ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একনেক সভায় ১২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার আট প্রকল্প অনুমোদন

সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অধিকতর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশে ইউনিয়ন, থানা ও জেলা পর্যায়ে বর্তমানে কত সংযোগ সড়ক রয়েছে, আর নতুন করে কত সড়ক প্রয়োজন রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। উন্নয়নের সুফল গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তাই এখন থেকে গ্রামের সড়কগুলোও ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। এজন্য মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত ‘লোকাল গবর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। সভায় প্রায় ১২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মোট আটটি প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সড়ক নির্মাণের কাজ করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ দুটি সংস্থা মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ করবে। মন্ত্রী বলেন, সড়ক নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্প সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এতে প্রকল্পের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যাবে এবং প্রকল্প ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে চর এলাকায় ভূমিহীনদের জমি বরাদ্দ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতবাড়ি নির্মাণ এবং এর সুবিধাভোগীরা কোথায় চাষাবাদ করবে, এ বিষয়ে পরিকল্পিত পদ্ধতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন। মন্ত্রী বলেন, সভায় অনুমোদন পাওয়া আট প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৯ হাজার ১৯২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে ৮৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৪৮৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। মুস্তফা কামাল বলেন, সভায় ৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লোকাল গবর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি) এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৪ হাজার ৫৫০ ইউনিয়ন পরিষদে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা সরকার বহন করবে। বাকি ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ মেয়াদকালে এটি বাস্তবায়িত হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। গত কয়েক বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পল্লী এলাকায় অবকাঠামো ডিজাইন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বলে তিনি জানান। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন অত্যন্ত চমৎকার বর্ণনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সৌদি পত্রিকায় লেখা হয়েছে- সেখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। তারা কেউ কেউ বাংলাদেশকে সেকেন্ড হোম ভাবছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি সফরের পর সেখানে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প ॥ একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পসমূহ হলোÑ জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে, ৪১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), মিরপুর সেনানিবাসের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২১ কোটি ৯ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানাধীন অন্যান্য আবাসিক এলাকার উন্নয়ন (২য় পর্যায়), এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এছাড়া নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে- ১৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এটি সংশোধিত (১ম) আকারে অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদন পেয়েছে বরিশাল ও সিলেট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং রেঞ্জ রিজার্ভ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প- এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৬ কোটি ১ লাখ টাকা।
×