ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি

২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্লেখ্য, বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে বছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই ঘোষণা করা হয় মুদ্রানীতি। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বলেছেন, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণের লক্ষ্য নিয়েই ঘোষিত হয়েছে এবারের মুদ্রানীতি। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত কয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় সাধারণ মানুষ রয়েছে স্বস্তিতে। সম্প্রতি চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, লবণ, চিনিসহ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা চাপ পড়তে পারে। তবে তা যেন সহনীয় মাত্রায় থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ বাড়ানো। ৭ দশমিক ২ শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখাসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়ন তথা টেকসই অর্থনীতির জন্য জোর দিতে হবে বিনিয়োগে। এর জন্য বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির মাত্রা বাড়াতে হবে। ঋণ বিতরণের জন্য শুধু পুঁজিঘন বা বড় শিল্প স্থাপনের দিকে না ঝুঁকে সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের ওপর। তাহলে স্বভাবতই কর্মসংস্থান বাড়বে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। হলি আর্টিজান কিংবা শোলাকিয়ার ঘটনা মনে রেখেও বলা যায়, জঙ্গীবাদসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক্ষেত্রে সদা তৎপর রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোতে জমে আছে অলস টাকার পাহাড়। বর্তমানে ঋণের সুদহারও তুলনামূলক কম। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, খেলাপী ঋণের ঝুঁকিসহ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দুর্বল ব্যবস্থাপনা নতুন ঋণ দিতে নানাভাবে অনুৎসাহ দেখাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করাসহ খেলাপী ঋণের বোঝা কমানোর উদ্যোগ নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, খেলাপী ঋণের জন্য উদ্যোক্তারা দায়ী নয়, বরং দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাই দায়ী অনেকাংশে, যার মূলে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি। নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গ্যাস-বিদ্যুত-কাঁচামাল-পানি, যোগাযোগসহ অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুত সমস্যা অনেকটাই সমাধানের পথে। গ্যাস, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের ঘাটতি অনেকটাই কেটে যেতে পারে যদি নীল অর্থনীতি তথা সমুদ্র সম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সরকার এদিকটায় মনোযোগ দিয়েছে সম্প্রতি। ব্যাংকিং চ্যানেল বাদ দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীদের অনেকটা অর্থ আসায় ডলারের পরিমাণ কমেছে। নতুন মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে রেমিটেন্স বাড়ানোসহ অলস অর্থ বিনিয়োগে নিয়ে আসাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর স্বীকার করেছেন, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ প্রবাহ কমে আসায় অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানোর পথ সুগম করেছে। সে অবস্থায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হলে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে না। বাড়ছে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। বিনিয়োগ মন্দায় ঋণ চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে অলস অর্থের পরিমাণ। এই অবস্থার অবসানে গুণগত ঋণ প্রবৃদ্ধির পরিমাণ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ উদ্দীপক ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি সে ক্ষেত্রে প্রভূত সহায়ক হতে পারে।
×