ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জ কারাগার পরিদর্শনকালে সিনহা

দেশের বিচার বিভাগ সবচেয়ে অবহেলিত খাত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

দেশের বিচার বিভাগ সবচেয়ে অবহেলিত খাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচার বিভাগকে দেশের সবচেয়ে অবহেলিত খাত বলে অভিহিত করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। একই সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আটক বন্দীদের সার্বিক অবস্থা অত্যন্ত সন্তোষজনক বলেছেন তিনি। সোমবার সকালে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনের আগে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি নিরাপত্তার পাশাপাশি আটক আসামির দ্রুত বিচারের স্বার্থে কারাগারের আশপাশেই ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট স্থাপন করতে ও কারাগারের নিরাপত্তায় অতি দ্রুত কারাগারের প্রধান দেয়াল নির্মাণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান করেন। এছাড়া বন্দী সংখ্যা কমাতে বিডিআর বিদ্রোহীদের অতি দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। অপরদিকে অপরাধীদের স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ ও রাজনৈতিক শিক্ষিত বন্দীদের জন্য কারাগারে পাঠাগার স্থাপন করতে কারা মহাপরিদর্শককে অনুরোধ করেন। তিনি কারাগারের বন্দীদের পড়ার জন্য নিজস্ব ফান্ড থেকে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লেখকদের লেখা ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে লেখা ১ লাখ টাকার বই উপহার দেন। কারা সূত্র জানায়, পরিদর্শনকালে প্রধান বিচারপতির কাছে কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্ট থেকে বিচারের রায় পেলেও সুপ্রীমকোর্টে জেল আপীল করতে আবেদন জানান। এ সময় প্রধান বিচারপতি উক্ত আসামিদের তথ্যসহ জেল আপীলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এছাড়া বন্দীদের সার্বিক সমস্যাসমূহ নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ প্রধান বিচারপতির কাছে তা দাখিলের বিশেষ নির্দেশ দেন। কারাগার পরিদর্শনকালে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন, ঢাকার জেলা প্রশাসক মোঃ সালাউদ্দীন, পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান, সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত কর্মকর্তাগণ, উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ঢাকা) তৌহিদুল ইসলাম, উপ-কারা মহাপরিদর্শক (রাজশাহী) আলতাফ হোসেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেছার আলমসহ কারা বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাসে এই প্রথমবারের কোন প্রধান বিচারপতি পরিদর্শনে গেলেন। সকাল নয়টার সময় কারাগারে প্রবেশ করে পরিদর্শন শেষে দুপুর একটা ৪০ মিনিটে সেখান থেকে বের হন। প্রধান বিচারপতি বলেন, সঙ্গত কারণেই বিচার বিভাগে সমস্যা রয়েছে। বিচারিক ব্যবস্থা আজও ডিজিটাল না হওয়ায় বিচার বিভাগের লোকদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ঢাকা জর্জকোর্টে বসার স্থান ও ফাইল রাখার জন্য পর্যন্ত ফাঁকা স্থান নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার স্থানের প্রকট সঙ্কট রয়েছে। বিভিন্ন মামলার তথ্য আজও আমরা ফাইল খুঁজেই বের করতে হয়। মামলার তথ্য সংরক্ষণ করতে না পারায় সময়মতো অনেক ফাইল খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট কেরানীগঞ্জে স্থাপন প্রসঙ্গে এস কে সিনহা বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে নিম্ন আদালত রাখা উচিত বিশেষ করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপন করা উচিত। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে আদালত না থাকায় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ আমরা দেখেছি কারাগার থেকে আনা নেয়া করতে গিয়ে গাজীপুরের কাছে ফাঁসির আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। যাকে আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। এজন্য দুর্ধর্ষ আসামিদের আদালতে আনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য কারাগারের পাশে নিম্ন আদালত থাকলে এ ঝুঁকিটা থাকবে না। তিনি বলেন, আমি ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট কেরানীগঞ্জে আনতে ঢাকা বারের এ্যাডভোকেটদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা এতে রাজিও হয় কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঢাকা থেকে এ আদালতটি সরানো হচ্ছে না। বিষয়টি বিবেচনার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধান বিচারপতি বলেন, আগে কারা মহাপরিদর্শক আমাকে কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েদির সংখ্যা বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এটি আমলে নেয়া হবে। সেজন্য সুপ্রীমকোর্টের আমার ৪ জন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। নোট করা হবে কারা বিনা বিচারে কেউ এখানে দীর্ঘদিন ধরে রয়ে গেছেন কি না। আমি এর আগেও কাশিমপুর কারাগারে গিয়েছিলাম। সেখানে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দী রয়েছেন এমন কয়েদিদের মামলা নোট নিয়েছি। সেসব নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একইভাবে এখানেও খোঁজ খবর নেয়া হবে। তিনি বলেন, তবে আমার জন্য বিচারপতি হিসেবে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হবে যদি বিনা বিচারে কেউ কারাগারে থাকে। যদি তাদের আমরা বিচারের সুবিধা দিতে না পারি।
×