ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ ফজলুর রহিম রিমন

এস.এস.সি পরীক্ষা-২০১৭ ॥ পরীক্ষার দিনে প্রস্তুতি- বিশেষ আলোচনা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এস.এস.সি পরীক্ষা-২০১৭ ॥ পরীক্ষার দিনে প্রস্তুতি- বিশেষ আলোচনা

প্রভাষক হিসাববিজ্ঞান হলিফ্লাওয়ার মডেল কলেজ ঝিগাতলা, ঢাকা। ই-মেইল: [email protected] মোবাইল: ০১৬৮০৫৫১৬৫৪ শিক্ষার্থী বন্ধুরা শুভেচ্ছা রইল, কেমন চলছে তোমাদের শেষ সময়ের প্রস্তুতি। দেখতে দেখতে আজ তোমরা এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। আর এই পরীক্ষা নিয়ে তোমাদের মধ্যে নিশ্চই চলছে নানান ধরনের চিন্তাভাবনা। কারো কারো মনে একটু একটু ভয়ও জাগতে পারে । সত্যিকারঅর্থে ভয়ের কোন কারন নেই। পরীক্ষার পূর্বে ও পরীক্ষার হলে করনীয় কিছু বিষয় তোমাদের জন্য আমার এই লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করলাম। ইতোমধ্যে তোমরা যে সকল পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছ অর্থাৎ (চ.ঊ.ঈ ও ঔ.ঝ.ঈ) পরীক্ষা তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হলো এস.এস.সি পরীক্ষা। এস.এস.সি পরীক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ বলার কারন হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়/ বুয়েট/ মেডিকেলে তোমার ভর্তি হওয়া বিষয়টি এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। বিগত দুইটি বছর ধরে যা কিছু শিখেছ তাই তোমাদেরকে উপস্থাপন করতে হবে প্রতিটি বিষয়ের জন্য বরাদ্দকৃত তিন ঘন্টা সময়ের মধ্যে। তাই এই তিন ঘন্টা সময় কিভাবে পরীক্ষার হলে ব্যবহার করবে তা পূর্ব থেকেই ঠিক করে নিবে। ইংরেজী বাদে প্রতিটি বিষয়ের জন্য রয়েছে দুইটি অংশ, সৃজনশীল অংশ ও এম.সি.কিউ অংশ। এম.সি.কিউ অংশের পরীক্ষা প্রথমে অনুষ্ঠিত হয়। আর এর জন্য বরাদ্দ থাকে ৩০ মিনিট (বিজ্ঞান বিভাগের গ্রুপ বিষয়ে ৩০ মিনিটের কম সময় বরাদ্দ থাকবে)। এই অংশের উত্তর দেওয়ার জন্য তোমাদের যে ঙ.গ.জ শীট দেওয়া হবে তা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কালো কালির বল পেন কলম দিয়ে বৃত্তগুলো ভরাট করবে। যে উত্তর গুলো তুমি মনে কর শতভাগ সঠিক প্রথমে সেগুলো ভরাট করবে। অবশ্যই সবগুলো এম.সি.কিউ এর উত্তর ভরাট করে আসবে। একই প্রশ্নের একাধিক বৃত্ত ভরাট করবেনা। তাহলে ঐ উত্তরটি বাতিল বলে গন্য হবে। সৃজনশীল অংশে শেষের ১০ মিনিট রিভিশনের জন্য রেখে বাকি সময়টুকু তোমার পরীক্ষার বিষয়ের উপর নির্ভর করে ভাগ করে নিবে। যেমন, যে সকল বিষয়ের পরীক্ষা ১০০ নম্বরের উপর অনুষ্ঠিত হবে সে সকল বিষয়ে তোমরা নিচের প্রদত্ত মান বন্টনটি অনুসরন করতে পারঃ পরীক্ষায় মোট তিন ঘন্টা সময় বরাদ্দ থাকবে। ৩ ঘন্টা বা ১৮০ মিনিট। প্রথম ৩০ মিনিট সময় পাবে গ.ঈ.ছ অংশের জন্য। বাকি থাকবে ১৫০ মিনিট। ৭ টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের জন্য সময় বরাদ্দ করবে (৭ গুন ১৯) বা ১৩৩ মিনিট। আর বাকি যে ১৭ মিনিট থাকবে তার মধ্যে ১০ মিনিট রাখবে রিভিশন করার জন্য। ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগবে অতিরিক্ত উত্তরপত্র নেওয়া, হলে দায়িত্বরত শিক্ষক কতৃক উত্তরপত্র স্বাক্ষর করানো, উপস্থিতি শিটে তোমার স্বাক্ষর করা, উত্তরপত্র সেলাই করা ইত্যাদি কাজ করার জন্য। সৃজনশীল অংশ উত্তর করার পূর্বে ভালো করে প্রশ্নপত্র পড়ে কোন কোন প্রশ্নের উত্তর দিবে তা ঠিক করে নিবে। তারপর যে সৃজনশীলটি তোমার কাছে সবচেয়ে সহজ মনে হবে সেটি সর্বপ্রথম উত্তর করবে। যখন যে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শুরু করবে সেই প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি শেষ না করে অন্য প্রশ্নে যাবেনা। অর্থাৎ যে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শুরু করবে, সেই সৃজনশীল প্রশ্নের (ক,খ,গ,ঘ) পুরোপুরি শেষ করে অন্য সৃজনশীলে যাবে। যে সকল বিষয়গুলো ৭৫ নাম্বারের উপর অনুষ্ঠিত হয়, যেমন পদার্থ, রসায়ন সে বিষয়গুলোর জন্যও তোমরা পূর্ব থেকে সময় ভাগ করে রাখবে। খেয়াল রাখবে কোন সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর বড় করতে গিয়ে যেন অন্য সৃজনশীলের উত্তর বাদ না পড়ে যায়। বড় করে উত্তর করার চেয়ে কিছুটা ছোট করে হলেও সকল সৃজনশীলের উত্তর করা উচিত। সৃজনশীল প্রশ্নে অপ্রয়োজনীয় আলোচনা না করাই শ্রেয়। সৃজনশীল অংশে (থিওরিটিক্যাল বিষয়ে যেমন বাংলা,ফিন্যান্স) ইত্যাদি বিষয়ে “ক” এর জন্য অর্থাৎ জ্ঞানমূলক অংশের জন্য এক থেকে দেড় লাইন লিখলে-ই চলবে। “ক” এর উত্তর শেষ করবে এক প্যারার মধ্যে। “খ” অংশের অর্থাৎ অনুধাবনমূলক অংশের উত্তর দুইটি প্যারা করে লিখবে। যার প্রথম প্যারা হবে জ্ঞান মূলক । “গ” অংশের অর্থাৎ প্রয়োগমূলক অংশের উত্তর তিনটি প্যারা করে লিখবে। যার প্রথম প্যারা হবে জ্ঞান মূলক। দ্বিতীয় প্যারা হবে অনুধাবন মূলক। তৃতীয় প্যারা হবে প্রয়োগ মূলক। “ঘ” অংশের অর্থাৎ উচ্চতর দক্ষতা মূলক অংশের উত্তর চারটি প্যারা করে লিখবে। যার প্রথম প্যারা হবে জ্ঞানমূলক। দ্বিতীয় প্যারা হবে অনুধাবনমূলক । তৃতীয় প্যারা হবে প্রয়োগমূলক। চতুর্থ প্যারা হবে উচ্চতর দক্ষতামূলক। পরীক্ষার পূর্বে করনীয়ঃ ১. পরীক্ষার একসপ্তাহ পূর্বে যে ধরনের কলম দিয়ে তুমি লিখে অভ্যস্ত, সে ধরনের এক ডজন কলম (কালো কালির ১০টি ও ২টি নীল কালির) কিনে ১৫%-২০% কালি লিখে শেষ করে রাখবে। কেননা পরীক্ষার হলে নতুন কলমে লিখতে তোমার সমস্যা হতে পারে। ২. তিনটি পেন্সিল , দুইটি রাবার, একটি সার্পনার, দুইটি স্কেল (একটি বড় ও একটি ছোট )কিনে রাখবে। প্রয়োজন অনুসারে ক্যালকুলেটর সংগ্রহ করে রাখবে। ৩. যেহেতু ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা সেহেতু ৩০ শে জানুয়ারীর মধ্যে অন্যান্য বিষয় রিভিশন দেওয়া শেষ করবে। ৩১শে জানুয়ারী হতে অথবা ১লা ফেব্রুয়ারী হতে বাংলা ১ম পত্র পড়া শুরু করবে। ৪.পরীক্ষার পূর্বের দিন যে কেন্দ্রে তোমার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সে কেন্দ্রের বাহিরে আসন বিন্যাস দেওয়া থাকবে। তাই সম্ভব হলে তোমার সিট কত নম্বর রুমে পড়েছে তা পূর্বের দিন জেনে রাখবে। এতে করে পরীক্ষার দিন তোমার পরীক্ষার রুম খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না। ৫.পরীক্ষার পূর্বের দিন অধিক রাত জেগে লেখা-পড়া করবেনা। রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে। ৬.ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বেই অফসরঃ ঈধৎফ, জবমরংঃৎধঃরড়হ ঈধৎফ, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরন (কলম, পেন্সিল, রাবার, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি) গুছিয়ে তোমার নির্ধারিত ফাইলে রেখে দিবে। পরীক্ষার দিন করনীয় ১. পরীক্ষার দিন ভোর ৬ টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে যাবে। এর পর ফ্রেশ হয়ে পরীক্ষার বিষয়টি আরেকবার রিভিশন করবে। ২. প্রতিনিয়ত যে ধরনের খাবার খেয়ে অভ্যস্থ সে ধরনের খাবার খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে। ৩. প্রথমদিন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা পূর্বে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাবে। ৪.দ্বিতীয় দিন হতে আধাঘন্টা পূর্বে পরীক্ষার কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। পরীক্ষার হলে করনীয় ১. পরীক্ষার হলে রোল নম্বর অনুসারে তোমার জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসবে। ২. দায়িত্বরত শিক্ষকগণ যখন তোমাকে ঙ.গ.জ ঝযববঃ বা খাতা দিবে তখন তুমি অবশ্যই অফসরঃ ঈধৎফ দেখে রোল নম্বর ,রেজিস্ট্রেশন নম্বর , বিষয়ের কোড নম্বর ইত্যাদি সাবধানতার সাথে কালো বল পয়েন্ট কলম দিয়ে বৃত্ত ভরাট করবে। ৩. যদি কোন বৃত্ত ভরাট করতে ভুল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কাটাকাটি না করে সঠিক বৃত্তটি ভরাট করে দিবে। খেয়াল রাখবে যেন ঙ.গ.জ ঝযববঃ বা খাতার কভার পেইজে যেন ভাঁজ না পড়ে। ৪. প্রয়োজন সাপেক্ষে উত্তরপত্র পেন্সিল দিয়ে মার্জিন করে নিবে। ৫. প্রশ্নের উত্তর করার সময় ভুল হলে, ভুল অংশটুকু একটানে কেটে ফেলবে, বেশি কাটাকাটি করবেনা। ৬. অতিরিক্ত উত্তরপত্র নিলে উত্তরপত্র জমা দেওয়ার পূর্বে কভার পেইজের নির্ধারিত স্থানে কয়টি অতিরিক্ত উত্তরপত্র নিয়েছ তা লিখে বৃত্ত ভরাট করে দিবে। ৭. পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিকক্ষগণের সাথে কোন রূপ অসদাচরন করবে না। ৮. মোবাইল ফোন, হেড ফোন বা অপ্রয়োজনীয় কোন ডিভাইস পরীক্ষার হলে নিয়ে আসবেনা। ৯. অবশ্যই নিজ নিজ বিদ্যালয় কতৃক নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিধান করে আসবে। ১০. উত্তরপত্র জমা দেওয়ার পূর্বে আরেকবার চেক করে দেখবে যে তুমি প্রয়োজনীয় সকল প্রশ্নের উত্তর করেছ কি না। ১১. সর্বশেষ পরীক্ষার হলের দায়িত্বরত শিক্ষক তোমার উত্তরপত্র জমা নিলে পরীক্ষার কক্ষ ত্যাগ করবে। সর্বোপরি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তোমাদের সু-স্বাস্থ্য ও কাঙ্খিত ফলাফল কামনা করছি।
×