ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিনাবিচারে এক যুগ

আটক দুই শিশুকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

আটক দুই শিশুকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খুনের মামলায় আটক রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের দুই শিশুকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আট ও নয় বছর বয়সী শিশু দুটিকে নিরাপত্তা দিতে পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি ও কামরাঙ্গীরচর থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে আটক থাকা ছাবেদ আলী ও সফিকুল নামে দুই বন্দীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের টিউশন ফি’র ওপর আরোপ করা সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট অবৈধ বলে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন সুপীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এ সময় পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে। রবিবার আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলো এ আদেশ প্রদান করেছেন। কামরাঙ্গীরচরের দুই শিশুকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী দুই শিশুকে রবিবার আদালতে হাজির করার পর বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে দুই শিশুর পক্ষে শুনানি করেন চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মোঃ আব্দুল হালিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। মামলা শুনানির শুরুতেই দুই শিশুকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘বাবুরা এদিকে এসো। তোমাদের কি আদালতে আসতে ভয় লাগে? ভয়ের কিছু নেই। কি নাম তোমাদের? দুজন তাদের নাম ও বয়স জানায়।’ তারা জানায়, তাদের একজনের বয়স ৮ ও অন্যজনের ৯ বছর। আদালত আরও বলেন, বাবাকে গিয়ে বলবে জজ সাহেব বলেছে স্কুলে যেতে বলেছে। আরও বড় হয়ে তারপর কাজ করবে’। আব্দুল হালিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত বলেছে, বয়স নির্ধারণ না করে দুই শিশুকে গ্রেফতার শিশু আইনের লঙ্ঘন। নিরাপত্তার পাশাপাশি দুই শিশুকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়েছে।’ গত বছরের ২৪ নবেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘লাশের পরিচয় মেলেনি, খুনী সন্দেহে ২ শিশু গ্রেফতার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা যুক্ত করে এই রিট আবেদন করে চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। একটি দৈনিকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছিল। ১০ দিন পর লাশটি নিখোঁজ এক শিশুর দাবি করে তার পরিবার খুনের মামলা করে। খুনী সন্দেহে সে সময় পুলিশ দুই শিশুকে গ্রেফতার করে। বিচারিক হাকিম জবানবন্দী নিয়ে তাদের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান। শিশু আইন ২০১৩-এর ৪৪/১ ধারা অনুযায়ী, নয় বছরের কম বয়সী কোন শিশুকে গ্রেফতার কিংবা আটক করা যায় না। মামলার এজাহারে শিশু দুটির বয়স বলা হয়েছে ১২ বছর। কিন্তু অভিভাবকরা বলছেন, তাদের বয়স নয় বছরের কম। এর পক্ষে আদালতে জন্মসনদ দাখিল করে এক শিশুর অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। ওই সনদে বলা হয়েছে ছেলেটির জন্ম তারিখ ২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি। এ নিয়ে আদালতে রিট আবেদন হলে প্রাথমিক শুরু করে আদালত গত বছর ২৯ নবেম্বর রুল জারি করে। দুই শিশুকে গ্রেফতার করা কেন শিশু আইনের ১৩, ১৪, ৪৪, ৪৫, ৪৭ ও ৫২ ধারার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। ওই দুই শিশুর পরিবারকে কেন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তাও জানতে চায় আদালত। পাশাপাশি দুই শিশুর বয়স নির্ণয় করা হয়েছে কিনা- সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয় পুলিশকে। আদালতের নির্দেশের পর পুলিশ ওই দুই শিশুর বয়স নির্ণয়ে ব্যবস্থা নেয়। গত ৪ জানুয়ারি লালবাগের ডিসি ও কামরাঙ্গীচরের ওসি আদালতে প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করে হাইকোর্ট গত ১৫ জানুয়ারি দুই শিশুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১ মার্চ রেখেছে আদালত। দুইজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ ॥ কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ‘বিনা বিচারে’ অন্তরীণ থাকা ছাবেদ আলী ও সফিকুল নামে দুই বন্দীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে (বিচারিক আদালত) দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রবিবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটির আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, প্রতিবেদনে আসামিরা মানসিক প্রতিবন্ধী হলে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন হাইকোর্ট। আর যদি প্রতিবন্ধী না হন তাহলে ছাবেদ আলীর মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে এবং সফিকুলের মামলাটি দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল ওই দু’জনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। প্রচারিত প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী কুমার দেবুল দে। পরে ৫ জানুয়ারি এক আদেশে তাদের হাইকোর্টে হাজির করতে নির্দেশ দেয়া হয়। শুনানি মুলতবি ॥ ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের টিউশন ফির ওপর আরোপ করা সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট অবৈধ বলে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এ সময় পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে। রবিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপীল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপীল করতে বলেছিলেন আপীল বিভাগ। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি না পাওয়ায় লিভ টু আপীল করতে এক সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আদালত এক সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।
×