ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে কেটে গেল অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে কেটে গেল অনিশ্চয়তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে শেষ পর্যন্ত জাপানের দুটি কোম্পানিই দরপত্র জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন জাপানের সুমিতমো কর্পোরেশন এবং মারুবিনি কর্পোরেশন কেন্দ্র নির্মাণের দরপ্রস্তাব জমা দেয়। এ দিন দুপুরেই তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে বলা হয়েছে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার পাশাপাশি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বন্ধন আরো মজবুত হলো। সরকার বিদেশীদের নিরাপত্তায় পর্যপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাদের আস্থা ফিরে এসেছে বলে এসময় উল্লেখ করা হয়। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম জানান, প্রথমে আগ্রহপত্র চাইলে কয়েকটি কোম্পানি কেন্দ্র নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে। আমরা তাদের মধ্য থেকে দুটি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করি। এই দুটি কোম্পানিই পৃথক খামে মঙ্গলবার শেষ সময় বেলা ১১টার মধ্যেই কারিগরি এবং আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত কোম্পানির আর্থিক প্রস্তাব খোলা হবে। তিনি জানান, আমরা আশা করছি আগামী মে মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপর কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করা হবে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোয়াপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে বাংলাদেশ কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্র ছাড়াও জাইকার অর্থায়নে এখানে ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য একটি কয়লা বন্দর নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে মাতারবাড়ি এবং মহেশখালীকে সিঙ্গাপুরের আদলে আধুনিক শহুরে সজ্জায় সাজানো হবে। মাতারবাড়ি মহেশখালি এলাকায় কয়লা চালিত বিদ্যুত হাবের পাশাপাশি নির্মাণ করা হবে অন্তত দুটি এলএনজি টার্মিনাল। একটি ভাষমান টার্মিনালের পাশাপাশি এখানে একটি স্থায়ী টার্মিনালও নির্মাণ করা হবে। ভবিষ্যত বাংলাদেশের এনার্জি সিটি হবে মহেশখালী। পাশাপাশি গড়ে তোলা হবে আধুনিক পর্যটন এলাকাও। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, দেশে এখন বিদেশীরা সম্পূর্ণ নিরাপদে রয়েছেন। আমরা তাদের সেবার মান বৃদ্ধি করেছি। সঙ্গত কারণে তাদের আস্থা বেড়েছে। বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সব মিলিয়ে প্রকল্পটি ছয় বিলিয়ন ডলারের। সঙ্গত কারণেই প্রকল্পটিকে ঘিরে আমাদের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে ছয় মাস দরপত্রের জন্য বিলম্ব হয়েছে তা রিসিডিউল করে সমন্বয় করা হবে। প্রথম দফায় গত ২৬ জুলাই দরপত্র জমা দেয়ার শেষদিন নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির ঘটনা সকলকে নাড়া দেয়। এখানে জাইকার মেট্রোরেল প্রকল্পের কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হন। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ এবং জাপানের পক্ষ থেকে এই সন্ত্রাসী হামলার পরও দুই দেশের সম্পর্ক অটুট থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সন্ত্রাস প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। পরিস্থিতি কিছুটা প্রতিকূল মনে করে মাতারবাড়ির দরপত্র জমা দেয়ার সময় গত ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত দুই দফায় বৃদ্ধি করা হয়। এর মধ্যে বিদ্যুত বিভাগ একাধিকবার মাতারবাড়ি প্রকল্প নির্মাণে প্রাথমিকভাবে যোগ্য জাপানী প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে সঙ্গে বৈঠকও করে। প্রয়োজনে অনলাইনেও দরপত্র পাঠালেও গ্রহণ করা হবে বলে তাদের জানানো হয়। তবে এখানে জাপানের একটি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়ার সময় আরও দুই মাস বৃদ্ধির আবেদন করে। সরকার প্রথমে অনড় থাকলেও পরে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্র জানায়, প্রথমে আগ্রহীদের প্রাথমিক যোগ্যতা বিবেচনার পর দুটি কোম্পানিকে দরপত্র জমা দেয়ার জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়। দুটি কোম্পানির কাছ থেকে কারিগরি এবং অর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হয়। প্রথমে কোম্পানি দুটির কারিগরি প্রস্তাব যাচাই বাছাই করা হবে। যোগ্য বিবেচিত কোম্পানির আর্থিক প্রস্তাব খোলা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের এই চুক্তির মূল্য দুই দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের। এখানের পুরো প্রকল্পের ব্যয় হবে চার দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আর দ্বিতীয় সমান ক্ষমতার ৬০০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি উৎপাদনে আসবে পরের বছর জুনে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, জাইকার আর্থিক সহায়তায় টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানি মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রর সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনা করে। কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর সব থেকে বেশি ব্যয়বহুল প্রকল্পর ২৯ হাজা কোটি টাকা জাইকা ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর অনেকটা এগিয়ে থাকা প্রকল্পটিই পিছিয়ে যায়। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য এক হাজার ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়ন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ঋণের সংস্থান করতে পেরেছে তিনটি কোম্পানি। এর মধ্যে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানির ঋণের অর্থ ইতোমধ্যে ছাড় করেছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এর বাইরে রামপালের জন্য ঋণ চুক্তি হচ্ছে শীঘ্রই। আর জাইকা মাতারবাড়িতে ঋণ দিচ্ছে।
×