবসর সময় থেকে শুরু করে, সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, ধনে-দারিদ্র্যে, সর্বোপরি সর্বসময়ে মানুষের প্রকৃত ও বিশ্বস্ত বন্ধু হলো বই। বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অসীম রহস্য। একটি উৎকৃষ্ট বই একজন মানুষকে অধ্যবসায়ী, নম্র, চিন্তাশীল, দূরদর্শীসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ও আলোকিত করতে পারে, চিন্তা-চেতনায় নিয়ে আসতে পারে অভাবনীয় বিপ্লব। দেহের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য ঠিক রাখতে মানুষের যেমন দৈহিক খাদ্য প্রয়োজন, তেমনি মনের খোরাক মেটাতে ও স্বাস্থ্য-সৌষ্ঠব বজায় রাখতে প্রয়োজন ভাল পুস্তক পাঠ। আর প্রতি বছরের ন্যায় নতুন বইয়ের সম্ভার নিয়ে আবারও এসেছে একুশে বইমেলা। নিত্যনতুন বইয়ের ভালবাসার টানে বইপ্রেমী মানুষদের পদভারে মুখর হয়ে উঠবে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ। এ যেন প্রাণের মেলা, জ্ঞানের মেলা, জীবনের মেলা, সুর ও নতুন ছন্দের মেলা, এক কথায় বলা যায় : বইপ্রেমীদের মধুমাস হয়ে উঠবে এই একুশে বইমেলা। বইমেলা নতুন বই নিয়ে হাজির হলেও বর্তমানে দিন দিন বই পড়ার অভ্যাস অনেকের মধ্যে হ্রাস পাচ্ছে। বই পড়ে শিক্ষার মধ্যে মানুষ আর খুঁজে পায় না আনন্দ। বরং আধুনিকতার বদৌলতে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় সবাই শুধু ই-বুকের দিকে ক্রমাগত ঝুঁকছে বেশি। ইন্টারনেটে বইয়ের সংক্ষিপ্তসার ‘বুক রিভিউ’ খুঁজে পড়তে ইচ্ছুক অনেকে। অন্যদিকে, ছাত্রছাত্রীরাও অবসর সময়গুলোতে বই পড়ার পরিবর্তে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, মুঠোফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো, টুইটার, ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ ইত্যাদিতে অত্যধিক সময় ব্যয় করে থাকে। ফলে তাদের শিক্ষা জীবনে পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব। গতানুগতিকভাবে শুধু তারা পড়াশোনা করে যাচ্ছে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কর্মক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে, জীবনের জন্য শিখছে কম। পাঠ্য বই ব্যতিরেকে ভাল লেখকদের সৃজনশীল লেখা কোন বই খুব একটা তারা পড়ছে না। তাদের বাড়ির কাজ, ক্লাস উপস্থাপনা ও গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরীর যথোপোযুক্ত ব্যবহার না করে তারা ইন্টারনেট থেকে অন্ধের মতো কপি-পেস্ট করে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনে বেশ আগ্রহী। শিক্ষকগণও এর দায় এড়াতে পারেন না। তাঁদের মধ্যেও নিয়মিত নতুন বই পড়ে নিজেকে হালনাগাদ করার অভ্যাস রীতিমতো কমতির পথে। এমনও শোনা যায়, শিক্ষকগণও ইন্টারনেট থেকে কপি-পেস্টের মাধ্যমে তাঁদের ক্লাস নোট তৈরি করে থাকেন। আবার, একাডেমিক শিক্ষা শেষ হলে বহুজনের জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় বই পড়ার অভ্যাস। তাই প্রতি বছরই অনেক ডিগ্রীধারী ব্যক্তিত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটছে বটে, তথাপি সত্যিকারের আলোকিত, প্রজ্ঞাবান ও সমাজভাবুক মানুষ সৃষ্টি হচ্ছে কি না সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। প্রত্যেকেরই উপযুক্ত পুস্তক পাঠ আবশ্যক। জ্ঞানভিত্তিক সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে হলে পুস্তক পাঠের কোন বিকল্প নেই। এই চেতনা সর্বাগ্রে জাগাতে হবে শিশুদের মনে। তাদেরকে শুধুমাত্র কম্পিউটারে গেমস খেলায় উৎসাহিত না করে উপযুক্ত ও গঠনমূলক শিশুতোষ পুস্তক পাঠে আগ্রহী করা বাঞ্ছনীয়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বই পড়ার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীদের মনে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। এছাড়া, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফরের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে বইমেলাকে। যেন এই বইমেলা হয়ে ওঠে সকলেরই প্রাণকেন্দ্র। ঘোষগাঁও, ময়মনসিংহ থেকে
×