ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরো, পাউন্ডের মতো মুদ্রার অবমূল্যায়নে সরকারের নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা প্রয়োজন

চ্যালেঞ্জের মুখে রফতানিমুখী শিল্প খাত

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চ্যালেঞ্জের মুখে রফতানিমুখী শিল্প খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমানে পোশাক শিল্প খাত চ্যালেঞ্জের মধ্য রয়েছে। এ খাতের উদ্যোক্তারা প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা ও নীতি সহায়তা পাচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার ফলে ওই সব বেশ কয়েকবার দাম সমন্বয় করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে মাত্র একবার। মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বেক্সিটের একটা বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছি আমরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার যুক্তরাজ্যে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার রফতানি হচ্ছে। কিন্তু পাউন্ডের দরপতনে দেশটিতে রফতানিমুখী সব খাতই মুখ থুবড়ে পড়বে। এজন্য এ দেশের রফতানিমুখী শিল্প বাঁচাতে সরকারকে এখনই নীতি সহায়তা কিংবা বিশেষ প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। না হলে যুক্তরাজ্যে আমাদের অংশীদারিত্ব কমে আসবে। সালাম মুর্শেদী বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভারত কিংবা ভিয়েতনামে মুদ্রার অবমূল্যায়নে সেদেশের সরকার বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছে। তিন বছর আগে ভারতের একজন রফতানিকারক ১ ডলারের বিপরীতে পেতেন ৪৪ রুপী। বর্তমানে দেশটির রফতানিকারকরা ১ ডলারের বিপরীতে পাচ্ছেন ৬৮ রুপী। আমাদের দেশও পোশাক শিল্পের উন্নয়নে নানা ধরনের প্রণোদনা দিলেও তা যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করেন। সালাম মুর্শেদী বলেন, বিদেশী উদ্যোক্তারা যখন দেখেন আমার গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা তখন আর কেই বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে না। তিনি বলেন, ধারাবাহিক পোশাকের দরপতন হচ্ছে। তিনি বলেন, একদিকে ঋণের সুদের হার কমানোর কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে সিঙ্গেল ডিজিটে ছোট ছোট প্যাকেজে ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু ব্যাংকের মেয়াদী ঋণের বিনিয়োগ খুবই কম। মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সিঙ্গেল নয়, ডাবল ডিজেটেই ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। মেয়াদী ঋণ না পেলে উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবে না। সব উদ্যোক্তাদের সুযোগও নেই বিদেশী ঋণে পেয়ে বিনিয়োগ করবে। আমানতের সুদ হার এবং ঋণের সুদ হার কমানোর পরও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। এর মূল কারণই হচ্ছে অবকাঠামোগত সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বাজেটে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা নেই। সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরে পোশাক শিল্পের এ উদ্যোক্তা বলেন, মুদ্রানীতিতে একটু বাড়িয়ে পোশাক শিল্পের উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা রাখা উচিত ছিল। গত বাজেটে সরকার শতাধিক ইকোনমিক জোন পাস করেছে। কিন্তু এমন কোন নীতিমালা নাই যে, কেউ যদি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে তাকে বিদ্যুত-গ্যাসের সংযোগ পাবে। এ ধরনের ঘোষণা না থাকার কারণে উৎসাহী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আসছে না। বাজেটে অর্থনৈতিক জোনের প্রস্তাবনা থাকলেও কোনটি আগে তৈরি হবে সে রকম সুনির্দিষ্ট ঘোষণা নেই। তিনি বলেন, ফার্মসিটিকিউলস, চামড়া, প্লাস্টিক, পাট, তথ্যপ্রযুক্তিসহ এমন কিছু সম্ভাবনাময় খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে ইকোনমিক জোনে জায়গা দিতে হবে। এসব খাতের উদ্যোক্তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিতে হবে। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। রাজধানীর বাইরে যদি কোন উদ্যোক্তা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান তাহলে সরকারের উচিত বিশেষ কোন প্যাকেজ দেয়া। পোশাক শিল্পের মালিকগণ পণ্য রফতানি করে আয় দেশে না এনে বিদেশে রাখছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের মন্তব্য প্রসঙ্গে সালাম মুর্শেদী বলেন, ঢালাওভাবে এ খাতের উদ্যোক্তাদের নিয়ে এমন মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
×