ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উগ্রবাদী হেফাজতী পাঠ্য বই পরিবর্তনসহ একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

উগ্রবাদী হেফাজতী পাঠ্য বই পরিবর্তনসহ একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রতিফলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিবর্তনকে আইয়ুব খান সরকারের ধ্যান ধারণার প্রতিফলন বলে অভিহিত করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা অবিলম্বে উগ্রবাদী হেফাজতী পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনসহ একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়ে বলেছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তাতে আমাদের কোমলমতি শিশুরা মৌলবাদী ধ্যান-ধারণায় গড়ে উঠবে। এটি বিগত আইয়ুব আমলে বাংলা বইপুস্তকে শ্মশানের স্থলে গোরস্তান এবং জলের স্থলে পানি প্রতিস্থাপনের মতো। সাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, গবেষকসহ বিশিষ্টজনরা। পাঠ্যপুস্তকের সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে রবিবার সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এক আলোচনা সভায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে এ আহ্বান জানিয়েছেন। ‘সঙ্কটের আবর্তে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা’ (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক)’ শীর্ষক এ আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায়, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টী উদ্দিন তারেক আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী রোকয়া কবির, অধ্যাপক আজিজুর রহমান প্রমুখ। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক মানবিক সমাজ গঠনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আলোচকরা বলেন, আজও এখানে পাঠ্যবইয়ের সাম্প্রদায়িকীকরণ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই সরকার বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে যে বই তুলে দিয়েছে তা আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। কিন্তু আমরা কি ধরনের শিক্ষা দিতে চাই, কি ধরনের মূল্যবোধ তৈরি করতে চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে যখন ভাবি তখন দেখি বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে সংযোজন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী, আমাদের আকাক্সক্ষার পরিপন্থী এমনকি সরকারের ঘোষিত নীতিরও পরিপন্থী। পাঠ্যপুস্তকে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তাতে আমাদের কোমলমতি শিশুরা মৌলবাদী ধ্যান-ধারণায় গড়ে উঠবে। পরিবর্তনের চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং অনাকাক্সিক্ষত বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নিয়ে সারাদেশে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। এসব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষাবিদদের মধ্যে। সমস্যা সমাধানে তারা চারটি দাবি তুলে ধরেছেন। সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ৭১ সালের স্বাধীনতা এলেও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাধীন হয়নি। আইয়ুব খানের আমলে যা ঘটেছিল এখনও তাই ঘটছে। সরকার সব ক্ষমতার উর্ধে। তারা চাইলেই সব ভুল পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু তারা তা না করে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলো ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আমলের একজন শিক্ষামন্ত্রী ছাড়া সবাই রাজনৈতিক বিবেচনায় পদটি দখল করেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন নয়ছয় মেনে নেয়া যায় না। এসবের দায়ভার শিক্ষামন্ত্রীকে নিতে হবে। অজয় রায় বলেন, পাঠ্যপুস্তকে কি থাকবে আর দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে সংবিধান অনুযায়ী সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। বর্তমানে পাঠ্যবই হেফাজতীকরণ হয়ে গেছে। এর পেছনে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতায় ভরা পাঠ্যবই ক্রমেই শিশুদের হাতে দেয়া যাবে না। তিনি সরকারের মধ্যে হেফাজতীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন। পংঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। ’৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের পেতাত্মারা আবার গজে উঠেছে। এরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, পাঠ্যপুস্তকের ভুলগুলো দৃঢভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি অতিমাত্রায় পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এবার পাঠ্যপুস্তক তৈরিতে রাতের অন্ধকারে এক সুনামি হয়ে গেছে। ভুলেভরা বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে ধরা হয়েছে। এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে। কেউ এর দায়ভার নিচ্ছে না। অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিতরা এ কারণে উল্লাস করে চলেছেন। সরকার তাদের ১৭ দফা ইচ্ছার বাস্তবায়ন করেছে। এটি সরকারের ভোটের ব্যাংক ভারি করার একটি কৌশল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
×