ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পাঁচ তরুণ লেখক পেলেন কালি ও কলম পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

পাঁচ তরুণ লেখক পেলেন কালি ও কলম পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীনের হাত ধরেই নির্মিত হয় আগামীর পথ। এদেশের সাহিত্যের আগামীর পদচিহ্ন আঁকা তেমনই পাঁচ নবীন লেখককে দেয়া হলো তাঁদের সাফল্যের স্বীকৃতি। প্রদান করা হলো কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০১৬। সাহিত্যের পাঁচটি শাখায় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই তরুণ লেখকরা হলেন কবিতায় ‘ঢেউয়ের ভেতর দাবানল’ কাব্যগ্রন্থের জন্য নওশাদ জামিল; গল্প ও উপন্যাসে ‘ফুলবানু ও অন্যান্য’ গল্পগ্রন্থের জন্য রাফিক হারিরি; প্রবন্ধ, গবেষণা ও নাটকে ‘কুঠুরির স্বর’ গ্রন্থের জন্য তুষার কবির; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় ‘ভাটকবিতায় মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থের জন্য হাসান ইকবাল এবং শিশু-কিশোর সাহিত্যে ‘অদ্ভুতুড়ে বইঘর’ গ্রন্থের জন্য শরীফুল হাসান। সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলমের পক্ষ থেকে রবিবার লেখকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। পুরস্কারজয়ী প্রত্যেক লেখককে এক লাখ টাকা সম্মানির পাশাপাশি স্মারক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। রবিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য চিন্ময় গুহ এবং বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। সভাপত্বি করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং কালি ও কলমের প্রকাশক আবুল খায়ের। পুরস্কারজয়ী লেখকদের শংসা বচন পাঠ করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও অধ্যাপক মাহবুব সাদিক। উপস্থিত ছিলেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে নওশাদ জামিল বলেন, ১৫/১৬ বছর ধরে সাহিত্যচর্চা করলেও কখনও পুরস্কারের আশায় কিছু লিখিনি। তবে ভাল লিখে পুরস্কার প্রত্যাশা করি। আজকের এই পুরস্কারও আমার সেই প্রত্যাশারই পূর্ণতা। আমার যে বইটি পুরস্কার পেল, এই বইয়ের সব কবিতা চতুর্দশপদী। কলেজ জীবনে মাইকেল মধুসূদন দত্তের সনেট পড়ে প্রাণিত হয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম। আমি সবসময়ই স্মরণ করি, কবিতা আমার উজানে চলার নিত্যসঙ্গী, ভালবাসার তরী। স্রোতের বিপরীতে যাঁরা সাঁতার কাটেন, চলতে ভালবাসেন, তারা জানেন উজানে চলতে গেলে শিরা-উপশিরাসহ সমস্ত দেহমনে প্রচ- শক্তি দরকার। একবার চলা শুরু করলে তারা সবদিকেই সাঁতরাতে পারেন। কিন্তু যিনি গা ভাসিয়ে থাকতে চান স্রোতের সাম্পানে, তাদের সেই শক্তিটা নেই। আমি মনে করি, একজন প্রকৃত কবিকে উজানে চলার জন্য সাধনা করতে হয়। কবিতার জন্য এই সাধনা বড় আনন্দের, বেদনারও। কবিতাই আমার আনন্দ-বেদনার নিত্যসঙ্গী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, চিরকালই তরুণরা প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ভূমিকা রেখেছে সংস্কৃতি বিকাশে। পুরস্কারপ্রাপ্ত এই পাঁচ তরুণও সেই দলেরই অগ্রপথিক। তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত শতকের ষাটের দশকে আমরা একঝাঁক তরুণ লেখক পেয়েছিলাম। তবে মুক্তিযুদ্ধোত্তর সদ্য স্বাধীন দেশে তরুণ লেখকের একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তরুণ সাহিত্যিকরা বড় ক্লান্ত ছিল। ছিল কত অনিশ্চয়তা। আমরা খুঁজে পাইনি সেই তরুণ সাহিত্যিক, লেখকদের। একদিন বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পটিও বন্ধ হয়ে গেল। সেটি চালু থাকলেও বেশ ক’জন তরুণ উঠে আসতে পারত। পুরস্কারজয়ী লেখকদের উদ্দেশে বলেন, এই তরুণ লেখকরা লেখনীর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করবেন। আমরা সামনের পানে তাকিয়ে রইলাম। তরুণদের সাহিত্যচর্চার গতিধারা উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চিন্ময় গুহ বলেন, সাহিত্যের রূপরেখাকে বারবার তছনছ করেছে তরুণ কবি ও লেখকরা। সব সময় প্রশ্ন তুলেছেন স্রোতের বিপরীতে। একইভাবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখকরাও সব সময় প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গেছেন। এ কারণেই সাহিত্য মানেই প্রতিরোধ। এ প্রতিরোধ হচ্ছে আশ্চর্য রকম স্বপ্নীল। তাই সাহিত্যে কখনও কোলাবরেটরদের কোন জায়গা নেই। লেখা মানে হচ্ছে জীবন নাড়ির স্বপ্ন ছোঁয়া। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, এই পুরস্কারটি কখনও মুখচেনা লেখক বিবেচনায় দেয়া হয়নি। তাই এই পুরস্কার নিয়ে কখনও পক্ষপাতিত্ব হয়নি। অনুষ্ঠান শেষে শুভাশীষ সিনহা-রচিত নাট্য দ্বিখ-িতার পাঠাভিনয় করেন ফেরদৌসী মজুমদার ও ত্রপা মজুমদার। বাংলাদেশে নবীন কবি-লেখকদের সাহিত্যচর্চা ও সাধনাকে গতিময় এবং সৃজনধারাকে সঞ্জীবিত করার লক্ষ্যে এইচএসবিসির সহায়তায় ২০০৮ সালে ‘কালি ও কলম তরুণ কবি লেখক পুরস্কার’ প্রবর্তন করে শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক পত্রিকা কালি ও কলম। ২০১৪ সাল থেকে ‘কালি ও কলম’ এককভাবে প্রদান করছে পুরস্কারটি। রবিবারের আয়োজনটি ছিল পুরস্কার প্রদানের নবম আসর। মোশতাক আহমেদের চার সংকলনগ্রন্থের প্রকাশনা ॥ রবিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রহমান স্মৃতি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো কথাশিল্পী মোশতাক আহমেদের লেখা চারটি পৃথক সঙ্কলনের প্রকাশনা উৎসব। চারটি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত একটি করে মোট চারটি সঙ্কলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এ উৎসবে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রকাশিত চারটি সঙ্কলন গ্রন্থ ও লেখকের সৃজনশীল কর্মের ওপর আলোচনা করে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘সেরা পাঁচ সায়েন্স ফিকশন’ সঙ্কলনগ্রন্থ। এতে সূচিবদ্ধ হওয়া সায়েন্স ফিকশনের মধ্যে রয়েছে-ক্রিকি, পাইথিন, নিহির ভালবাসা, অণুমানব ও প্রজেক্ট হাইপার। অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হওয়া সঙ্কলনের নাম ‘সেরা পাঁচ উপন্যাস’। সূচিবদ্ধ উপন্যাসগুলো হলোÑ‘মায়াবী জোছনার বসন্তে’, ‘মন ভাঙা পরি’, ‘জকি’, ‘লাল ডায়েরি’ ও ‘নক্ষত্রের রাজারবাগ’। অন্বেষা প্রকাশন প্রকাশ করেছে ‘সেরা পাঁচ ভৌতিক উপন্যাস’। উপন্যাসগুলো হলোÑ‘রক্ততৃষ্ণা’, ‘প্রেতাত্মা’, ‘রক্ত পিপাসা’, ‘ইলু পিশাচ’ ও ‘অভিশপ্ত আত্মা’। পাঞ্জরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড প্রকাশ করেছে সেরা পাঁচ কিশোর উপন্যাসÑবৃষ্টি ভেজা জোছনা, ডায়নোসরের দিন, মুক্তিযোদ্ধা রতন, লাল শৈবাল ও ববির ভ্রমণ। মোশতাক আহমেদের এই চারটি সঙ্কলনগ্রন্থ আসন্ন অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম দিন থেকেই স্ব স্ব প্রকাশনা সংস্থার প্যাভিলিয়ন ও স্টলে পাওয়া যাবে। আড়ম্বরপূর্ণ প্রকাশনা উৎসবে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, লেখক মোশতাক আহমেদ এমন একটি পেশায় যুক্ত আছে যেখানে লেখালেখি করাটা একটা দুর্লভ বিষয়ক। তাকে সব সময় মারধর, জেল-আদালত নিয়ে থাকতে হয়। তার মধ্যে লেখক যে সময় বের করে সৃজনশীল লেখালেখি করছেন এটা কম কথা নয়। এরই মধ্যে লেখক ৭৪টি বই লিখে ফেলেছেন। একজন সুশৃঙ্খল মানুষের ক্ষেত্রে এটাই সম্ভব। বিশেষ করে তার লেখা সায়েন্স ফিকশন অসাধারণ। তিনি যেমন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিজেকে সমর্পিত করেছেন। তেমনি মানুষের মনের খোড়াক যোগাতে হাতে নিয়েছে কলম। আর সেই কলম থেকে বের হচ্ছে একেক রকমের একেক লেখা। গল্প বা উপন্যাসের কাহিনী অভিন্ন। ভাবতেই অবাক লাগে দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে মোশতাক আহমেদ সর্বক্ষণ গল্প বা উপন্যাসের প্লট মাথায় নিয়ে বেড়ান এবং নিয়ম করে লিখে তার প্রকাশ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে লেখালেখির ক্ষেত্রে তার যে অবদান, তাতে করে দেশের সৃজনশীল সাহিত্যেও কিছুটা হলেও রেখাপাত রেখে যেতে সক্ষম হবে। তার দেয়ার অনেক কিছু রয়েছে। সৃজনশীল সাহিত্যের অনুবাদ সম্পর্কে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা অনেক উন্নত হয়েছে। তবে ভাল অনুবাদের অভাব রয়েছে। তথাকথিত অনুবাদক হলে চলবে না। পেশাদার অনুবাদক দিয়ে সৃজনশীল লেখাগুলো অনুবাদ করা যেতে পারলে, বিশ্ব দরবারে এদেশের সাহিত্য মজবুত থেকে মজবুতশালী হয়ে উঠবে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, লেখক হতে হলে সবার আগে ভাল মানুষ হতে হবে। সৎ হতে হবে। পাঠকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। সৃজনশীল সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে এ গুণ থাকা খুবই জরুরী। মোশতাক আহমেদ তেমনি এক একজন ভাল মনের মানুষ। আচার-আচরণ ও তার লেখাগুলো পড়ে তাই মনে হয়। মোশতাক আহমেদ এদেশের সৃজনশীল লেখালেখি অনেক দূর যাবেন কায়মনে আশা করি। অনুভূতি প্রকাশ করে মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘মনের আনন্দ খোড়াক যোগাতে লেখালেখি করে থাকেন। তবে এই লেখা পড়ে কারও মনে দাগ কাটে তাহলে তার সকল চেষ্টা সফল হবে এবং এর চেয়ে আনন্দ আর কিছুই হতে পারে না। মঞ্চস্থ বেঙ্গল থিয়েটারের ‘জলপুত্র’ ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে রবিবার বেঙ্গল থিয়েটারের প্রথম নাটক ‘জলপুত্র’র উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। হরিশংকর জলদাসের জলপুত্র উপন্যাস থেকে প্রযোজনাটির নাট্যরূপ দিয়েছেন রুমা মোদক। নির্দেশনা দিয়েছেন হাসান রেজাউল। একজন জেলে নারীর সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি জেলেপুত্রদের অধিকার সচেতন হয়ে উঠার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ নাটকে। নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক হাসান রেজাউল বলেন, জেলেরা প্রান্তজন। তাদের নিয়ে আমরা কাজ করতে পারছি এটাই আনন্দের। প্রান্তজনদের পাশে সব সময় থাকতে চাই। এই নাটকটিতে একজন নারীর সংগ্রামী জীবন কথনের পাশাপাশি শোষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য জলপুত্রদের প্রতিবাদী হয়ে উঠার চিত্র তুলে ধরেছি। নতুন দল হিসেবে নবীন নাট্যকর্মীরা চেষ্টা করেছি নতুন কিছু করার।
×