ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনার আশঙ্কা

সেতু নয় যেন মরণফাঁদ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সেতু নয় যেন মরণফাঁদ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার গহিনখালী খালের ওপরের রাঙ্গাবালী সেতু মরণফাঁদে রূপ নিয়েছে। লোহার বিমের ওপর কংক্রিট ঢালাইয়ের সেতুর স্থানে স্থানে বড় গর্ত। পাশের রেলিং ভেঙ্গে পরেছে। পানির ভেতরে বসানো লোহার বিম ভেঙ্গে গেছে। কয়েকটি কাত হয়ে রয়েছে। গাছ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে কাঠামো। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় সেতুর এ বেহালদশা। উপজেলার পাশাপাশি দুটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগসহ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চলাচলের এ সেতুটি এতটাই নরবড়ে হয়ে পরেছে, যে কোন সময়ে ধসে পরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানায়, রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী সদর ও পার্শ্ববর্তী ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) গহিনখালী খালের ওপর লোহার বিম এবং কংক্রিট ঢালাই এ সেতুটি নির্মাণ করে। সেতুর উত্তর পাড়ে রাঙ্গাবালীর বাহেরচর বন্দর ও দক্ষিণ পাড়ে ছোটবাইশদিয়ার গহিনখালী বাজার। এলজিইডির উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, রাঙ্গাবালী সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৫ মিটার, চওড়া ২ মিটার। ১৯৯০ সালে সেতুটি নির্মিত হয়। ২০১২ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি সরজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির এখন এমন বেহালদশা হয়েছে, যানবাহন দূরের কথা, লোকজন চলাচলেরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেতুর মাঝ বরাবর একটি অংশ ভেঙ্গে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পাশের রেলিং ভেঙ্গে রয়েছে। উত্তর পাশের অংশে সেতুর লোহার বিম ভেঙ্গে হারিয়ে গেছে। বড় বড় গাছ খালে বসিয়ে, নিচে গাছের আড়াআড়ি বিমের মতো রেখে দড়ি দিয়ে বেঁধে, তার ওপর সেতুটি কোন রকমে খালের পানির উচ্চতা থেকে জাগিয়ে রাখা হয়েছে। লোকজন হাঁটাচলার সময়ে সেতু হেলতে-দুলতে থাকে। বাহেরচর বন্দরের মুদি ব্যবসায়ী আব্বাস হাওলাদার জানান, সপ্তাহে দুইদিন সোম ও বৃহস্পতিবার এখানে সাপ্তাহিক হাট বসে। খালের দক্ষিণ পাড়ের গহিনখালীসহ আশপাশ এলাকার মানুষ তাদের এখানে কেনাকাটা করত। কিন্তু সেতুটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে মানুষজন এখন সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলে ভয় পাচ্ছে। যে কারণে অপর পাড়ের মানুষজন এখন তাদের বাজারে কম আসছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরায় দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরাও। ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ নেই। তাই কলেজ ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের এ সেতু পেরিয়ে রাঙ্গাবালী এসে লেখাপড়া করতে হয়। ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চত্রাখালী গ্রামের মিথিলা ও জিসান রাঙ্গাবালীর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। মিথিলা জানায়, পারাপারের সময় সেতু হেলে-দুলে ওঠে, তখন খুব ভয় হয়। জিসান জানায়, সেতুটি ভেঙ্গে পরলে তাদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে বিঘিœত হবে। রাঙ্গাবালীর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক জানান, তার স্কুলে ছোটবাইশদিয়ার গহিনখালীসহ আশপাশ এলাকা থেকে অন্তত দেড় শ’ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে সেতু পেরিয়ে আসে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেতুটি মেরামত না হওয়ায় খালের অপর পাড়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে তারা উদ্বিগ। ইতোমধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। রাঙ্গাবালী সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, সেতু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরলে এলজিইডি ৬ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সংস্কার কিংবা নতুন করে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বর্তমানে সেতুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। ছোটবাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আবদুল মান্নান বলেন, দুই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজার, কৃষিকাজ এবং লেখাপড়ার গুরুত্বপূর্ণ বাহেরচর বন্দর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীসহ অন্তত তিন-চার হাজার মানুষ চলাচল করে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর জন্য এলজিইডি কার্যালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও নির্মিত হচ্ছে না। এলজিইডি রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ এনামুল কবির জানান, সেতুটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। সেতু নির্মাণের জন্য সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সালেহ মোঃ হানিফ জানান, রাঙ্গাবালী সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই স্থানে একটি নতুন সেতু প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×