ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে অবকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ

বেনাপোল ভোমরা শেওলা রামগড় স্থলবন্দরে শীঘ্র সংস্কার শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

বেনাপোল ভোমরা শেওলা রামগড় স্থলবন্দরে শীঘ্র সংস্কার শুরু হচ্ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ দেশের চারটি স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে সিলেটের শেওলা, সাতক্ষীরার ভোমরা, যশোরের বেনাপোল ও খাগড়াছড়ির রামগড়। বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় এসব স্থলবন্দরের উন্নয়নে মোট ব্যয় হবে ৫৯৬ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ হিসেবে প্রায় ৪৩৩ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। অবশিষ্ট ১৬৩ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নের তাগিদ অনেক দিন ধরেই দিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের রফতানি আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু একই সঙ্গে বাড়ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও। বিদ্যমান স্থলবন্দরগুলোর সীমিত সক্ষমতা এর অন্যতম কারণ। জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের চার হাজার ৯৫ কিলোমিটার, মিয়ানমারের সঙ্গে ২৫৬ কিলোমিটার এবং উপকূলীয় এলাকায় ৫৮০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমারেখা রয়েছে। এসব সীমারেখার মধ্যে অনেক স্থলবন্দর রয়েছে, যেখান দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত অনেক পর্যটক স্থলবন্দর দিয়ে চলাচল করে। তার মধ্যে শেওলা ভোমরা, রামগড় ও বেনাপোল অন্যতম। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট ঃ শেওলা, ভোমরা, রামগড় স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। একনেকের অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে শেওলা স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ভারতের অংশে এর নাম সুতারকান্দি স্থলবন্দর। বন্দরটির মাধ্যমে ভারতের আসামের সঙ্গে বাণিজ্য স্থাপন সম্ভব। অন্যদিকে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে সাতক্ষীরা হয়ে ভারতের কলকাতার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়। এ বন্দরের উন্মুক্ত ইয়ার্ডের (ওপেন ইয়ার্ড) উন্নয়নে কাজ করা হবে প্রকল্পের আওতায়। এতে আরও বলা হয়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে ৪০০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ির রামগড় বন্দর উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে। এ বন্দরটির উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরটি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী করার কথাও ভাবছে সরকার। প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এশিয়ার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পণ্য ও সেবার বহুমুখী সীমান্ত বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রবাহ ও মানবিক সংযোগের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার সুযোগ পায়। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেলেও ভারতের সঙ্গে বিরাট অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ভারতের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভারতের নিকট গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে। ট্রানজিট ফি এবং পরিবহন চার্জ আদায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশও ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারে। সংযোগ উন্নয়নের মাধ্যমে উভয় দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে পারে। উল্লেখ্য, গত অর্থবছর শুধু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৫০ কোটি ডলার। জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৪২.৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১০ হাজার ৬২০ মিটার সীমানা উন্নয়ন, ৬২ হাজার ২১৫ বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণ, ৪০ হাজার বর্গমিটার রাস্তা ও ইয়ার্ড নির্মাণ, ৯ হাজার ৭০০ বর্গমিটার ট্রান্সশিপমেন্ট শেড নির্মাণ, তিন হাজার ৩২৪ বর্গমিটার যাত্রী শেড নির্মাণসহ বেশ কিছু কাজ করা হবে। উল্লেখ্য, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে বেনাপোল স্থলবন্দর উন্নয়নে সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রকল্প নামে বেনাপোল ও বুড়িমারী বন্দর উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্পও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
×