ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেনা হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি

শুরু হবে মোবাইল ফোনের সেবার মানের ওপর নজরদারি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শুরু হবে মোবাইল ফোনের সেবার মানের ওপর নজরদারি

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। উচ্চমূল্যের পাশাপাশি ইন্টারনেটের ধীরগতি, নেটওয়ার্ক সমস্যা, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ও ব্যবহারের চেয়ে বেশি টাকা কেটে নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি অপারেটরদের কয়েক দফা নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাংলালিংক ছাড়া অন্য কোন অপারেটর এই নির্দেশ মানেনি। পরে বিটিআরসি কলড্রপসহ মোবাইল ফোন সেবার মান নিশ্চিত করতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার নজরদারি যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে। গত বছরের জুলাই মাসে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান নজরদারিতে আনতে ফিনল্যান্ডের ‘এনাইট ফিনল্যান্ড লিমিটেড’ নামের একটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান থেকে ‘নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিং’ যন্ত্রপাতি সংগ্রহের চুক্তি স্বাক্ষর করে বিটিআরসি। গত বছরের ডিসেম্বরে বিটিআরসি যন্ত্রগুলো হাতে পেয়েছে। এ মাসের শুরু থেকে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে বিটিআরসি কলড্রপ, রিসিভ লেভেল, কল সেটআপ টাইম, কল সাকসেস রেটসহ মোবাইল ফোন সেবার গুণগত মান নজরদারির মাধ্যমে নির্ণয় শুরু করছে। মান নির্ণয়ের পরেই বিটিআরসি অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। বিটিআরসি সচিব সরওয়ার আলম বলেন, নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিং যন্ত্রপাতি নিয়ে বিটিআরসি কর্মকর্তারা রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সেবার মানের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। কোন অপারেটরের কত কলড্রপ হচ্ছে, সাকসেস রেট কেমন, কল সেটআপ টাইম কত এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের পরে অন্য বিভাগীয় শহরে কাজ শুরু হবে। এজন্য বাড়তি যন্ত্রপাতি আনতে হবে। তাছাড়া এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টি করার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জনবল সৃষ্টি হলে সারাদেশে বিটিআরসির পক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চালানো হবে। প্রাথমিকভাবে তিন ধরনের সিস্টেম নিয়ে এ কাজ করা হয়েছে। ‘নিমো ওয়াকার এয়ার, ইনভেক্স টু এবং ইউন্ডক্যাচার’ নামে তিন ধরনের যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেটরদের সেবার মানগুলো যাচাই করার কাজ চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলো ভ্রাম্যমাণ কাজ করছে। ব্যাকপ্যাক বা হ্যান্ডব্যাগে এ যন্ত্রপাতি বহন করা যায়। তবে ‘নিমো-২ যন্ত্রটি ওপেন স্পেসে’ গাড়িতে বহন করতে হয়। এই যন্ত্র একটি বড় এলাকার ফোন কল নজরদারি করতে পারবে। যন্ত্রগুলো যে শুধু ফোন কল নজরদারি করবে তা নয়, এগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোরও নজরদারি করতে পারবে। বিটিআরসির সচিব বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কে কি করছে তাও নজরদারি করবে এ সব যন্ত্রপাতি। যন্ত্রগুলো পরিচালনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার তিনজন প্রশিক্ষক বিটিআরসির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গত বছরের শেষদিকে যন্ত্রপাতিগুলো বিটিআরসির হাতে আসে। এ বছরের শুরু থেকেই কলড্রপসহ বিভিন্ন সেবার মান যাচাইয়ের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩০টি এলাকায় কাজ শুরু করেছে। বিদেশী প্রশিক্ষকরা সঙ্গে থেকে নজরদারির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিটিআরসির কর্মকর্তারাও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। বিটিআরসির উদ্যোগের ফলে কলড্রপ, কল প্রতিষ্ঠার সময়কাল, কলের স্থায়িত্ব, কথা বলার মান, কারিগরি ত্রুটি, ডাটা আদান-প্রদানের মান ইত্যাদি সম্পর্কে সত্যিকারের চিত্র উঠে আসবে। এসব রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এই ব্যবস্থা নেয়া হলে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বিভিন্ন সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। বিটিআরসি প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতিগুলো কিনেছে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্রযুক্তি সেবা ও কার্যক্রমের মান পরিমাপ ও মনিটরিংয়ের জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। মোবাইল ফোন সেবার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পরিষেবা ও যন্ত্রপাতি কিনতে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ চুক্তি অনুসারে বিটিআরসি জানিয়েছে, সেবার মান যাচাইয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) কাছে আগে এ ধরনের কোন যন্ত্রপাতি ছিল না। অপারেটরদের সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতেই এসব সেবার মানের তথ্য নির্ভর করতে হতো। তখন অপারেটরা কলড্রপের পরিমাণ যা বলত তাই মেনে নিতে হতো।
×