ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে

দারিদ্র্যের হার কমানো, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, শিক্ষাসহ সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। দেশে যে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে তা শুধু শহরে নয়, এর প্রভাব গ্রামেও দৃশ্যমান। গ্রামাঞ্চলে কৃষি, শিল্প ও জনস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের বেগবান ধারা সহজেই লক্ষ্যযোগ্য। সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের সুফলও জনগণ পাচ্ছে। বিশেষত কৃষিক্ষেত্রে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ সড়ক, সেতু-কালভার্ট নির্মাণ, গ্রোথ সেন্টার-হাটবাজার উন্নয়ন, সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ ও পুনর্বাসন, বৃক্ষরোপণ, সøুইসগেট, রাবার ড্যাম ইত্যাদি নির্মাণ, খাল খনন ও সংস্কার প্রভৃতি কর্মসূচীর কারণে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হচ্ছে। এটা বাস্তবিক যে, গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অবকাঠামো উন্নয়ন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন অত্যন্ত জরুরী। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বহু জনপদ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এসব অঞ্চলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির গতি সঞ্চার করতে হলে গ্রামীণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন অপরিহার্য। অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও পরিবহন ব্যয় হ্রাস পেতে বাধ্য। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অঞ্চলে জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অনেক গ্রাম শহরে রূপান্তরিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ও টেলিযোগাযোগের উন্নয়ন গ্রামের চালচিত্র বহুলাংশে বদলে দিয়েছে। কোন দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে অর্থনীতিবিদরা যে দুটি বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন তা হচ্ছে পরিবেশ ও গ্রামীণ উন্নয়ন। যেহেতু জনসংখ্যার সত্তর ভাগ এখনও গ্রামে বসবাস করে, তাই তাদের বাদ দিয়ে সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে এশিয়া ও আফ্রিকার আটটি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের গ্রামীণ সড়কের প্রায় ৮৮ শতাংশই পাকা করা হয়েছে গত বছর পর্যন্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার ১শ’ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে উত্তরণের পথে এই গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। পল্লী সড়ক শুধু সড়ক নয়- কর্মসংস্থান, জীবিকা এবং উন্নততর জীবনেরও অবলম্বন। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কগুলোর মাধ্যমে গ্রামীণ প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ এবং অন্য অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক দারিদ্র্য হ্রাসেও সহায়তা করছে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজি অর্জনে সহযোগিতা করছে। সরকার আক্ষরিক অর্থেই যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধন করছে গ্রামীণ পর্যায়েও। জুতা পরার আগে যেমন পেরেক সারাই করে নিতে হয়, তেমনি দেশকে সমৃদ্ধ করতে হলে আগে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। সড়কগুলো দ্রুত পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনকে আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিতে পারে। পল্লী অবকাঠামোর উন্নয়ন মানে সারাদেশের উন্নয়ন। তা যত দ্রুত সাধিত হবে, তত দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হওয়া যাবে।
×