ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) কমলাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ডবল শিফট) কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া। ও পরীক্ষক ও মাস্টার ট্রেইনার, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর। মোবাইল -০১৭১১৯০১০৯৫ [email protected] পরীক্ষা হচ্ছে মূল্যায়নের একমাত্র পন্থা। আর এস এস সি পরীক্ষা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনের একটি মাইলফলক। যদিও দীর্ঘ দশ বৎসরের শিক্ষা জীবনের মধ্যে পি ই সি ও জে এস সি পরীক্ষা হয় তারপরও এস এস সি পরীক্ষার মূল্যায়নের মধ্য দিয়েই শুরু হয় জীবনের প্রথম অধ্যায় । তাই এই পরীক্ষা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনের প্রথম ধাপ এর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় উচ্চ শিক্ষার। জীবনের লক্ষ্য স্থির করার পথ পরীক্ষা। বর্তমানে পরীক্ষা পদ্ধতিতে গঠনমূলক অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের পরীক্ষা পদ্ধতি এখনকার পরীক্ষা পদ্ধতির মাঝে রয়েছে অনেক ভিন্নতা। তাই বর্তমানের শিক্ষার্থীরা অনেক সৌভাগবান যে, তারা সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিচ্ছে। অধিক মনোযোগী হয়ে পড়লে নিজের চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে ভাল ফলাফল করা খুব সহজ। এখন আগের তুলনায় পাসের হার বেশী আবার গৌরবান্ধিত জি পি ৫ পাওয়ার সংখ্যা ও বেশী। এটা অবশ্যই শিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আগের মত মুখস্ত বিদ্যার ছড়াছড়ি এখন আর নেয়। মেধা ও মনের বিকাশ সাধন করে, নিজের প্রতিভার পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার সময়। এখন নিজেদের বই মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লেই হয়, পরীক্ষার হলে চিন্তাভাবনা করে উত্তর বের করা যায়। এস এস সি পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এর মাঝেই সকল পরীক্ষার্থী তাদের প্রস্তুতি শেষ করে নিয়েছে। যেটুকু সময় আছে, তাতে নতুন করে কোন কিছু না পড়াই ভাল বরং পুরনো যা পরীক্ষার জন্য পড়া হয়েছে, তাই বারবার ঝালাই করা উচিত, রুটিন যেহেতু পেয়ে গেছে সবাই এবার তাই সুবিধামত ছক করে নিয়ে কেবল পড়া বিষয়গুলো চর্চা কর। ঘরে বসে মডেল টেষ্ট দাও, নমুনা উত্তর লেখার চেষ্টা কর। সঠিক নিয়মে উত্তর লিখতে সৃজনশীল ও বহু নির্বাচনী মিলে নব্বই শতাংশ বা তারও বেশি নম্বর তোলা সম্ভব যেহেতু প্রত্যেকটা প্রশ্ন পাঠ্য বই এর সাথে সম্পর্কিত। বইয়ের বিভিন্ন বিষয় থেকে সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপক এবং সংশ্লিষ্ট চারটি করে প্রশ্ন থাকে। উদ্দীপকটি ভালভাবে পড়ে প্রথমেই বুঝে নিতে হবে সেটি পাঠ্য বইয়ের কোন অধ্যায়ের সংঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সৃজনশীলের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রশ্নের উত্তরে সৃজনশীলের প্রতিটি জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার উপস্থিতি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের পরিধি কোনো বিষয় নয়, এখানে বাড়তি বা অপ্রাসঙ্গিক কথা কাম্য নয়। জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর একটি শব্দে দেওয়া যায়, তবে পূর্ণাঙ্গ বাক্য লিখলে ভালো। অনুধাবনে প্রথমে এক বাক্যে জ্ঞান মূলক অংশটি লিখে তা বিশ্লেষণ করবে, পরে পাঁচ সাত লাইনের এক প্যারায়। খেয়াল রাখতে হবে যা লিখছো তা যেন অবশ্যই প্রাসঙ্গিক হয়। প্রয়োগ অংশে এক প্যারায় সব কথা থাকতে পারে, তবে এতে জ্ঞান, অনুধাবন ও উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্য বইয়ের সমন্বয় ঘটাতে হবে। উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার, এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অনুধাবন ও প্রয়োজনীয অংশ লিখার পর একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। এ তো গেল প্রশ্নপত্র লেখার আগে করনীয় ভাবনা। এছাড়াও অনেক আনুষঙ্গিক প্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে। কিন্তু মনের ভেতর কোনো টেনশন রাখা যাবে না। প্রস্তুতির পাশা পাশি শারীরিক প্রস্তুতি জরুরী। ব্যাবহারিক সহ প্রায় দেড় মাস পরীক্ষা হবে। এই সময়ে শারীরিক দিক থেকে সুস্থ থাকটা জরুরী।পড়াশুনার পাশাপাশি খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম এগুলোও নিয়ম মতো করতে হবে। বেশী রাত জাগবে না অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শরীর সুস্থ না থাকলে ভালো প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষায় তা প্রয়োগের সুযোগ পাবে না। টানা পড়াশুনা অনেক সময় বিরক্তির জন্ম দেয়। তাই কিছু সময় বিনোদনের জন্য রাখা যেতে পারে। আশে পাশের কারো কাছ থেকে সহায়তা পাবে এমন আশা নিয়ে পরীক্ষার হলে না যাওয়াই ভাল। নিজের ওপর শতভাগ বিশ্বাস রাখো তুমি পারবে। এর আগে নির্বাচনি, প্রাক নির্বাচনি, অনেক পরীক্ষায় সফল হয়ে এসেছো। তাই এই চূডান্ত পরীক্ষায় তোমাকে পারতে হবে, তুমিই পারবে। পরীক্ষার কেন্দ্রে কী কী নেয়া যাবে বা কী কী করা যাবে না এসব নিয়ম লেখা আছে প্রবেশ পত্রের পেছনের অংশে। পরীক্ষা কেন্দ্রে যে উত্তরপত্র দেওয়া হয় তাতেও কিভাবে উত্তরপত্রে লিখতে হবে, অতিরিক্ত পাতা নিলে তা কোথায় উল্লেখ করতে হবে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত লেখা আছে। খাতায় মার্জিনের জন্য স্কেল ব্যবহার করবে। খাতা হাতে পাওয়ার পর সতর্কতার সঙ্গে নাম, রোল নম্বর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর যাচাই করে দেখতে হবে, ভুল হলে যত ভালো পরীক্ষাহোক ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। তাই প্রয়োজনে প্রথমে পেনসিল দিয়ে দাগিয়ে ঠিক হয়েছে কি না মিলিয়ে নিয়ে পরে বৃত্ত ভরাট করলে ভাল হয়। মনে রাখবে বিষয় কোড লিখবে প্রশ্ন পাওয়ার পর। বৃত্তের ওপর কোনো রকম কাটা ছেঁড়া বা ঘষামাজা করা যাবে না। সেট কোডে ভুল করা যাবে না। কোনো ভুল হলে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শককে জানাতে হবে। ও এম আর শিট পূরনের ক্ষেত্রে ভুল হলে অনেকে বকাঝকা খাওযার ভয়ে পরিদর্শককে বিষযটি জানায় না। এমনটি করলে বড় ধরনের জটিলতায় পড়তে হবে। যারা পরীক্ষা নিযন্ত্রক কিংবা পরীক্ষক, তাদের সহনশীল মনোভাব পরীক্ষার্থীর আস্থা বাড়ায়। এস এস সি পরীক্ষায় ইংরেজী ও বাংলা দুই মাধ্যমে প্রচলিত আছে। তাই পরীক্ষার ডিউটিরত শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের এই ব্যাপারে সু-দৃষ্টি দেয়া উচিত। “সকল প্রকার শিক্ষা - রুচি, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও মনোযোগের উপর নির্ভরশীল’” তাই প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর প্রতিটি প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরুর আগে তার নম্বর সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখতে হবে। প্রশ্নের নম্বর লেখার পর প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। প্রশ্নের একটি উত্তর লেখা শেষ হলে সমাপ্তি চিহ্ন (।) দিয়ে দুই ইঞ্চি ফাঁকা রেখে নিচ থেকে পরবর্তি উত্তর শুরু করতে হবে। উত্তর লেখার সময় ভুল করে পৃষ্ঠা ফাঁকা থাকলে তা লম্বা ভাবে কলম দিয়ে কেটে দিতে হবে। হাতের লেখা সুন্দর হতে হবে। সুন্দর না হলেও যেন পরিচ্ছন্ন হয়। লিখতে হবে দ্রত, হাতের লেখা যেন বাঁকা না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। লেখার সময় অযথা কাটা কাটি বা ঘষামাজা করা যাবেনা। কাটতে হলে একটানে কাটতে হবে। পরীক্ষা শেষের অন্তত দশ মিনিট আগে সব প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে হবে। এরপর রিভিশন দিতে হবে। রিভিশনের সময় খেযাল করতে হবে- (১) প্রশ্ন পত্রের নম্বরের সঙ্গে উত্তর পত্রের নম্বরের মিল আছে কি না। (২) প্রতিটি পাতায় মার্জিন দেওয়ার হয়েছে কি না। (৩) উত্তর পত্রের শিটে বৃত্ত ভরাট এবং অতিরিক্ত উত্তর পত্রের সংখ্যা লেখা হয়েছে কি না। (৪) উত্তর পত্রের অতিরিক্ত পাতা স্টেপল করা হয়েছে কি না। (৫) পরীক্ষার শেষ ঘন্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পত্র কক্ষ পরিদর্শককে বুঝিয়ে দিতে হবে। উত্তর পত্র জমা দেওয়ার পর প্রবেশ পত্র, কলম পেনসিল, জ্যামিতি বক্স ইত্যাদি গুছিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষার কক্ষ ত্যাগ করবে। সর্বোপরি এস এস সি পরীক্ষার সকল পরীক্ষার্থীদের প্রতি রইল শুভেচ্ছা, সবাই যেন তাদের সৃজনশীলতার পুরোটাই এই পরীক্ষায় ঢেলে দিয়ে নিজেদের মেধার বিকাশ ঘটায়।
×