ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায়ের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে মহেন্দ্র সিং ধোনির!

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিদায়ের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে মহেন্দ্র সিং ধোনির!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত বছর মুম্বাইয়ে টি২০ বিশ্বকাপের সেমিতে হারের পর অস্ট্রেলীয় এক সাংবাদিক তাকে অবসর নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। ওই সাংবাদিককে মঞ্চে ডেকে রসিকতা করে ধোনি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার কি মনে হয় আমি আনফিট? আমি কি ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ফিট থাকতে পারব না?’ গোটা বিশ্ব মিডিয়ায় ধোনির সেই ঘটনা হেডলাইন হয়েছিল, কোথাও নিন্দা, কোথাও প্রশংসা। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন বিশ্বকাপ না হোক, অন্তত চলতি বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত অধিনায়ক থাকছেন ধোনি। কিন্তু আচমকাই সেই ভাবনায় জল ঢেলে দিলেন ভারতের দু’দুটি বিশ্বকাপ জয়ী সেনাপতি। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড সিরিজের আগে হুট করেই রঙিন পোশাকের নেতৃত্ব ছাড়লেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’। ২০১৪’র ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরের মধ্যপথে যেমন করে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। কে জানে হয়ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় জানাবেন আধুনিক ভারতের প্রভাবশালী ক্রিকেটার। ‘মুহূর্তের মধ্যে যে কেউ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এটা অবশ্যই ভালভাবে চিন্তা করেই নেয়া। ধোনি ভাবছেন এটাই উপযুক্ত সময় সরে যাওয়ার এবং শুধু উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে যাওয়ার। তিনি এমন কেউ না যে একটা দায়িত্ব ধরে রাখবেন, উল্টো তার এক্ষেত্রে ধারণা অন্য কাউকে সেটা বুঝিয়ে দেয়ার সময় হয়ে গেছে। তার কাছে দলের ভাল কিছু চাওয়াটাই সবচেয়ে বড় ও প্রথম চিন্তা। সে বিবেচনাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।’ বলেন ধোনির ম্যানেজার অরুণ পা-ে। ২০০৭ সালে টি২০ দিয়ে শুরু, এরপর পর্যায়ক্রমে তিন ফরমেটের অধিনায়ক হন ধোনি। তখন থেকে তার নেতৃত্বে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে দল। সঙ্কটময় মুহূর্তগুলোতে দারুণ বিচক্ষণতা, স্থিরতা এবং ঠা-া মাথায় কার্যকর সব সিদ্ধান্তের জন্য ক্রিকেটবিশ্বে অলিখিত ‘ক্যাপ্টেন কুল’ স্বীকৃতি পান। তার অধীনে ১৯৯ ওয়ানডেতে ১১০টিই জিতেছে ভারত, ৭২ টি২০ ম্যাচে জিতেছে ৪১টি। সবমিলিয়ে উইকেটরক্ষক অধিনায়ক হিসেবে তিনি সর্বাধিক ২৭১ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন ধোনি। উইকেটরক্ষক অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ৫৩.৯২ গড়ে করেছেন ৬৬৩৩ রান। তার পরে আছেন শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ১৭৫৬ রান করে। আর গড়ের দিক থেকে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স এগিয়ে ৬৫.৯২ গড় নিয়ে। টি২০ ক্রিকেটে একমাত্র উইকেটরক্ষক অধিনায়ক হিসেবে তিনি ১০০০ রান করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তিনি ১২২.৬০ স্ট্রাইকরেটে ১১১২ রান করেন। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে ৪০.৬৩ গড়ে করেছেন ৩৪৫৪ রান। আর কোন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সীমিত ওভারে ১০০ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেননি। ৬৭ ম্যাচে সেটা করে দ্বিতীয় স্থানে সাঙ্গাকারা। ক্রিকেট ইতিহাসে ধোনিই একমাত্র অধিনায়ক যিনি তিন ধরনের আইসিসি টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতিয়েছেন দলকে নেতৃত্ব দিয়ে। তার অধীনে ভারতীয় দল ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয় করেছিল। টেস্টের অধিনায়ক হিসেবেও দারুণ সফল ছিলেন ধোনি। তার অধীনে ভারত টেস্টে ২৭ জয়, ১৮ পরাজয় ও ১৫ ড্র দেখেছে। তিনিই একমাত্র ভারতীয় অধিনায়ক যার অধীনে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এমন সফলতার মধ্যে থাকা অবস্থায়ই নেতত্ব ছেড়ে দিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিলেন ধোনি। এ বিষয়ে বিসিসিআই প্রধান নির্বাহী রাহুল জোহরি বলেন, ‘সব ফরমেটে এমএস ধোনির অধিনায়ক হিসেবে ভারতের পক্ষে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিসিসিআই ও ক্রিকেট ভক্তদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। তার নেতৃত্বাধীনে ভারতীয় ক্রিকেট নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছে।’ ধোনির আগে অধিনায়কত্ব ছেড়েও দলের অপরিহার্য ক্রিকেটার হিসেবে দীর্ঘদিন টিকে থাকার নজির সৃষ্টি করেছেন আরও ৫ ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক, ইংল্যান্ডের নাসের হুসেন, ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী ও পাকিস্তানের ইউনুস খান। অনুমিতভাবেই বিরাট কোহলি তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তিনি এখন ক্রিকেট পাগল দেশটির তিন ফরমেটের অধিনায়ক। এর মধ্য দিয়ে পুরোপুরি কোহলিযুগে প্রবেশ করল ভারতীয় ক্রিকেট। উচ্ছ্বসিত সুপার উইলোবাজ এ নিয়ে বলতে গিয়ে প্রতিবারই ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। জানিয়েছেন, ধোনি চিরকাল তার অধিনায়ক হয়েই থাকবেন। ‘মাহিভাই (ধোনি) চিরকালই আমার অধিনায়ক থাকবে। তার নেতৃত্বেই আমি ভারতের হয়ে খেলা শুরু করি। ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার সময় সে আমাকে যথেষ্ট সময় ও সুযোগ দিয়েছে। এমনকি অনেকবার বাদ পড়া থেকেও বাঁচিয়েছে। সেই এমএসডি’র কাছ থেকে ব্যাটন পাওয়া আমার কাছে বিশাল ব্যাপার। অনেক বড় দায়িত্ব।’ ক্রিকেটের প্রভাবশালী সাইট ইএসপিএন-ক্রিকইফোকে বলেন কোহলি। অধিনায়কত্ব ছাড়লেও উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা চালিয়ে যাবেন ধোনি। এ নিয়েও খুশি কোহলি,‘এটা দারুণ যে ড্রেসিং রুমে, টিম মিটিংয়ে বা মাঠে মাহিভাইর (ধোনি) মতো একজনের পরামর্শ পাব। তাছাড়া সে এখন থেকে নির্ভার হয়ে খোলা মনে খেলতে পারবে, আমার কাছে এটাও একটা ভাল খবর। আশাকরি ব্যাট হাতে আমরা আগের সেই আগ্রাসী এমএসডিকে পাব, প্রথম ভারতীয় দলে যেমন করেছিল। ক্যারিয়ারে অনেক চাপ নিয়েছে। এবার তার উপভোগ করার সময়। আশাকরি এই সুযোগটা সে ছাড়বে না।’ গত বছর ধোনি একাধিকবার বলেছেন, কোহলিই তার যোগ্য উত্তরসূরি। আবারও ধন্যবাদ দিয়ে নতুন অধিনায়ক যোগ করেন, ‘আমাকে যে সে যোগ্য মনে করেছে, এটা বড় সম্মানের। তার কাছ থেকে অনেক শিখেছি। নেতৃত্ব কি জিনিস, কি করে দলটাকে একত্র করে রাখতে হয়, সবকিছুই।’ ছোট ফরমেটের নেতৃত্বে বাড়তি চ্যালেঞ্জও দেখছেন তিনি, ‘টেস্ট ম্যাচে কামব্যাকের সুযোগ থাকে। কিন্তু ওয়ানডে বা টি২০তে সেটি থাকে না। মাহিভাই দলটাকে যে সেরার জায়াগায় রেখেছিল, এটা বড় কৃতিত্বের। আমাকে বিদ্যাটা শিখতে হবে।’
×