ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে উদ্ধত মন্তব্য

ইউনূস সেন্টারের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

ইউনূস সেন্টারের  শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার। শনিবার ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই দীর্ঘ প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে ‘বেশ কিছু ভুল ও অসত্য মন্তব্য’ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, এসব অভিযোগের অনেকই এর আগেও একাধিকবার করা হয়েছে এবং প্রতিবারই ইউনূস সেন্টার এর জবাব দিয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি অভিযোগের জবাব আবারও তুলে ধরছি। ২০১১ সাল থেকেই এই অভিযোগগুলোর অধিকাংশই বার বার তোলা হচ্ছে এবং প্রতিবারই এসব অভিযোগের পূর্ণ জবাব আমরা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আটকাতে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ইউনূসের যোগসাজশকে দায়ী করেন। এর প্রতিবাদে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনূস পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহারে প্রভাব খাটিয়েছিলেনÑ এই অভিযোগ অধ্যাপক ইউনূস অতীতেও সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবার এই কাহিনীটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলেন। এবারে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন প্রত্যাহার করতে অধ্যাপক ইউনূস একটি পত্রিকার সম্পাদকসহ বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। কাহিনীটি যেভাবেই বলা হোক না কেন, অধ্যাপক ইউনূস এই কাহিনী বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি (ইউনূস) অতীতেও এটা বার বার বলেছেন এবং এবারও বলছেন যে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি তার সর্বশক্তি নিয়োগ করতে প্রস্তুত। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে আদালতের রায়ে অপসারণ এবং ওই পদে থাকা নিয়ে ইউনূসের বয়স নিয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত শাসনামলে ইউনূসের বয়স ৬০ বছর পার হলেও সরকার কখনই বয়সের প্রসঙ্গটি তোলেনি। গ্রামীণ ব্যাংকের আইনেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অবসরের বয়সসীমা সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের প্রতিবেদনে অবসরের বয়সসীমা নিয়ে কখনও কোন প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু ২০১১ সালে প্রসঙ্গটি তোলা হয়। সংসদের প্রশ্নোত্তরে গ্রামীণফোন নিয়ে কথা বলার সময় নোবেলজয়ী ইউনূসকে ‘চিটিংবাজ’ আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোনের যে শেয়ার বাংলাদেশের থাকার কথা, তার অধিকাংশ তিনি (ইউনূস) বিদেশে দিয়ে ওটাকে সম্পূর্ণ নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি করে নিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংকে গ্রামীণফোনের কোন লভ্যাংশ যায়নি। এটা চিটিংবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। রীতিমতো ধোঁকা দেয়া হয়েছে। এখন ওটা উনার নিজস্ব সম্পত্তি। এখন এটার ৩০ ভাগ মালিকানা নিজের হাতে রেখে বাকিটা উনি বেঁচে দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে ইউনূস সেন্টার বলেছে, সরকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এজেন্সিতে রক্ষিত এ সংক্রান্ত সব দলিল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি বক্তব্যই ভুল। গ্রামীণফোনের জন্ম হয়েছিল একটি দীর্ঘ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এ সংক্রান্ত কোন দলিলই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করবে না। ইউনূস সেন্টার বলছে, গ্রামীণফোন প্রতিষ্ঠার কোন পর্যায়েই এ কোম্পানিতে ইউনূসের কোন শেয়ার ছিল না এবং এখনও শেয়ার নেই। একইভাবে গ্রামীণফোনে গ্রামীণ ব্যাংকেরও কোন শেয়ার ছিল না, তাই শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার কোন প্রশ্ন আসে না। কেবল গ্রামীণ টেলিকম সব পার্টনার ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী জনগণের কাছে ছাড়ার জন্য কিছু শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে। ইউনূস মামলা করে তার স্থায়ী আমানতের কর দিচ্ছেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা সেদিন সংসদে বলেন, তার টাকা আছে প্রচুর। ট্যাক্স দেন না। মামলা করে রেখে দিয়েছেন ট্যাক্স না দিয়ে ভালই চলছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইউনূস সেন্টার বলেছে, কর এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রফেসর ইউনূস বরাবরই তার কর পুরোপুরি ও সময় মতো পরিশোধ করে আসছেন। তিনি প্রতিবছর বেশ বড় অংকের টাকা কর দিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে জাতিকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। প্রফেসর ইউনূস কখনই কোন অজুহাতে তার উপর ধার্য ন্যায্য কর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তার কর সংক্রান্ত ফাইলগুলোতে ভুল খুঁজে বের করতে সেগুলো বার বার তদন্ত করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই ফাইলগুলো নিষ্কণ্টক পাওয়া গেছে। পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, তার ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা দিতে দেশের সব ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ব্যাংকগুলোর তথ্য থেকে নতুন কিছু বেরিয়ে আসেনি। বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনূসের আয়ের উৎস ৩টি। ১) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতার জন্য সম্মানী। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত বক্তাদের একজন। তার আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস এটি। ২) পৃথিবীর ২৫টির বেশি ভাষায় অনূদিত তার বইগুলো থেকে প্রাপ্ত রয়্যালটি। তার বইগুলো নিউইয়র্ক টাইমসের বিচারে পৃথিবীর সর্বাধিক বিক্রীত বইগুলোর তালিকাভুক্ত। ৩) ১ম ও ২য় দ্বিতীয় উৎস থেকে অর্জিত অর্থ মেয়াদী আমানতে জমা রাখার ফলে তার থেকে প্রাপ্ত আয়। ১ম ও ২য় সূত্র থেকে অর্জিত প্রতিটি প্রাপ্তির উৎস তথ্য কর্তৃপক্ষের নিকট নিয়মিতভাবে জমা দেয়া হয়ে এসেছে। ফলে তার আয়ের সূত্র সম্পর্কে না জানার কোনই কারণ নেই। তিনি বক্তৃতা ও বইয়ের রয়্যালটি থেকে প্রাপ্ত আয় আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়ে থাকেন। ড. ইউনূস এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কর্তৃপক্ষকে দিয়ে থাকেন। ফলে তার আয়ের উৎস সম্পর্কে সরকার কিছুই জানে না- এ কথা একেবারেই সঠিক নয়। এটা বিশ্বাস করা খুবই কষ্টকর যে, সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে যথাযথ তথ্য দেয়নি। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এ নিয়ে বার বার উদ্বেগ প্রকাশের পরও তারা যদি এ সংক্রান্ত যথাযথ তথ্য প্রদান না করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেন, তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এনবিআরের সঙ্গে ইউনূসের মামলা লড়াই প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, এটা সত্য যে, কর অফিস কর্তৃক কিছু কর দাবি সম্পর্কে তিনি আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। প্রফেসর ইউনূসকে আইনের আশ্রয় নিতে হয়েছে কেননা, কর আইনের একটি দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত ব্যাখ্যা থেকে কর কর্তৃপক্ষের আকস্মিকভাবে সরে আসার কারণে তার ইতোপূর্বে জমাকৃত সব ট্যাক্স রিটার্নের উপর এর প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে তাকে আকস্মিকভাবে একটি বড় অংকের বকেয়া করের মুখোমুখি হতে হয়। প্রফেসর ইউনূস এ বিষয়ে সুবিচারের জন্য আদালতে গেছেন।
×