ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই নতুন নাটক মঞ্চে আনছি ॥ তৌফিকুর রহমান

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

শীঘ্রই নতুন নাটক মঞ্চে আনছি ॥ তৌফিকুর রহমান

অভিনেতা তৌফিকুর রহমান। নাট্যদল বহুবচনের কর্ণধার। দলের প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর পূর্তি আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। দলটির দীর্ঘদিনের কার্যক্রম ও সাম্প্রতিক প্রযোজনা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে মঞ্চের মিসির আলী খ্যাত এই অভিনেতার সঙ্গে কথা হয়। এবারে উৎসব সম্পর্কে বলুন- তৌফিকুর রহমান : আমরা দলের পুরনো মানুষগুলাকে ডেকে আনব। দলের ৫ জন অসুস্থ মানুষদের আমরা সম্মাননা দেব। এদিন শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষে পুরনো ও নতুন নাট্যকর্মীদের মিলনমেলা বসবে। থাকবে আলোচনা, ইমোশন ও গান-বাজনা। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার অভ্যন্তরীণভাবে পরবর্তী প্রযোজনার মহড়া, নতুন শিল্পী তৈরির কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ, প্রতিবছর নতুন প্রযোজনার মধ্যদিয়ে আরও কীভাবে দর্শকদের কাছাকাছি পৌঁছান যায় তার আত্মানুসন্ধান করাই হবে এবারের উৎসব আয়োজনের প্রতিপাদ্য। যেমন ছিল বহুবচন দলের পথচলা- তৌফিকুর রহমান : আমরা দেশ স্বাধীনের পর রণাঙ্গন ফেরত মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিলাম। মতিঝিল নিপুণা পেট্রোলপাম্পে দিনের পর দিন আড্ডা শেষে সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম নাটক করব। দুলাল, মোতাহার, মুজিব, ফরহাদ, সেলিম, দুলু, বিপ্লব, হাফিজ, সাজ্জাদ, রফিক, আমিরুল, আরমান, আমিসহ আরও কয়েকজন মিলে কণ্ঠে তুলে নিলাম নাটকীয় সেøাগান, ‘আমাদের নাটক মানে শুধু নাটকীয়তা নয়, নাটকের চিরচারিত আঙ্গিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ’। দলের নাম হলো ‘বহুবচন’। ‘প্রজাপতির লীলালাস্য’ নাটক দিয়ে যে আমাদের দলীয় যাত্রা শুরু, সে দলীয় যাত্রায় এ পর্যন্ত ২৩টি নাটকের প্রযোজনায় রয়েছে অজস্র মঞ্চায়ন। শেষাবধি বহুবচন কখনও মঞ্চ ছাড়েনি, ছাড়বেও না। আপনাদের পরবর্তী প্রযোজনা কী থাকছে= তৌফিকুর রহমান : আমাদের পরবর্তী নাটক পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় নাট্যকার চন্দন সেনের একটি জনপ্রিয় গল্প অবলম্বনে, তারই নাট্যরূপে নাটক মঞ্চায়ন করব। বর্তমান সমাজে যে পারিবারিক হাহাকার, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি অবহেলা-অবজ্ঞা বিচ্ছিন্নতার কারণে যে নিঃসঙ্গতা তা নিয়েই নাটকটি। খুব শীঘ্রই নাটকটি মঞ্চে আনছি। নাটক নির্বাচনে আপনাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি কি- তৌফিকুর রহমান : দলের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ৭৮ সাল পর্যন্ত আমরা আমাদের দেশীয় নাট্যকারদের রচিত মৌলিক নাটক মঞ্চায়ন করেছি। তাদের মধ্যে ফরহাদ মজহার, সেলিম আল দীন, সাযযাদ কাদির, সাঈদ আহমদ প্রভৃতি নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ূন আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’ তথা তাকে মঞ্চে আমরাই প্রথম আনি। ৭৮-এর পর থেকে দেশীয় নাট্যকারের পাশাপাশি বিদেশী নাট্যকারদের নাটক আমরা অনুবাদে রূপান্তরে মঞ্চে আনি। মনোজ মিত্র, মোহিত চট্টোপাধ্যায়, চন্দন সেন, সফোক্লিস, বের্টোল্ট ব্রেশটসহ অনেক নাট্যকারের নাটক আমরা করি। প্রাচ্য এবং প্রাশ্চাত্যের মেলবন্ধনে আমরা কখনও পিছিয়ে থাকিনি আবার নিজস্ব আঙ্গিকের অন্বেষণও ছিল আমাদের বরাবর আত্মানুসন্ধান। দলীয় নাট্যচর্চায় বর্তমানে সঙ্কট কেমন? তৌফিকুর রহমান : প্রথমত যানজটে দর্শকদের মতোই নাট্যকর্মীরা অসহায়। নিয়মিত রিহার্সেল করা যাচ্ছে না। মহড়া কক্ষের স্বল্পতা ভোগাচ্ছে নির্দেশকদের আধুনিক টেকনিকটা বুঝতে দেরি হচ্ছে। নাট্যকারেরা দলীয় অভিনয় শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে না। দলের শক্তির সমন্বয়হীনতা থেকে যাচ্ছে। নাট্যকলায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা নাট্যকর্মীরা শিক্ষকতা করা আর নির্দেশনা দেয়ার বাইরে থিয়েটারের সামগ্রিক দিক নিয়ে কমই ভাবছে। অধিকাংশের মিডিয়ার মোহ, দ্রুত প্রতিষ্ঠার মোহ আর বাহ্যিক চাকচিক্যকেই আরাধ্য ভাবছে। নাট্যকলার শিক্ষার্থী এবং দলীয় নাট্যকর্মীদের একটা সমন্বয় গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নেতৃত্বের মধ্যদিয়ে এলে সেটা হবে আমাদের সামগ্রিক থিয়েটার চর্চার একটি সম্ভাবনা। -গৌতম পা-ে
×