ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারে ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

মিয়ানমারে ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারে দুইদিনের সফরে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শ কমিশনের ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল দ্বিতীয় দিনের মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তি পরিদর্শন এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমার সরকার গঠিত কফি আনান কমিশনের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলে তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনেছেন মনযোগ সহকারে। ওসময় রোহিঙ্গারা স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি বলে প্রতিনিধি দলকে জানায়। দ্বিতীয় দিনের মতো রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে আনান কমিশনের তিন সদস্য মিয়ানমার নাগরিক উইন ম্রা, ওআই লিয়ন, ও লেবাননের নাগরিক ঘাসান সালামে সোমবাব সকাল সাড়ে ১০ টায় উখিয়ার কুতুপালং রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করেন। ওসময় রোহিঙ্গারা প্রতিনিধি দলের সামনে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবীতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে মানববন্ধন করেন। রোহিঙ্গারা আনান কমিশনের প্রতিনিধি দলের কাছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গাদের এসব দাবী আগ্রহ সহকারে শুনলেও কোন মন্তব্য করেননি। তবে তাদের উপর মিয়ানমারে সেনা বাহিনীর নির্যাতনের কাহিনী শুনে আশ্চর্য হয়ে পড়েন প্রতিনিধিদল। সোমবার দুপুর দুইটার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, তাদের অবস্থানসহ বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করা হয়। বৈঠক ও আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলটি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন অনুপ্রবেশকারি রোহিঙ্গাদের অবস্থা ও পরিস্থিতি জানতে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও বস্তিগুলো পরিদর্শন করেন রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শ কমিশনের ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা উখিয়ার কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শরণার্থী বস্তিগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। পরিদর্শনকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বাকী বিল্লাহ, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, ইউএনএইচসিআর ও আইওএম এর উর্ধতন কর্মকর্তাসহ আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। ৩ সদেস্যের প্রতিনিধি দলটি রবিবার প্রথমে উখিয়ার বালুখালী গহীন পাহাড়ী এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা শরণার্থী বস্তি এবং পরে টেকনাফের লেদা ও নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা বস্তিগুলো পরিদর্শন করেছেন। ওসময় দলটির সদস্যরা গত বছরের অক্টোবর মাসে রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার পর মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর নেন এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গারাও তাদের উপর সেনা বাহিনীর জুলুম-নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। রোহিঙ্গারা প্রতিনিধি দলের সম্মুখে দাবী জানায়, তাদের নাভীছেড়া দেশ মিয়ানমার থেকে তারা ইচ্ছে করে পালিয়ে আসেনি বাংলাদেশে। দেশটির সেনা সদস্যরা জোরপূর্বক কেড়ে নিয়েছে তাদের জমি-জমা। জালিয়ে দিয়েছে ঘরবাড়ি। হত্যা করেছে পুরুষদের। ধর্ষণ করেছে যুবতি ও কিশোরীদের। সন্ত্রাসীরা বিজিপি ক্যাম্পে হামলে পড়লে এ দায় নীরিহ রোহিঙ্গারা নেবে না। তাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে তারা কমিশনের প্রতিনিধিদলের সম্মুখে বিক্ষোভ করেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জনগণের কল্যাণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আউং সান সু চি গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেন। কফি আনান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মিয়ানমারের ছয় নাগরিক ও তিন বিদেশি বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত কমিশন এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সুপারিশ জমা দেবে। রাখাইন রাজ্যের সব নাগরিকের মানবিক ও উন্নয়ন, নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপাদানগুলোকে নিয়ে কমিশন সুপারিশ তৈরি ইত্যাদি নিয়ে কমিশন কাজ করছে। উল্লেখ্য গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারে রাখাইনে মংডুর কাউয়ারবিলে সীমান্ত রক্ষী পুলিশের (বিজিপি) তিসটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ৯বিজিপি সদস্য নিহত ও তাদের বন্দুক ও গোলাবারুদ লুঠে নেয় সন্ত্রাসীরা। এঘটনায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা জড়িত রয়েছে দাবী করে দেশটির সেনা সদস্যরা গণহত্যা, গণধর্ষণ, গুম, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে আগুন ও ভিটা-মাটি ছাড়া করে রোহিঙ্গাদের। ১২নবেম্বর থেকে ওই রোহিঙ্গারা দলে দলে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। বিজিবির নজরে পড়লে ওসব রোহিঙ্গাকে স্বদেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে। তারপরও কৌশলে এপর্যন্ত রাখাইন রাজ্য থেকে অন্তত ৬৬ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে প্রত্যাবাসনে ফাঁকি দিয়ে এদেশে রয়ে গেছে অন্তত ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। যারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে বসতগৃহ তৈরী করে ও ভাড়া বাসায় বসবাস করছে অবৈধ ভাবে। এদের একটি অংশ জড়িয়ে পড়েছে সন্ত্রাসী বিদ্রোহী গ্রুপে।
×