ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে ভুয়া ডাক্তারের চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বরিশালে ভুয়া ডাক্তারের চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রায় এক ডজন ভুয়া ‘ডাক্তার’ ডিগ্রী ব্যবহার করে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে রাজিয়া সুলতানা। তার অপচিকিৎসায় ইতোমধ্যে একাধিক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জন একটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে। অপর এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে বিভিন্নস্থানে সিজারসহ রোগীদের ব্যবস্থাপত্র অব্যাহত রেখেছে নবজাতক হত্যাকারী ভুয়া চিকিৎসক রাজিয়া সুলতানা। জেলার গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্যাথলজি, হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাজিয়া সুলতানার বিভিন্ন ‘ডাক্তার’ ডিগ্রী উল্লেখ করে সাঁটানো হয়েছে ফেস্টুন ও সাইনর্বোড। উপজেলার হোসনাবাদ সাহেবেরচর লঞ্চঘাট বাজারো নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারে সাইনবোর্ডে রাজিয়া সুলতানা ডিগ্রী হিসেবে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক মেডিক্যাল অফিসার। একই এলাকার হোসনাবাদ ডায়াগনস্টিক এ্যান্ড ডক্টরস্ চেম্বারে মা, শিশু ও গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘মেডিক্যাল অফিসার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গৌরনদী সদরের দক্ষিণ বিজয়পুর এলাকার শারমিন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যবহার করেছে এমবিবিএস (ঢাকা), পিজিটি গাইনি (অবস), সিসিসি ডিডি এমইউ ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন। একই উপজেলার বেজগাতি এলাকার সুইজ হাসপাতালে ওই একই চিকিৎসক এমবিবিএস (ঢাকা), পিজিটি (অবস ও গাইনি), ডিপ্লোমা ইন এ্যাডভান্স আল্ট্রাসনোগ্রাফি (বিআইটিএমআইআর), সি-সিসিডি (এনএইচএফআরআই) মহিলাসহ বিভিন্ন ডিগ্রীর কথা উল্লেখ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাধিক ডিগ্রীর কথা উল্লেখ করলেও রাজিয়া সুলতানার কোন ডিগ্রীই নেই। তার পরও সে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ সিজার অপারেশন করে আসছে। ইতোমধ্যে তার ভুল চিকিৎসায় একাধিক নবজাতক মারা গেছে। সূত্রমতে, বেজগাতি সুইজ হাসপাতালে বসে রাজিয়া সুলতানার ভুল চিকিৎসায় গত ৯ অক্টোবর বড় কসবা গ্রামের এক নবজাতক মারা গেছে। এ ঘটনায় ওই নবজাতকের পিতা বড় কসবা গ্রামের মাসুদ হাওলাদার বাদি হয়ে বরিশাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় রাজিয়া সুলতানা, সুইজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান আকন আজাদ, তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও ওই হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট রুপা বেগম ও হাসপাতালের পরিচালক মহিউদ্দিন আকনকে। গত ২৮ নবেম্বর বাটাজোর বন্দরের এ্যাপোলো হাসপাতালে রাজিয়া সুলতানার ভুল সিজার অপারেশনে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নবজাতকের স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর করে। পরবর্তীকালে জেলা সিভিল সার্জন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আশুতোষ গৌতম বলেন, রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সিজার ও বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার ডিগ্রীর কাগজপত্র আছে। তিনি আরও বলেন, নবজাতক আমার হাতে মারা যায়নি। শেবাচিম হাসপাতালে মারা গেছে।
×