ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

থামাও মর্মঘাতী বিনাশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

থামাও মর্মঘাতী বিনাশ

মানুষ মানুষকে হত্যা করে ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, গোত্রের নামে। কিন্তু কেন এই হত্যা, কেন নারকীয়তা, তার জবাব মেলে না সহজে। কানাডার মতো নিরাপদ ও উন্নত দেশে মসজিদে ঢুকে গুলি চালিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ হত্যা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করেছে। উপাসনালয়ে হিংস্রতার আগুন প্রজ্বালনকারীরা মানবতার যেমন শত্রু, তেমনি শান্তি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতিরও শত্রু। শুধু নিন্দা-মন্দ জানিয়ে এদের নিবৃত্ত বা নির্মূল করা যাবে বলে মনে হয় না। হিংসার বাতাবরণে দাঁড়িয়ে মানুষের শত্রুরা ধ্বংস করতে চায় মানবিকতাকে। এ ভয়ঙ্কর দানবদের হাত থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে মুক্তপ্রাণ মানুষকে পরিকল্পনা নেয়ার সময় এখন। নতুবা এই হিংস্রতার বিষবাষ্প সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে। দুটি বর্বরোচিত ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা অজানা। কেন এসব হামলা ও হত্যা, তার কারণ এই মুহূর্তে স্পষ্ট না হলেও ক্রমশ তা প্রকাশ হবেই। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ছোট শহর ভিক্টোরিয়ার অধিবাসী মুসলমানদের একমাত্র প্রার্থনাস্থল ‘ভিক্টোরিয়া ইসলামিক সেন্টার’ নামের মসজিদটি রাতের বেলা পুড়িয়ে দেয়া হয়। সাত বছর আগেও এই মসজিদটি একবার হামলার শিকার হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকের ওপর গত শুক্রবার জারি করা নিষেধাজ্ঞার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শনিবার দুর্বৃত্তরা এই মসজিদটি পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার ক্ষত দগদগে থাকা অবস্থায় রবিবার কানাডার কুইবেক সিটি মসজিদে গুলিবর্ষণের মতো বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে। এশার নামাজে জড়ো হওয়া চল্লিশজন মুসল্লির ওপর তিনজন দুর্বৃত্ত গুলি চালালে ঘটনাস্থলে ছয়জন নিহত ও আটজন আহত হয়েছে। ওই ঘটনায় তিনজন জড়িত বলে পুলিশের ধারণা। তারা দু’জনকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। এদের একজন মরক্কো বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ গাছিরকে ঘটনাস্থল থেকে এবং আলেক্সান্ডার নামে অপরজন আত্মসমর্পণ করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোন তথ্য পুলিশ দিচ্ছে না তদন্তের স্বার্থে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না পারা শরণার্থীদের কানাডায় আশ্রয় দেয়ার জন্য ট্রুডোর ঘোষণা প্রদানের একদিনের মাথায় হামলার শিকার হলো কুইবেকের মসজিদটি। কানাডা এমন একটি দেশ যেখানে নানা ধর্মের, বর্ণের ও গোত্রের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে। এর আগে বিচ্ছিন্ন দু’-একটি ঘটনা ঘটলেও হতাহতের এমন কোন ঘটনা ঘটেনি, যেখানে ধর্মীয় বিদ্বেষ ফুটে ওঠে। কানাডাজুড়ে সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির যে নিদর্শন দীর্ঘদিনের, তা দেশটির মানুষকে গৌরবান্বিত করেছে। মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই কানাডার বড় শক্তি। কেন এই হামলা, তার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নির্দেশ এবং কানাডার অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর পর এই হামলা এসবেরই প্রতিক্রিয়া কিনা, তা স্পষ্ট নয়। কল্যাণকামী রাষ্ট্র কানাডা নাগরিকদের নিরাপত্তায় সব সময় সচেষ্ট। তাই বর্বরোচিত ও ন্যক্কারজনক হামলার রহস্য উন্মোচনে সে দেশের প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নেবেই। টেক্সাসের মসজিদটি পুনরায় নির্মাণে একদিনেই ছয় লাখ ডলার সংগ্রহ হয়েছে। তবে ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। হিংসা, প্রতিহিংসা, হিংস্রতার লাগাম শক্ত ও দৃঢ় হাতে টেনে ধরা জরুরী। নতুবা এর ভাইরাস ডালপালা ছড়াবে বিশ্বজুড়ে। সুতরাং এই অবস্থান থেকে প্রয়োজন যথাযথ উদ্ধার এবং হিংসামুক্ত বিশ্ব গঠন করা। থামাতে হবে এই মর্মঘাতী বিনাশ। জাগাতে হবে মানবিক চেতনা।
×