ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

‘বাংলাদেশের বেসবলের বেস সুদৃঢ় নয়’

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

‘বাংলাদেশের বেসবলের বেস সুদৃঢ় নয়’

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি হচ্ছে বেসবল। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাটি দক্ষিণ এশিয়াতেও বিস্তার লাভ করছে। বাংলাদেশে মাত্র বছর দশেক আগে খেলাটির চর্চা শুরু হয় বেসবল-সফটবল এ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে। তারপরও খেলাটি মাঠ এবং পৃষ্ঠপোষকের অভাবে সেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। বাংলাদেশের প্রথম বেসবল কোচ মোঃ বিন তালহা জুবায়ের অবশ্য মনে করেন এসব সমস্যা কাটিয়ে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বেসবল অনেকদূর এগিয়ে যাবে, বেসবলের ‘বেস’ সুদৃঢ় হবে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পাবে এবং অন্যান্য দেশের বেসবলারদের মতো বাংলাদেশের বেসবলাররাও প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বাংলাদেশ জাতীয় বেসবল দলের হেড কোচ জাপানের হিরোকি ওয়াতানাভে। তবে তিনি পূর্ণকালীন নন। তার অবর্তমানে দলকে কোচিং করান জুবায়ের, যিনি দলের সহকারী কোচ। বিস্ময়কর ব্যাপারÑ তার বয়স মাত্র ২৫। যে বয়সে খেলার কথা, সে বয়সে কোচিং কেন? ‘একসময় বেসবল খেলেছি। ভাল ব্যাটার ফার্স্ট বেস ফিল্ডার ছিলাম। এছাড়া রাগবিতেও কোচিং কোর্স করেছি। বিজেএমসি এবং ঢাকা জেলার হয়ে বক্সিংও খেলেছি। সৈয়দ মহিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন আমার বক্সিং কোচ। তিনিই একদিন জানান বাংলাদেশে বেসবল খেলা শুরু হয়েছে। তার উৎসাহেই এ খেলায় সম্পৃক্ত হই। তিনি আমাকে একটা কাঠের ব্যাট দেন। সেটা নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করি। পরে পল্টন মাঠে টেনিস বলে অনুশীলন করতে থাকি। খেলাটির প্রতি ভালবাসা জন্মায়। ফেসবুকে বেসবলের একটি পেজ খুলি। এই পেজে সম্পৃক্ত হন কানাডা প্রবাসী সিলেটের রাফ চৌধুরী। উনি টরন্টোতে একটি বেসবেল একাডেমি চালান। তিনি আমাকে বেসবলের নিয়ম-কানুন বোঝাতে প্রচুর ভিডিও পাঠিয়ে আমাকে সাহায্য ও উৎসাহিত করেন। আমি নিজেও ইউটিউব থেকে অনেক ভিডিও দেখে খেলাটি শিখেছি। এটা একটা স্মার্ট গেম।’ বেসবল খেলে বিশ্বের অনেক খেলোয়াড়ই ঈর্ষণীয় অঙ্কের অর্থ আয় করেন। এশিয়ার কথাই ধরা যাক। জাপানের এক বেসবলার বছরে আয় করেন বিশ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা কতটা ও কবে বাস্তবায়ন সম্ভব? ‘জুবায়েরের উত্তর, ‘অবশ্যই সম্ভব। ক্রিকেটের চেয়ে বেসবলের খরচ কম। মাঠ ও স্পন্সরের সমস্যা না থাকলে এবং সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে একদিন আমাদের খেলোয়াড়রা নিশ্চয়ই এর কাছাকাছি হলেও আয় করতে পারবে।’ ফেসবুকে জুবায়েরের এই কার্যক্রম দেখে বেসবল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লিটন তাকে একপ্রকার হুমকিই দেন, বাংলাদেশে বেসবল সংস্থার কার্যক্রম থাকতে বেসবল নিয়ে কাজ করছো, তুমি কে হে। মজার ব্যাপারÑ লিটনের সঙ্গে সেই সূত্রে আলাপ, পরিচয় এবং এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত হয়ে যান জুবায়ের। সেটা ২০০৯ সালের ঘটনা। জাতীয় দলের সহকারী কোচ হন ২০১৫ সালে। শুরুর দিকে জাপানিজ কোচের অধীনে অনুশীলন করতেন জুবায়ের। কোচ চলে গেলে জুবায়ের উপলব্ধি করেন তিনি যেহেতু খেলাটি ভালই বোঝেন, সেক্ষেত্রে তিনি খেলোয়াড়কে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটা চালিয়ে নিতে পারবেন। সেই থেকে শুরু। বেসবলের ওপর কোচিং কোর্সও করেছেন। এটা করতে করতে একসময় আবিষ্কার করলেন, তার খেলোয়াড়ী-সত্তা হারিয়ে গিয়ে ছাপিয়ে ওঠেছে বেসবল কোচ-সত্তাই। ‘আসলে নিজে খেলার চেয়ে খেলোয়াড় তৈরির কাজটাই বেশি উপভোগ করি। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশে বেসবল খেলাটাকে প্রতিষ্ঠিত করাতে সাহায্য করা। এজন্য বিদেশে গিয়ে কোচিংয়ে উচ্চতর কোর্স করতে চাই।’ জুবায়েরের ভাষ্য। বেসবল এ্যাসোসিয়েশনের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জুবায়ের আভাস দেন, ‘আমাদের এ্যাসোসিয়েশন আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে সিরাজগঞ্জে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম করবে। আমাদের লক্ষ্য কমপক্ষে ১০ হাজার দক্ষ-মেধাবী ছেলে সংগ্রহ করা। আমি আশাবাদীÑ এদের ঠিকমতো দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দিলে বাংলাদেশের বেসবলের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। আগামীতে মহিলা প্লেয়ার সংগ্রহ করে এদের নিয়ে একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করব। এছাড়া আগামী এপ্রিল-মেতে শ্রীলঙ্কায় তিনজাতির একটি আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট খেলব। এর আগে অবশ্য আরেকটি টুর্নামেন্টে পাকিস্তান আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু দল প্রস্তুত না থাকায় যাওয়া হয়নি।’
×