ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমেদ

ঘোষিত মুদ্রানীতি বিনিয়োগবান্ধব হলেও ঘাটতি রয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঘোষিত মুদ্রানীতি বিনিয়োগবান্ধব হলেও ঘাটতি রয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি বেসরকারী খাতের জন্য বিনিয়োগবান্ধব হলেও গ্যাপ (ঘাটতি) রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। মঙ্গলবার মতিঝিলে এফবিসিসিআই সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষে এ কথা বলেন সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ। অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতি, দেশের বর্তমান বেসরকারী বিনিয়োগ পরিস্থিতি, ভারতে বাংলাদেশের পাটপণ্যে এ্যান্টি-ড্যাম্পিং শুল্করোপ এবং বর্তমান বাজেটে আরোপিত কাস্টমস ও ভ্যাট নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। মাতলুব আহমেদ বলেন, মুদ্রানীতি ঘোষণায় বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি, সরকারের ঋণ গ্রহণে সতর্কতা এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাসে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১৬ শতাংশের পরিবর্তে কমপক্ষে ১৭ শতাংশ করা হলে আরও বিনিয়োগ সহায়ক হতো। এদিকে বাংলাদেশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে উন্নীত করতে জিডিপির ৪০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব করার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতসহ সকল ক্ষেত্রে সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের ৩০ জুন খেলাপী ঋণ ৬৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছিল। যা বর্তমানে আরও বেড়েছে। এই হতাশাজনক পরিস্থিতির সমাধান জরুরী। অন্যথায় বিনিয়োগে গতি সঞ্চার সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে অপ্রদর্শিত অর্থ বিদেশে পাচাররোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের আন্তরিকতায় ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। তবে টেকসই বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের স্বার্থে ব্যবসা আরম্ভ, স্থাপনা নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুত প্রাপ্তি, সহজ শর্তে ঋণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশি নজর দেয়া জরুরী। তিনি জানান, ভারতে বাংলাদেশের মোট রফতানির ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ পাটজাত দ্রব্য। কিন্তু ভারত এরই মধ্যে এই পণ্যে প্রতি টনে ১৯ মার্কিন ডলার থেকে ৩৫১ ডলার পর্যন্ত এ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পাটজাত পণ্য রফতানি করা সম্ভব হবে না। এতে ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। ভারতের এই এ্যান্ডি ডাম্পিং দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বলেও মন্তব্য করেন মাতলুব আহমেদ। তিনি প্রস্তাাবিত নতুন শুল্ক আইন কার্যকরের অনুরোধ জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়নের দাবি করেন। এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত মূল্য সংযোজন কর নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সমাধানের কথা বলা হয়েছিল। মাতলুব আহমাদ বলেন, দেশে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা রয়েছে। এই কালো টাকা যাতে বিদেশে পাচার না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) শক্তিশালী করে কালো টাকা পাচার রোধ করে দেশের অভ্যন্তরের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার সম্প্রতি কালো টাকা মূল অর্থনীতিতে কাজে লাগিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কালো টাকা কাজে লাগানো জরুরী। কালো টাকার ব্যবহারের বিষয়ে মুদ্রানীতিতে নির্দেশনা থাকা জরুরী ছিল। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম, পরিচালক শেখ ফজলে ফাহিম, দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, প্রবীর কুমার, হারুন উর রশীদ, হোসনে আরা প্রমুখ।
×