ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহীয়ান দ্বীপ

রূপকথার রানী সেরেনা

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রূপকথার রানী সেরেনা

বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আরও একবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন সেরেনা উইলিয়ামস। শনিবার মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভেনাস উইলিয়ামসকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের ২৩তম মেজর শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। সেই সঙ্গে ছাড়িয়ে গেলেন টেনিসের উন্মুক্তযুগে সর্বোচ্চ ২২ গ্র্যান্ডসøামজয়ী জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফের রেকর্ডকেও। মহিলা এককে তার সামনে এখন কেবল মার্গারেট কোর্ট। টেনিসের সর্বকালের ইতিহাসে এই অস্ট্রেলিয়ান সবমিলিয়ে ২৪ গ্র্যান্ডসøাম জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন। গত বছর উইম্বলডন জিতেই স্টেফির রেকর্ড স্পর্শ করেন সেরেনা। এরপর আর টেনিস কোর্টে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। রাজত্ব শুরু করেন স্টেফিরই স্বদেশী এ্যাঞ্জেলিক কারবার। ইউএস ওপেন জিতে কৃষ্ণকলীর কাছ থেকে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও দখল করে নেন তিনি। অনেকেই ভেবেছিলেন এই বুঝি ফুরিয়ে গেলেন সেরেনা। কিন্তু দমে যাননি আমেরিকান তারকা। নতুন বছরের শুরুতেই নিজের জাত চেনালেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও ফিরে পান তিনি। সোমবার সর্বশেষ প্রকাশিত ডব্লিউটিএ র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী ৭,৭৮০ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে জায়গা করে নেন সেরেনা। আর টুর্নামেন্টের শুরুতেই বিদায় নেয়া কারবারকে চলে যেতে হয় দুইয়ে। নতুন বছর দারুণ শুরু করা চেকপ্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভারও উন্নতি ঘটেছে র‌্যাঙ্কিংয়ে। দুই ধাপ এগিয়ে তিনে উঠে এসেছেন তিনি। র‌্যাঙ্কিংয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে সেরেনার বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামসের। ফাইনালের টিকেট কাটায় এক লাফে ছয় ধাপ এগিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের এগারোতে উঠে এসেছেন তিনি। তবে র‌্যাঙ্কিং নয় এই মুহূর্তে আলোচনায় ওপেন যুগে সেরেনার সর্বোচ্চ ২৩ গ্র্যান্ডসøাম। আমেরিকান কিংবদন্তি স্টেফিকে ছাড়িয়ে যাবেন তা অনেকেই ভেবেছিলেন। কেননা অসাধারণ পারফর্মেন্স, দুর্দান্ত গতি আর শক্তির জন্য এই বয়সেও যে প্রতিপক্ষের আতঙ্কের নাম সেরেনা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পথে বেলিন্ডা বেনচিচ, লুসি সাফারোভা, নিকোল গিবস, বারবোরা স্ট্রাইকোভা, জোহানা কন্টা, মিরজার্না বারোনি এবং সর্বশেষ ভেনাস উইলিয়ামসকে হারান তিনি। ফাইনাল জিততে তার সময় লাগে মাত্র দেড় ঘণ্টা। ১৯৯৯ সালে ইউএস ওপেনে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন সেরেনা। তখন তার বয়স মাত্র ১৭। সেই যে শুরু এরপর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। উইম্বলডন এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সমান সাতবার করে চ্যাম্পিয়ন। ছয়বার শিরোপাটা উঁচিয়ে ধরেছেন ইউএস ওপেনে। বাকি তিনবার ফ্রেঞ্চ ওপেনের চ্যাম্পিয়ন সেরেনা। এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে ওপেন যুগে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডসøামের মালিক বনে যান তিনি। আমেরিকান তারকার সামনে এখন শুধুই মার্গারেট কোর্ট। সেরেনার সামনে তাই প্রশ্ন আর কটি গ্র্যান্ডসøাম জিতবেন? এমন প্রশ্নে বিরক্ত সেরেনা সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি খুব বেশি কিছু ভাবতে চাচ্ছি না। পরের গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের আগে আমি আপনাদের অনুরোধ করব যেন এমন প্রশ্ন আর আমাকে না করা হয়।’ শীর্ষস্থান ফিরে পাওয়ার পর ধরে রাখতে কেমন গুরুত্ব দেবেন? সেরেনার জবাব, ‘আমি জানি না। সত্যি করে বলছি আমি ধরেই নিয়েছিলাম র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নাম্বার ফিরে পাওয়ার জন্য আমার দুবাই যেতে হবে। এই টুর্নামেন্টের পরই যে তা ফিরে পাব তেমন কোন ধারণাই ছিল না আমার।’ ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন সেরেনা। দীর্ঘ ১৪ বছর পর টুর্নামেন্টের সপ্তম স্বর্গে উঠলেন আমেরিকান টেনিসের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। সেইসঙ্গে নিজের গড়া উইম্বলডনে সর্বোচ্চ সাত গ্র্যান্ডসøাম জয়ের রেকর্ডেই ভাগ বসালেন তিনি। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে এসে অসামান্য এই কীর্তি গড়া সেরেনাকে প্রথমে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভেনাস। সেরেনার চেয়ে ১৪ মাসের বড় ভেনাস ম্যাচ শেষে বুকে জড়িয়ে ধরে জানান, ‘তোমাকে অভিনন্দন।’ কৃতজ্ঞ সেরেনাও। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘ভেনাসকে ছাড়া কোনভাবেই এই সংখ্যাটাকে ২৩ করা সম্ভব ছিল না। তাকে ছাড়া আমার এই অবস্থানে আসাটাও ছিল অসম্ভব। শুধু তার জন্যই আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি। সেই আমার অনুপ্রেরণা। আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’ সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাত মেজর গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ভেনাস। যেখানেই গেছেন তার একইসঙ্গে ছিলেন। একত্রে অনুশীলন করে নিজেদের গড়ে তুলেছেন। সেরেনার চেয়ে বয়সে ভেনাস ১৪ মাসের বড় হলেও লড়াকু-মানসিকতায় দুজনেই সমানে সমান। ব্যর্থতায় ভেঙ্গে পড়তে নারাজ।
×