ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ৪ হাজার ইউপি ও ১৬ পৌরসভার দক্ষতা উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

সাড়ে ৪ হাজার ইউপি ও ১৬ পৌরসভার দক্ষতা উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ

আনোয়ার রোজেন ॥ দেশের চার হাজার ৫৫০ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও ১৬ পৌরসভার অর্থ স্থানান্তর ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হচ্ছে। এজন্য প্রায় ৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এর মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে ইউপি ও পৌরসভাগুলোতে অর্থ পাঠানোর স্বচ্ছ পদ্ধতি (ইন্টার গবর্নমেন্টাল ফিসক্যাল ট্রান্সফার) নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে ইউপির নিজস্ব আয় বৃদ্ধি, ইউপি ও পৌরসভার সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠা করা হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকারব্যবস্থা। প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক ও কৌশলগত সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। ‘লোকাল গবর্নেন্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩’ বা এলজিএসপি-৩ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। একনেক সভায় অনুমোদন পেলে ’২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের জন্য সংস্থাটির পরিচালনা বোর্ড শীঘ্রই বড় অংকের ঋণ অনুমোদন দিতে যাচ্ছে। নমনীয় ঋণ সহায়তা হিসেবে এজন্য পাওয়া যাবে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। এর আগে এলজিএসপি-১ এবং এলজিএসপি-২ প্রকল্পেও সহায়তা করেছে বিশ্বব্যাংক। এ দুটি প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় সরকার ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নের জন্য এলজিএসপি-৩ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, একটি সুনিদিষ্ট ফর্মুলার ভিত্তিতে প্রকল্প মেয়াদের প্রথম তিন বছর সব ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে বেসিক গ্রান্টসের (বিবিজি) অর্থ প্রদান করা হবে। এছাড়া কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পারফরমেন্স ইনডিকেটরের (কর্ম মূল্যায়ন সূচক) ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদসমূহে পারফরমেন্স বেজড গ্রান্টস (পিবিজি) বা অনুদানের অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের সব পর্যায়ের সদস্যকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ইউনিয়ন পরিষদের স্কিমসমূহের অগ্রগতি মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে ওয়েব ভিত্তিক এমআইএস সিস্টেম প্রবর্তন করা। প্রকল্পের দ্বিতীয় (২০১৮-১৯) ও তৃতীয় অর্থবছরে (২০১৯-২০) সব ইউনিয়ন পরিষদে আর্থিক ও দক্ষতাভিত্তিক অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পাইলট ভিত্তিতে ১৬ পৌরসভায় বর্ধিত ব্লক অনুদানের (ইবিজি) অর্থ সরবরাহ ব্যবস্থার সূচনা করাও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো; কিন্তু তারপরও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সীমিত নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে কাজ করে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক স্বাধীনতা, রাজস্ব আহরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অত্যন্ত সীমিত। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো মোট জাতীয় ব্যয়ের মাত্র ৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে থাকে। যদিও তাদের রাজস্ব আয় জাতীয় আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। তাছাড়া স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকা-ের সব সিদ্ধান্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে গ্রহণ করা হয়। অথচ স্থানীয় সরকার বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাগুলো ঠিকই জনগণের নাগরিক বিষয়গুলোতে কার্যকর ভূমিকা ও প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। এজন্যই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতায়ন করতে ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন এবং স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন প্রণয়ন করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে বাস্তবায়ন করা হয়। এলজিএসপি-১ এবং এলজিএসপি-২ শীর্ষক দুটি প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। এছাড়া প্রকল্পটির অনুকূলে চলতি অর্থবছরে সরকারী তহবিলের অর্থের চাহিদা দেখানো হয়েছে ৪২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগ মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) প্রত্যয়নপত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি কম্পোনেন্টের মাধ্যমে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। কম্পোনেন্ট-১-এর মাধ্যমে মৌলিক থোক বরাদ্দ দেয়া হবে ৪ হাজার ২৮৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এছাড়া দক্ষতাভিত্তিক (পারফরমেন্স বেজড) বরাদ্দ দেয়া হবে ৮৬৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদের মূল অনুদানের অর্থ স্থানান্তর ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হবে। কম্পোনেন্ট-২ এর আওতায় তথ্য প্রবাহ ও জবাবদিহিতামূলক কাজ করা হবে। যেমন-অডিট এবং পারফরমেন্স মূল্যায়ন, অডিট ও পারফরমেন্স মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং এমআইএস পরিচালনা করা হবে। কম্পোনেন্ট-৩ এর আওতায় পৌরসভার বর্ধিত ব্লক গ্রান্টস এর পাইলটিকরণ করা হবে। কম্পোনেন্ট-৪ এর আওতায় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাগুলোর সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। পুরো প্রকল্পের আওতায় ছয় লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৮ জনকে দেয়া হবে দক্ষতার প্রশিক্ষণ।
×