ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৬ মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ

চৌগাছায় ভুয়া কাগজে ‘যুদ্ধাহত’ ভাতা তোলার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চৌগাছায় ভুয়া কাগজে ‘যুদ্ধাহত’ ভাতা তোলার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চৌগাছায় ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ‘যুদ্ধাহত’ ভাতা তোলার অভিযোগে ২৬ মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা এখন শুধুমাত্র রেশন পাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’-এর দিন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, স্বাধীনতা ভবন, ৮৮ মতিঝিল বা/এ কার্যালয়ে অভিযুক্ত ১১ মুক্তিযোদ্ধার শুনানি গ্রহণ করে ও কাগজপত্র দেখে তাদের ভাতা বন্ধ করে দেন। গত ১০ নবেম্বর উপজেলার ২১ জন মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী তাদের ভাতা বন্ধ রেখে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। এর আগে ২১ এপ্রিল উপজেলার ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধার আরেক আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শুনানি গ্রহণ করে অভিযুক্ত আরও ১৫ মুক্তিযোদ্ধার ‘যুদ্ধাহত’ ভাতা বন্ধ করে দেন। এ মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন যুদ্ধই করেননি বলে অভিযোগ করেছেন অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধারা। তারা লিখিত আবেদনে জানান, চৌগাছায় প্রকৃতপক্ষে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। অভিযুক্ত ২৬ জন তাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির ফরমের ২৪নং কলামে ‘যুদ্ধাহত’ হিসেবে উল্লেখ করেননি। তাছাড়া ভোটার তালিকা পূরণের সময়ও ‘যুদ্ধাহত’ হিসেবে উল্লেখ করেননি। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন প্রকৃতপক্ষে পাকবাহিনীকে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ভাতা বন্ধ হওয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেনÑ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুর হোসেন (গেজেট নং-১৭০২), সহ-কমান্ডার শহিদুল ইসলাম (গেজেট নং-১৭০৩), সাবেক উপজেলা কমান্ডার শওকত আলী (গেজেট নং-১৭৬৫), সাবেক উপজেলা কমান্ডার মরহুম নূর ইসলাম (গেজেট নং-১৭০০), সফিয়ার রহমান (গেজেট নং-১৮৩০), লিয়াকত আলী (গেজেট নং-৬৮৯), মজিবর রহমান, শাহাজান আলী (গেজেট নং-৬৮৮), নূর ইসলাম (গেজেট নং-১৮৮৮), বাহারাম উদ্দিন (গেজেট নং-১৮৯৪), কেরামত আলী (গেজেট নং-১৭৯০), আলী আহাম্মদ (গেজেট নং-২৬১০), সামছুল আলম (গেজেট নং-১৭৪৩), আব্দুল আলিম (গেজেট নং-১৭২১), শহিদুল ইসলাম (গেজেট নং-১৭০৮), মৃত চকম আলী (গেজেট নং-১৮৪২), মতিয়ার রহমান (গেজেট নং-১২৫৯৩), ইউসুফ আলী (গেজেট নং-১৭৬২), নুরু মিয়া (মুক্তিবার্তা নং-০৪০৫০৭০০৬৫), আশরাফ আলী (গেজেট নং-১৭১৪), মৃত রমজান আলী (গেজেট নং-১৭৬৮), আবুল কাশেম (গেজেট নং-১৭৩৯), ওমর আলী (গেজেট নং-১৭৭১), একেএম সাজেদুর রহমান (গেজেট নং-৬৯১), জেকের আলী (গেজেট নং-১৮৮৭) ও মোহাম্মদ আলী (মুক্তিবার্তা নং-০৪০৫০৭০১১৫)। এদের মধ্যে সাবেক উপজেলা কমান্ডার মৃত নুর ইসলাম, সফিয়ার রহমান, শাহাজান আলী, নূর ইসলাম, ইউসুফ আলী, নুরু মিয়া, মৃত রমজান আলী ও মোহাম্মদ আলী মুক্তিযোদ্ধা নন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়া জেলার আদি বাসিন্দা মজিবর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কি-না সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন অভিযোগকারীরা। অন্যদিকে সফিয়ার রহমান ও শাহাজান আলী পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছ। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ও চৌগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডাঃ নূর হোসেন ভাতা বন্ধের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা ডিসেম্বর মাসের ভাতার টাকা উত্তোলন করতে ব্যাংকে গিয়ে তুলতে পারিনি। মন্ত্রী একতরফাভাবে আমাদের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। উনি এটা ঠিক করেননি। মন্ত্রীর আচরণে আমি এবং আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা জানপ্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করে স্বাধীনতার সপক্ষের সরকারের সময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাচ্ছি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারগিস পারভীন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই।
×