ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ঋণ চুক্তি আগামী মাসে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ঋণ চুক্তি আগামী মাসে

রশিদ মামুন ॥ রামপাল বিদ্যুত কেদ্রের ঋণচুক্তি সই হচ্ছে আগামী মাসে। ভারতের এক্সিম ব্যাংক বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে ঋণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির (বিআইএফপিসিএল) সঙ্গে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের চুক্তি সই হবে। গত বছর ১৩ জুলাই বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ চুক্তি সই হয়। এরপর বিনিয়োগকারী ব্যাংকের শর্তের কারণেই ঋণ চুক্তি সই হতে দেরি হচ্ছিল। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের যৌথ মালিকানার কোম্পানি বিআইএফপিসিএল নির্মাণ করছে। কিন্তু বিদ্যুত কেন্দ্রটির ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সম্পৃক্ততা চাইছিল এক্সিম ব্যাংক। সরকার ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা (সভরেন গ্যারান্টি) দিলেও নতুন করে আবারও শর্ত দেয় এক্সিম ব্যাংক। দীর্ঘ আলোচনার পর বিদ্যুত বিভাগ এবং এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা হয়। মূলত বাংলাদেশে একটি পক্ষ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন করে আসায় নতুন করে শর্ত দেয় এক্সিম ব্যাংক। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু বিদ্যুতের একক ক্রেতা পিডিবি তাই ঋণ পরিশোধে সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। দেশের অন্য উদ্যোক্তাদের অনেককেই এই সুবিধা সরকার দিয়েছে। এর বাইরে বিদ্যুত বিভাগের কোম্পানিগুলোর ঋণের বিষয়ে সরকার পরিশোধের নিশ্চতা দিয়ে থাকে। এতে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। প্রকল্পে গতি আসে। এখানে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে বিআইএফপিসিএলÑ এক্সিম ব্যাংকের আলোচনা হওয়া উচিত ছিল তাদের সঙ্গে। কিন্তু যেহেতু দেশে রামপালবিরোধী আন্দোলন চলছে তাই সরকারের সম্পৃক্ততা চাইছিল এক্সিম ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছেছে। এখন আর ঋণ চুক্তি করার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই বলেও জানান তিনি। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় থাকা বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে কাজ করবে ভারত হেবি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল) বিদ্যুত কেন্দ্রটি টার্ন কী ভিত্তিতে নির্মাণ করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রের (ইপিসি) মূল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে এক দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থাৎ তিন বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। বিআইএফপিসিএল-এর একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, আগামী মাসেই বিদ্যুত কেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চিত করা হবে। এসময়ে যে কোন সময় এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হবে। তবে চুক্তির দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। ভেল এবং বিআইএফপিসিএল-এর সঙ্গে চুক্তি হবে এক্সিম ব্যাংকের। বিদ্যুত বিভাগের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। অর্থাৎ ১৪ বা ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটির ঋণ চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি। গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের বিদ্যুত সঙ্কট মোকাবেলায় প্রতিবেশী ভারতের সহায়তা প্রত্যাশা করেন। তখন ২০১০ সালে ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এই সমঝোতার আলোকে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারত ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) যৌথভাবে বিআইএফপিসিএল গঠন করে। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি বাংলাদেশের বাগেরহাটের রামপালে একটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সকল প্রক্রিয়া শেষের পরও ভারত এবং বাংলাদেশের দুটি সরকার পরিবর্তনের মতো সিদ্ধান্তে প্রকল্পটি পিছিয়ে যায়। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি বিশেষ অগ্রাধিকার তালিকায় ঠাঁই দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দায়িত্ব নেয়ার পর রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নে তার সরকারের সমর্থন রয়েছে বলে ঘোষণা করেন। যদিও বাংলাদেশে পরিবেশবাদীরা রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছেন। সরকার এক্ষেত্রে রাপমাল বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না জানিয়ে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। তবে পরিবেশবাদীদের একটি অংশের পাশাপাশি তেল-গ্যাস বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীতে হরতাল আহ্বান করে। ওই হরতালে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ঘটলে সরকার প্রকল্পটি থেকে সরে আসবে বলে ধারণা করেছিল আন্দোলনকারীরা। তবে ওই দিনের হরতালে সাধারণ মানুষ সাড়া না দেয়ায় আন্দোলনকারীরা হতাশ হয়েছে। একই দিন রামপালে ৬ কিলোমিটার লম্বা মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে স্থানীয়রা। রামপালে দুটি সমান ক্ষমতার ৬৬০ মেগাওয়াটের ইউনিট নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্ধেক মালিকানা থাকবে পিডিবির কাছে বাকি অর্ধেক থাকবে এনটিপিসির কাছে। ঋণের বাইরেও ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ থাকছে ভারত এবং বাংলাদেশের।
×